পুণ্যস্নানে শেষ হবে সুন্দরবনের রাসমেলা

আগের সংবাদ

মিলছে আইএমএফের ঋণ > বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো : রাহুল আনন্দ

পরের সংবাদ

এমএ পাস ফার্স্ট ক্লাস

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আগামীকাল পাকা কথা হবে। বিশেষ কোনো ঝামেলা না হলে কালই বিয়ের দিন-তারিখ পড়বে।
মিনুর মেয়ের বিয়ের কথা বলছি। বিয়ের কথাবার্তা চলছে ওদের নিচতলার ফ্ল্যাটের মিতুর ছেলের সঙ্গে। মিনু আর মিতু একই স্কুলে, একই ক্লাসে পড়ে। ক্লাস থ্রি। ওরা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মিনুর মেয়েকে মিতুর পছন্দ হয়েছে। গোলগাল চেহারা। মাথায় ঝাঁকড়া সোনালি চুল। সাদা মণির চোখ। লাল টকটকে গাল। মিতুর ছেলেকেও মিনুর পছন্দ। বেশ স্মার্ট দেখতে।
বেলা এগারোটার মধ্যেই মিতু আর ওর দুই খালাতো বোন এসে গেল। মিনুও প্রস্তুত ছিল। মাকে বলে নাস্তার ব্যবস্থা করে রেখেছে। বিয়েশাদীর ব্যাপার। খাওয়া-দাওয়া এদিক-সেদিক হলে বদনাম হবে। মিনু ওর দুই ফুপাতো বোনকে খবর দিয়ে এনে রেখেছে। একা একা তো পাত্রপক্ষের সঙ্গে কথা বলা যায় না। শেষে কী না কী প্যাঁচে ফেলে দেয়। মিতু আবার খুব প্যাঁচ দিয়ে কথা বলতে পারে।
চা-নাস্তা শেষ হলে কথা বলার পালা। মিতু বলল : মিনু, তুমি আমার ভালো বন্ধু। তোমার মেয়েকে আমার খুব পছন্দ। তোমার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হলে আমি খুবই খুশি হব।
মিনু বলল : আমিও চাই তোমার ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হোক।
: তাহলে দেয়া-নেয়ার ব্যাপারটা বলে নেয়া যাক।
: দেয়া-নেয়া মানে?
: মানে আমার ছেলেকে তোমরা কী দেবে?
: ক্লিয়ার করে বলো।
: এই একটা গাড়ি, একটা বাড়ি, নগদ-টাকা-পয়সা…।
: তুমি দেখি যৌতুকলোভী মানুষ। রীতিমতো যৌতুকের ফর্দ খুলে বসছো। আমার মেয়েকে কি আমি লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করিনি? মেয়ে আমার এমএ পাস ফার্স্ট ক্লাস। দেখতে সুন্দর। কথাবার্তা, কাজেকর্মে ভালো। গান জানে। আবৃত্তি জানে। আমি কেন যৌতুক দিয়ে মেয়ে বিয়ে দেব?
মিনুর ফুপাতো বোন টুম্পা ওকে সাপোর্ট দিয়ে বলল : মিনু ঠিক বলেছে। আমরা এসব দিয়ে মেয়ে বিয়ে দেব না। মেয়ে আমাদের এমএ পাস ফার্স্ট ক্লাস।
মিতুর মুখ একটু শুকিয়ে গেল। কী বলবে বুঝতে পারছিল না। মিতুর খালাতো বোন ঝুম্পা বলল : তোমাদের মেয়ে যে ভালো, এমএ পাস ফার্স্ট ক্লাস তা আমরা জানি। আসলে মানসম্মানের একটা বিষয় তো আছে। লোকে যখন বলবে, শ্বশুরবাড়ি থেকে ছেলেকে কী দিল তখন…।
টুম্পা বলল : যৌতুক কোনো মানসম্মানের বিষয় হতে পারে না। আমরা যৌতুক দিয়ে মেয়ে বিয়ে দেব না এটা আমাদের সাফ কথা।
পাত্রপক্ষ একটু দমে গেল। তবে এই পাত্রী তারা হাতছাড়া করতে চায় না। মিতু বলল : ঠিক আছে, যৌতুক লাগবে না। মেয়ে ঘরে ঠিকমতো কাজটাজ করলেই আমরা খুশি থাকব।
শুনে মিনু ঝাঁ করে উঠল : ঘরে থেকে কাজটাজ করবে মানে? আমার মেয়ে এমএ পাস ফার্স্ট ক্লাস। আমার মেয়ে চাকরি করবে। আমাদের ক্লাস টিচার বলেছেন, মেয়েদের স্বাবলম্বী হয়ে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে।
মিতুর আরেক খালাতো বোন রুনু বলল : তাই বলে ঘরের কাজ করবে না?
মিনুর আরেক ফুপাতো বোন ঝুনু বলল : অবশ্যই ঘরের কাজ করবে। চাকরি-বাকরির পর প্রয়োজনমতো ঘরের কাজ করবে। ছেলেমেয়ে উভয়কেই সাধ্যমতো ঘরের কাজ করতে হবে। আমাদের বাবা-মাকে তো দেখি। বাবাও মাকে অনেক কাজে-কর্মে সাহায্য করে। পুরুষরা শুধুই বাইরের কাজ করবে, আর মেয়েরা ঘরের কাজ করবে এটা ভুল ধারণা।
মিতু আর ওর সঙ্গীরা কী বলবে বুঝতে পারছে না। কেমন উশখুশ করছে। মিনু বলল : সেদিন আমাদের ক্লাস টিচার কী বললেন শোনো নাই? উন্নত দেশে নারী-পুরুষ সবাই সমানভাবে সব কাজ করে। কাউকে ছোট করে দেখা হয় না। শিক্ষা, গবেষণা, চাকরি, খেলাধুলা সবকিছুতেই নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। তাই তারা ক্রমাগত উন্নতি করে যাচ্ছে। আর যেসব দেশ নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে।
মিনু ওর ভুল বুঝতে পারল। বলল : তোমার সঙ্গে আমি একমত। তোমার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হবে। আগামী ১৫ তারিখে বিয়ের দিনটা করলেই ভালো হয়। সেদিন আমাদের স্কুল বন্ধ আছে।
মিতু বলল : তাই হবে।
বিয়ের দিন-তারিখ ফেলে ওরা পাশে তাকাতেই দেখে অদূরে ডাইনিং টেবিলের দুটি চেয়ারে মিনুর বাবা-মা বসে ওদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের মুখে মিটিমিটি হাসি। মিনুর মা বললেন : এসো তোমরা। এখন খাওয়া-দাওয়া হবে।
খাওয়া-দাওয়া! ওরা তো হরেক রকম খাবার দিয়ে নাস্তা করল। মিনুর মা বললেন : পোলাও, রোস্ট, গরুর মাংস ভুনা, পায়েস ইত্যাদি করা হয়েছে। বিয়ে-শাদীর ব্যাপার। আয়োজনের ঘাটতি রাখা ঠিক না।
মা যে এতসব করেছেন মিনুও তা জানতো না।
খেতে বসে অনেক গল্প হলো। হাসাহাসি হলো। মিনুর বাবা মিতুকে বলল-মা, তোমার ছেলে কী করে?
মিতু বলল : মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।
: ওফ! খুবই যোগ্য ছেলে। আর মিনুর মেয়ে এমএ পাস ফার্স্ট ক্লাস। সোনায় সোহাগা হবে। আচ্ছা, খাবারগুলো কেমন হয়েছে? পোলাও, রোস্ট, মাংস ভুনা, ঐ বেগুনভাজিটা?
মিতু বলল : আন্টির রান্না তো সব সময়ই ভালো হয়।
মিনুর বাবা হাসলেন। বললেন : এসব আমি রান্না করেছি।
সবাই একযোগে তাকালো মিনুর বাবার মুখে। সবাই একযোগে বলে উঠল : আপনি!
: হ্যাঁ আমি। এমএ পাস ফার্স্ট ক্লাস- সেই নাতনির নানা আমি। ছুটির দিনে রান্নাবান্না আমিই করি। আই অ্যাম ওয়ান অব দ্য বেস্ট কুকারস। কুকিং ইজ অলসো মাই হবি।
সবাই উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়