রাজশাহী শহর প্রতিনিধি : রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক ফয়সাল তারেক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি মঞ্জুর রহমান খান উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) পদে ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হোসেন উপসচিব (ক্রীড়া অফিসার) হিসেবে কর্মরত আছেন। গত বছর ১৮ অক্টোবর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বাদী হয়ে রাজশাহী মেট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আলোচিত এ দুই কর্মকর্তাকে মামলায় আসামি করা হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি গ্রহণ করে বিচারক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস গত বছরের ৩ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রাজশাহী অঞ্চলের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্ত করেন রাজশাহী পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। গত ১৭ অক্টোবর পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পুলিশের এ প্রতিবেদনে আসামি মঞ্জুর রহমান খান ও ওয়ালিদ হোসেনকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়নি। প্রতিবেদনে ঘটনাকে আড়াল করার অভিযোগে বাদী আদালতে নারাজি দাখিল করেন। বাদীর আইনজীবী পুলিশি তদন্তের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়ে অভিযোগটি সরাসরি আমলে নেয়ার আবেদন করেন। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে এবং বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে দুজনের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ঠিকানায় এ সমন পাঠানো হয়।
এদিকে সমন পেয়েও গতকাল সোমবার মামলার নির্ধারিত দিনে অভিযুক্ত দুজন আদালতে হাজির হননি। শুনানি শেষে বিচারক ফয়সাল তারেক তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। আরএমপির রাজপাড়া থানা পুলিশকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘটনার সময় মামলার বাদী অধ্যাপক মোয়াজ্জেম প্রেষণে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। এজাহারে বলা হয়, তিনি ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বোর্ডের হিসাব বিভাগের উপপরিচালক অধ্যাপক বাদশা হোসেনের সঙ্গে নিজ দপ্তরে বৈঠক করছিলেন। এ সময় বোর্ডের উপসচিব ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র সেন জোর করে কক্ষে প্রবেশ করেন। ওয়ালিদ হোসেন মারমুখী হয়ে সচিবকে চড় মারতে উদ্যত হন। কিছুক্ষণ পরেই কক্ষে প্রবেশ করেন উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মঞ্জুর রহমান খান। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে সচিবের কক্ষে তাণ্ডব চালান।
পরিস্থিতি দেখে দায়িত্বরত আনসার সদস্য তাদের দরজা আটকে দেন। ওয়ালিদ হোসেন ও মঞ্জুর রহমান খান সচিবের কক্ষের ভেতরে কিছু সময় ত্রাস সৃষ্টি করেন এবং সচিবকে গালাগাল দিতে থাকেন। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন তারা। সচিবের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। পুরো ঘটনাটি শিক্ষা বোর্ডের সিসি টিভিতে রেকর্ড হয়। এ ঘটনার তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তে বোর্ডের দুই কর্মকর্তাসহ আরো কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
বাদীর আইনজীবী একরামুল হক জানান, দুই আসামি যেদিন জামিনের জন্য আদালতে উপস্থিত হবেন, সেদিনই বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতের কাছে আবেদনও করা হবে।