প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ প্রতিবেদক : মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর মানুষের মধ্যে বেড়েছে মধু ব্যবহারের পরিমাণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে মধু উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রিও। বর্তমানে দেশে মধু ও এর উপজাত পণ্য মিলিয়ে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার বাজার আছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জনা গেছে- গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট উৎপাদিত মধুর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৫৫ টন। এর আগের অর্থবছরে মোট মধু উৎপাদিত হয়েছিল ৪ হাজার ৬২২ টন। অর্থাৎ এক বছরে মধু উৎপাদন বেড়েছে ১৩০ গুণ।
বাংলাদেশ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে- দেশে মূলত প্রাকৃতিক, চাষ ও আমদানি- এই ৩ উৎস থেকে মধু পাওয়া যায়। তবে মোট উৎপাদিত মধুর ৯৫ ভাগই আসে চাষের মাধ্যমে। দেশে প্রায় ৮ হাজার মৌচাষি আছেন। তারা ৭০ হাজার মৌমাছির বাক্সে মধু চাষ করেন। চাষের মধু ছাড়াও বসতবাড়ির আশপাশ ও বনাঞ্চলে মৌমাছির চাক থেকে প্রাকৃতিক মধু পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক মধুর বড় সংগ্রহ আসে সুন্দরবন অঞ্চল থেকে। বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবন থেকে গত অর্থবছরে প্রায় ৩০০ টন মধু (৩ হাজার কুইন্টাল) ও ১৫০ টন মোম আহরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টন মধু উৎপন্ন হয় দেশে। এর বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার টন মধু আমদানি হয়।
খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রকারভেদে মধুর দাম নির্ভর করে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মধু গড়ে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সে হিসাবে দেশে উৎপাদিত ১০ হাজার ৬৫৫ টন মধুর দাম হয় ৬৩৯ কোটি টাকা। গত বছর দেশে প্রায় ৬০ কোটি টাকার মধু আমদানি হয়েছে। এছাড়া মোমসহ মৌচাক থেকে পাওয়া অন্যান্য উপজাত বিক্রি হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে দেশে মধুর বাজার প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার।
জানা গেছে- সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ঢাকার ধামরাই, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহে বেশি মধু উৎপাদন হয়। মধুর ধরনের মধ্যেও আছে বৈচিত্র্য। শর্ষে, কালিজিরা, লিচু, ধনিয়া, খেসারিসহ বেশ কিছু ফুলের মধু বাজারে পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিক চাকে পাওয়া মিশ্র ফুলের মধুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় জোগান আসে সুন্দরবনসহ বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে।
তবে দেশে মধুর চাহিদা অনুসারে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে না। বর্তমানে মৌচাষি তৈরির জন্য বিসিকের মাত্র ৬টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে। এর মাধ্যমে সারাদেশে প্রশিক্ষণ ও তদারকি কার্যক্রম ঠিকভাবে চালাতে পারছে না সংস্থাটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২০–২১ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১ হাজার ৭৩১ টন বা ৬০ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকার মধু আমদানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল প্রায় ৫৫০ টন বা ১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার মধু। চীন, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এসব মধু আসে।
বাজারে প্রচলিত বিদেশি মধুর ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ভারতের ডাবর, সাফোলা, লিটল বি, পাকিস্তানের বি হাইভস, অস্ট্রেলিয়ার অজিবি, সৌদি আরবের আল শিফা, দুবাইয়ের আল শাফি, নিউজিল্যান্ডের মানুকা হানি ইত্যাদি বিভিন্ন সুপারশপ ও খুচরা বিক্রয়ের দোকানে বিক্রি হয়। এ ছাড়া স্বপ্ন মধু, ট্রপিকা, এপি মধু, পুষ্টি মধুসহ বেশ কিছু দেশি ব্র্যান্ডও আছে। ব্র্যান্ড ছাড়া স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত মধুও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিক্রি হয়।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মধু সংগ্রহের উৎস আছে। এসব উৎসের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা গেলে বছরে ২০ হাজার টন পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। সে হিসাবে এই খাত থেকে বর্তমানে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাজার সম্ভাবনা আছে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।