সংসদে অনির্ধারিত আলোচনা : বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেয়া হবে না : কাদের

আগের সংবাদ

একগুচ্ছ শর্ত আইএমএফের : ভর্তুকি কমানোয় জোর, ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা

পরের সংবাদ

কিয়েভ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে ইউরোপ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গত কয়েক সপ্তাহের অর্থনৈতিক সংকটে বড় ধাক্কা খেয়েছে ইউরোপ। ৪৫ দিনের মাথায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্থানকে শুধু ব্রিটেনের রাজনৈতিক সংকটের উপাদান হিসেবেই দেখছেন না ইউরোপের নেতারা। তারা মনে করছেন, এটি তাদের প্রতিটি দেশেরই ভবিষ্যৎ ছবি। গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে দুদিনের বৈঠকে মিলিত হন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের প্রধানরা। ব্রেক্সিটপরবর্তী ব্রিটেনের ক্রমাগত দুর্দশায় তাদের ভাবনার নতুন কিনারায় নিয়ে গেছে মনে করছেন আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদরা।
মূর্তিমান দুঃস্বপ্ন শীত : ইউরোপের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাশিয়াকে একঘরে করতে গিয়ে। বেড়েছে অভ্যন্তরীণ চাপ। রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে গিয়ে নিজ নিজ দেশের জনগণের অব্যাহত চাপ তাদেরই সাইড লাইনে ফেলে দিতে পারে। যুদ্ধের মারাত্মক পরিণতিতে অর্থনৈতিক যন্ত্রণায় অস্থির তারা। এই যন্ত্রণা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এর কোনো শেষ দেখছেন না বিশ্বনেতারা। বিদ্যুতের ঘাটতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ক্ষুব্ধ, ক্ষতবিক্ষত মানুষ ভয়ংকর শীতের দিকে তাকিয়ে আছে। ইউরোপীয় নেতারা মস্কোকে গ্যাস সরবরাহের জন্য ‘অস্ত্রীকরণ’ এর অভিযোগ করেছেন।
ঝলসানো কৌশল : জার্মানির চ্যান্সেলর ওলফ সোলৎজ ২০ অক্টোবর বার্লিনে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রনকে বলেন, আমরা একটি ঝলসানো আর্থ- কৌশল নিয়ে এগুচ্ছি। যা ৯ মাস ধরে চলবে কল্পনা করা যায় না। কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর জন্য বার্লিন তার সাত দশকের শান্তিবাদ ত্যাগ করেছিল- যা ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট। শুধু তাই নয়, ইউক্রেন শরণার্থীদের জন্য ইইউ তাদের অভিবাসন আইন শিথিল করেছে।
খেসারতের পাল্লা ভারি জার্মানির : চারটি জার্মান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যৌথভাবে পূর্বাভাস দিয়েছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি জার্মানিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেবে। তারা বলছে, জার্মানির ক্ষতির পাল্লাটাই বেশি। মুল্যস্ফীতি দ্বিগুন হয়ে গেছে। চ্যান্সেলর শোলজ কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ বাড়ানোর জন্য জোটের অংশীদারদের কাছ থেকে প্রচুর চাপের মধ্যে রয়েছেন- যা যুদ্ধের আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে।
‘জ্বালানিযুদ্ধ’ : পুতিন যদি চলমান ‘জ্বালানিযুদ্ধ’ কাজে লাগিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে জনবিক্ষোভ শুরু করাতে পারেন; অভিবাসন সংকট জোরদার করতে পারেন এবং তথ্য ছড়ানোয় সফল হন; তাহলে এর প্রভাবে ইউক্রেনে ইউরোপের দেশগুলোর সহায়তার হার কমে যেতে পারে।
সংকটে বিকল্প পথে ইউ : সংকট মোকাবিলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে জার্মানি। চেকোস্লোভাকিয়ায় সরকারি অফিসগুলোতে বিদ্যুৎ

সাশ্রয়ী এলইডি বাল্ব ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতালিতে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কম তাপে খাবার রান্না করতে বলা হয়েছে। ইউরোপের নামিদামি নানা ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে সময়ের আগেই বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে ইউরোপে আগামী বছর শীত মোকাবিলা করা আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রাফায়েল লস বলেন, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ইউক্রেনের বিপুল পরিমাণ বাসিন্দা আশপাশের দেশগুলোতে পাড়ি জমাবেন।
ইউরোপের পকেট ফাঁকা : ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তব্যে বলেছিলেন, অর্থনীতিকে খারাপ অবস্থা থেকে টেনে তুলতে ইউক্রেনকে সহায়তার যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল, তা ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার ইউক্রেনকে খরচ মেটাতে পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে দেশগুলোর সাধারণ মানুষের। গত সোমবার ইউরোপে মূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। এটি নতুন একটি রেকর্ড। গত বছরের অক্টোবরে এটি ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
দানা বাঁধছে অসন্তোষ : এসব কারণে ইউরোপের দেশগুলোয় অসন্তোষ দানা বাঁধছে। বিগত দুই সপ্তাহে ফ্রান্স থেকে রোমানিয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। বাড়তি বেতন দাবি করছেন শ্রমিকরা। জার্মানিতেও বিক্ষোভকারীরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারের ওপর চড়াও হয়েছে। বার্লিনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গেøাবাল পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক নিকোলাস বালবন এক নিবন্ধে লিখেছেন, যদি ইউরোপের দেশগুলো মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে না পারে; তাহলে এসব দেশের মানুষ কিয়েভকে সহায়তা দেয়ার বিপক্ষে চলে যাবে। রোমভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক নাথালি তোকি মনে করেন, আর্থিক সংকটের জেরে ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিতে পারে।
মার্কিন নির্বাচনে চোখ : তবে সহায়তা কমানোর ক্ষেত্রে আসল বদলটা আনতে পারে যুক্তরাষ্ট্র; ইউরোপ নয়। আজ ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল ইউক্রেনে ইউরোপের দেশগুলোর সহায়তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন নাথালি তোকি। যদি প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা জয় পায়; তাহলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করবে। এটা তারা প্রকাশ্যেই বলছে তারা। যদি তাই হয়, তবে শীত শেষ হওয়ার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধ পরিণতির দিকে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়