গ্রেপ্তার ৭ : ইশরাকসহ ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

শর্তগুলো কঠিন হলেও যৌক্তিক : আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

পরের সংবাদ

‘সন্তান হারানোর বিচার আমি পাইনি প্রধানমন্ত্রী’ > মানুষের গায়ে হাত দিলে রক্ষা নেই : শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর। রাজধানীর রাজপথে যাত্রীবাহী বাস এগিয়ে চলেছে। যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে উন্মুখ। শাহবাগ যেতে না যেতেই বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা। দাউ দাউ আগুনের লেলিহান শিখায় যাত্রীদের বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। অনেকেই বের হতে পারলেও বেরুতে পারেনি ১৭ বছরের কিশোরী নাহিদ। সাড়ে চার ঘণ্টা আগুনে পোড়ার যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে মারা গেল রাত সাড়ে ১১টায়। কন্যা হারানোর যন্ত্রণায় বুকে বয়ে বেড়ানো নাহিদের মা মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা রুনি বেগমের বুকফাটা আর্তনাদ, ‘গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই আমার সন্তানকে মারা হলো পেট্রোল বোমায়। সন্তানের লাশও দেখতে পারিনি বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে। সন্তান হারিয়ে আমি অসুস্থ। চোখে দেখি না। কানেও শুনি না। সন্তান হারানোর বিচার আমি পাইনি, প্রধানমন্ত্রী। আপনিও মা। আমার সন্তানকে হত্যার বিচার চাই। আপনি বিচার করবেন। আপনি আমার মা। মায়ের কাছে আমি অনুরোধ করতেই পারি।’
গৃহিণী রুনি বেগম, কাভার্ডভ্যান চালক রমজান আলী, বিজিবি সদস্য সুবেদার নায়ক শাহ আলম, ট্রাক চালক রফিকুল ইসলাম নামগুলো পৃথক হলেও এদের কান্নার রঙগুলো এক। কষ্টগুলো একই সুতোয় গাঁথা। ২০১৩-১৫ সালের পেট্রোল বোমা হামলায় কেউ দিয়েছেন নিজের জীবন। কেউ হারিয়েছেন প্রিয় স্বজন। কেউ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু। আহতরা বেঁচে আছেন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে। আর নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজন হারানোর তীব্র যন্ত্রণা। গতকাল রবিবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে স্বজনহারাদের কান্নায় আবেগঘন পরিবেশে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। অনুষ্ঠানে অগ্নিসন্ত্রাসের বিচার চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। বিচার করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে কাভার্ডভ্যান চালক রমজান আলী বললেন, গাজীপুরে ছেলে মনির হোসেনকে সিএনজিতে তুলে বাড়ি পাঠাতে চেয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ভ্যান চলছে। দাউ দাউ করে। আগুনের লেলিহান শিখায় আমার সামনে প্রিয় সন্তান ছাই হয়ে গেল। আমার

হাহাকারে বিদীর্ণ হলো আকাশ। সন্ত্রাসীদের মনে এতটুকু দয়া হলো না। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করি না। পেটের দায়ে কাজ করি। কিন্তু কেন আমাদের পুড়ে মরতে হয়? চোখের সামনে সন্তানকে দাউ দাউ করে জ¦লতে দেখেছি। আমার বুকের ভেতর দাউ দাউ করে জ¦লে। কত কষ্ট, কাউকে বোঝাতে পারব না। ওর মা অজ্ঞান হয়ে দিনরাত পড়ে থাকে। আমরা শান্ত¡না খুঁজে পাই না। একমুঠো ভাতের জন্য টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ছুটে বেড়াই। গরিব মানুষ। আমাদের কী অপরাধ? ৩৮ বছর ধরে ড্রাইভিং করি। চোরাচালান করি না, কোনো

মামলা নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করি। আমরা কোথায় যাব? কার কাছে দাঁড়াব? আপনি ছাড়া? আগুন-সন্ত্রাসের বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী আমি বিচার চাই।
জিয়ার আমলে বিনা বিচারে ফাঁসি হওয়া সামরিক কর্মকর্তার মেয়ে মমতাজ বেগম বলেন, আমার ছয় মাস বয়সে আমার বাবাকে প্রহসন করে জিয়া ফাঁসি দিয়েছে। বাবার মৃত্যু দিবস জানি না। কোথায় কবর জানি না। সবাই আমাকে অপয়া বলে। অনেক কষ্টে নানির কাছে বড় হয়েছি। আপনিও এতিম, আমিও এতিম। এতিম এতিমের কষ্ট বোঝে। আমি বিচার চাই। বিজিবি সদস্য সুবেদার নায়ক শাহ আলম। কাঁচপুর ব্রিজে সাপ মারার মতো পিটিয়ে মারা হলো। তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার আলেয়া বললেন, আমার স্বামী তো ডিউটি করছিলেন। তাকে কেন নির্মমভাবে জীবন দিতে হলো? এরা মানুষ না জানোয়ার?
মানুষের গায়ে হাত দিলে রক্ষা নেই : আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের গায়ে হাত দিলে কারো রক্ষা নেই- এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতি করবেন ভালো কথা। কিন্তু সাধারণ মানুষের গায়ে হাত দিলে আর কারো রক্ষা নেই। দল-মত যাই হোক না কেন প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার সংরক্ষণ করাটাই আমাদের দায়িত্ব, আমরা তাই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ রকম অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা যেন বাংলাদেশে আর না ঘটে এজন্য সবাইকে সতর্ক করেছেন তিনি।
বিএনপি জামায়াতের দুঃশাসনের কথা কেউ যেন ভুলে না যায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার হচ্ছে, বিচার হবে। যারা হুকুমদাতা তাদের কথা আপনারা ভেবে দেখেন। তাদের কী করে মানুষ সমর্থন করে? বিএনপির বিচার করতে হচ্ছে না, প্রকৃতিই তাদের বিচার করছে- জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৫শ জন মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেছে এবং সাড়ে তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছিল। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে আমাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে, তার পুনরাবৃত্তি বারবার আমরা দেখতে পাচ্ছি। কীভাবে মানুষ পারে একটা গাড়িতে যাচ্ছে জীবন্ত মানুষগুলো সেখানে আগুন ধরিয়ে মানুষকে হত্যা করা। এটাই নাকি আন্দোলন? এই আন্দোলন তো আমরা কখনো দেখিনি। আন্দোলন তো সেই স্কুলজীবন থেকেই আমরা দেখেছি। প্রত্যেকটা মিলিটারি ডিকটেটরের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শরিক হয়েছি। সেই আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছে; কই আমরা তো এ কথা স্বপ্নেও ভাবিনি যে, পেট্রোল বোমা দিয়ে অথবা অগ্নিসংযোগ করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে সেটা আন্দোলন করা হবে। বিএনপি ঘোষণা দিল অবরোধ এবং হরতাল কিন্তু কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে, মাদক-অর্থ দিয়ে বিপথে ঠেলে দিয়েছে। পঁচাত্তরের পর থেকে এই চলছিল বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ আসার পরে না আমরা কিছুটা স্থিতিশিলতা আনতে পেরেছি। শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা, উৎপাদন বাড়ানো, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যতটুকু সম্ভব আমরা করছি। মানবকল্যাণে করছি। এরমধ্যে এ ধরনের আঘাত চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আজকে এদের নিজেদের বিচার নিজেদেরই হচ্ছে। বিচার হবেই, বিচার এটা বোধ হয় আল্লাহর তরফ থেকেই হবে। বিচার তো হয়েছে, হয়তো প্রত্যেক কেসে বিচার চলছে না কিন্তু যারা এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, বিচার কাজ চলছে, অনেকে শাস্তি পাচ্ছে, ভবিষ্যতেও পাবে।
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন আহত ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সামরিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিমানবাহিনীর সদস্যের স্বজনরা। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময়কার অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত-নিহত এবং আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনসহ বিভিন্ন ঘটনার ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নিহতদের স্বজন এবং আহতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাদের খোঁজখবর নেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়