গ্রেপ্তার ৭ : ইশরাকসহ ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

শর্তগুলো কঠিন হলেও যৌক্তিক : আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

পরের সংবাদ

রাঙ্গাবালীতে ডিলারের প্রতারণা : ভুল জাতের ধান বীজে বিপাকে শত শত কৃষক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুল হাসান রুবেল, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) থেকে : ডিলারের প্রতারণায় ভুল জাতের ধানের বীজ বপন করে বিপাকে পড়েছেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর কয়েকশ কৃষক। আমনের মৌসুমে বপন করা এসব বীজে সময়ের আগেই গজিয়েছে ধানের শীষ। যা অপরিপক্ক হওয়ায় অধিকাংশতেই ধরেছে চিটা। ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা কৃষক।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, সাধারণ কৃষকের সরলতার সুযোগে ‘স্বর্ণ গোটা ও বিয়ার ১১’ জাতের বীজের কথা বলে বিদেশি জাতের ধানের বীজ ধরিয়ে দেন খুচরা ডিলাররা। আমনের মৌসুমে বপন করা এসব বীজে অসময়ে ধানের শীষ গজিয়েছে। এতে ধানের চেয়ে চিটাই বেশি। যেখানে প্রতি একর জমিতে ৪০ থেকে ৫০ মন ধান আসার কথা, সেখানে ১০ থেকে ১৫ মন ধান আসাই দুষ্কর। এতে বড় ধরনের ক্ষতি হবে তাদের। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসবেন অনেকেই। তাই দিশেহারা হয়ে পরেছেন কৃষি নির্ভর প্রান্তিক জনপদের কৃষকরা।
উপজেলার পূর্বনেতা গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক ইউনুস মৃধা জানান, তিনি এ বছর চার একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে দুই একর জমিতেই ডিলারের প্রতারণার কারণে ভুল বীজ বপন হয়েছে। অসময়ে গজিয়েছে ধানের শীষ। অধিকাংশ শীষই অপরিপক্ক এবং চিটাযুক্ত। এতে কাক্সিক্ষত ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা তার।
একই গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, বাজারের খুচরা ডিলার বাচ্চুর কাছ থেকে আমরা ধান এনেছি। আমরা তার কাছে স্বর্ণ গোটা ধান চেয়েছি। কিন্তু সে আমাদের দিয়েছেন লাল গুটি স্বর্ণা নামের একটি জাতের ধান। আমরা না বুঝেই ধানের বিজ বপন করেছি। এরপর এক মাসের মধ্যেই ধানের শীষ বের হয়। যার অধিকাংশই চিটা। এতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এ বছর তেল ও সারের দাম বেশি থাকায় জমি আবাদে খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে আবার এই ধস! দিশেহারা হয়ে পথে বসার অবস্থা। প্রতারক ডিলারের শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে ভবিষ্যতে কোনো নিরীহ কৃষক আর এমন প্রতারণার শিকার না হয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাধঘাট এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক সাইমুন মিয়া জানান, বাহেরচর বাজারের খুচরা ডিলার এনায়েতের কাছ থেকে বীজ এনে ক্ষেতে লাগাইছি। বিক্রির সময় সে স্বর্ন গোটা ধান বলেছে। পরে ধানের শীষ বের হওয়ার পরে জানতে পারি ইন্ডিয়ান জাতের ধান। যেই ধান বাংলাদেশে হওয়ার উপযোগী না। ভুল জাতের ধান গালানোর কারণে ধানের চেয়ে চিটার সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মিলন কুমার রায় জানান, এ রকম কোনো জাতের ধানের বীজ বাংলাদেশে উদ্ভাবন হয়নি। এটা ভারত থেকে চোরাই পথে আনা একটি জাত। বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে এটা ম্যাচিং হবে কিনা, তা জানা নেই।
রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ জানান, আমরা সব সময় বিএডিসি অনুমোদিত ধানের বীজ বপন করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষকদের সঙ্গে যারা প্রতারণা করেছে তারা বিএডিসির সরকারি লাইসেন্সধারী ডিলার নয়। ধান বিক্রির বৈধতা নেই তাদের। এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এতে ১ লাখ ১৪ হাজার টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে অন্তত ২০০ একর জমির ফসল। এতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উৎপাদন কমে আসার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়