গ্রেপ্তার ৭ : ইশরাকসহ ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

শর্তগুলো কঠিন হলেও যৌক্তিক : আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

পরের সংবাদ

বাবা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

-তোর মেয়েটা সারাদিন আব্বু আব্বু করে। তোর ছুটি কবে বাপ, কবে আসবি?
-আগামী মাসেই আসব মা, মালিক বলেছে এবার ছুটি দিবে।
রাবেয়া বিবি কান থেকে মোবাইল সরাতেই দৌড়ে আসে রিনি- দাদু আব্বু কবে আসবে?
– আসবে দাদু, এইতো অল্প কিছুদিন।
রিনির চেহারা উজ্জ্বল হয়, মুখে হাসি ফুটে। দৌড়ে যায় মায়ের কাছে। গলা জড়িয়ে বলে, ‘মা আব্বু বলেছে আসবে।’ তানিয়া মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে, ‘হ্যাঁ মা, তোমার আব্বু আসবে। তোমার জন্য লজেস আনবে, জামা আনবে, পুতুলও।’
‘তোমার জন্য কী আনবে মা।’ মেয়ের প্রশ্নে তানিয়ার চোখ জ্বলজ্বল করে। মনে মৃদু ঝড় উঠে। পেটের ভাত জোগাতে মানুষটা বাড়িও আসতে পারে না। হায়রে দারিদ্র্য। ‘বললে নাতো মা কী আনবে তোমার জন্য?’
‘আমার কিছু লাগবে না মা। তোর আব্বু আসলেই হবে।’
সেদিন রাতে হৈ-হুল্লোড়ে রিনির ঘুম ভাঙে। দেখে তার মামা আসছে। রিনি আনন্দে লাফিয়ে উঠে। কিন্তু মামা প্রতিবারের মতো আর তাকে কোলে তুলে নেয় না। আদর করে ডাকে না। বিষণ্ন চেহারায় মামা ছটফট করে। নিচু স্বরে কিছু বলে। তার কথা শুনে দাদু হাউমাউ করে কেঁদে উঠে, বুক চেপে ধরে। প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। মায়ের চোখ হতে বয়ে যায় জলের অবারিত ধারা। রিনি কিছুই বোঝে না। শুধু বোঝে বাবা ভালো নেই। তার মোবাইল বন্ধ।
রিনি দাদুকে জিজ্ঞেস করে। দাদু তার উত্তর দেয় না। আরো বেশি হাউমাউ করে কেঁদে বুকে চেপে ধরে। রিনি বুক ভারী হয়ে উঠে। দু-চোখ বেয়ে জল নামে। তানিয়া মেয়ের দু’হাত মোনাজাতের জন্য তুলে দেয়। এভাবে বলো মা, ‘আল্লাহ বাবাকে ভালো রাখো।’ রিনি হাত তুলে বারবার বলে, ‘আল্লাহ বাবাকে ভালো রাখো।’ তার চোখ থেকে জলের ধারা নামে। রাতের আঁধার কেটে যায়, মনে আঁধার বাড়ে।
পরদিন গ্রামের মানুষ এসে ভিড় করে বাড়িতে। রিনির বুঝে আসে না কী হচ্ছে। মাকে জিজ্ঞেস করলে, রাবেয়া বলে, ‘তোমার আব্বু আসবে মা, তাই সবাই ভিড় করছে।’ বাবা আসবে শুনে রিনির মনে আনন্দের ঢেউ উঠেও উঠে না। মায়ের চিবুক ধরে বলে, ‘বাবা আসবে তাহলে কাঁদো কেন মা?’
বিকেলে সাদা গাড়ি হতে সাদা কিছু নামায় তারা। রিনি দৌড়ে যায়, হয়তো বাবা আসছে। কিন্তু সে বাবাকে কোথাও দেখে না। মামাকে দেখে জিজ্ঞেস করে, ‘মামা আব্বু কই?’ মামা এবার তাকে কোলে তুলে নেয়। বুকে চেপে ধরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। মামাকে কখনো কাঁদতে দেখেনি রিনি, পুরুষরা কি কাঁদতে জানে? সেও এবার হাউমাউ করে কাঁদে। পাড়ার মহিলাদের কান্নার গুণগুণ রব উঠে। পুরুষরাও লুকিয়ে চোখ মোছে। মামার ক্লান্ত শরীর এগিয়ে যায় সাদা জিনিসটার দিকে। সাদা কাপড়ে কিছু মোড়ানো। মামা জিনিসটার বাঁধন খুলে দেখায়,
‘মামনি দেখ তোর বাবা।’ রিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। মামার বুকে লেপ্টে যায়, ‘কোথায় বাবা, এতো ছাই, পোড়া কয়লার খণ্ড।’
য় ফেনী সদর, ফেনী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়