গ্রেপ্তার ৭ : ইশরাকসহ ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

শর্তগুলো কঠিন হলেও যৌক্তিক : আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

পরের সংবাদ

পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন ও জাপার সংকট

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাধারণ মানুষের মনে পল্লীবন্ধু হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন তার গ্রামকেন্দ্রিক উন্নয়নমূলক কাজের প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে। মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী আসন পেতে গড়েছিলেন জাতীয় পার্টির মতো জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। সামরিক আইন প্রশাসক থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। সামরিক আইনের শক্ত খোলস ভেদ করে তিনি হয়ে ওঠেন আপামর জনতার পল্লীবন্ধু, উত্তরবঙ্গের জনতার জনদরদী নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বৈরশাসক হিসেবে এরশাদের সমালোচনা থাকলেও দল গঠনের পর ক্ষমতার রাজনীতিতে এরশাদ ও জাতীয় পার্টি হয়ে ওঠে জোট কিংবা বিরোধী রাজনীতির প্রধান সহায়ক দল। ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার হন তিনি; নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রাজনৈতিক দল হিসেবে জাপা এখনো রাজনীতির টেবিলে গুরুত্ব ধরে রেখেছে সমানতালে। সকাল-বিকাল সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য পরিচিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে জোট গঠন নিয়ে নানা নাটকীয়তার জন্ম দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হন।
নানা সংকট পেরিয়ে আসা দল জাতীয় পার্টি এরশাদের মৃত্যুর পর আরো গভীর সংকটে পড়তে শুরু করে। বিশেষ করে দলের নেতৃত্বদানের বিষয়টি রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে প্রতিযোগিতার দ্ব›দ্ব ও আত্মকলহ তৈরি করে, যা গণমাধ্যমেও বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। জাপা নেতাদের একাংশের মতে, রওশন এরশাদ সংসদে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেও জি এম কাদের তাকে সরিয়ে দলীয় গঠনতন্ত্র বা শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করেই নিজে নিজে দলীয় প্রধানের পদ গ্রহণ করার মনোবাসনা পূর্ণ করতে চাচ্ছেন। গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়ন ও দলীয় পদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জাতীয় পার্টির নেতা ইদ্রিস আলী। যথাযথ তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট। এমন সব দ্ব›েদ্বর মধ্যেই দলে বিভক্তি খুব স্পষ্ট এবং দলীয় শৃঙ্খলা বা গঠনতন্ত্রের বাছ-বিচার না করেই দলীয় সব কার্যক্রম থেকে যখন যাকে ইচ্ছা অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। ৩ সেপ্টেম্বর বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের স্থলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নাম স্পিকারের কাছে প্রস্তাব করে জাতীয় পার্টি। পল্লীবন্ধুর এ দলটিতে নতুন করে সমস্যা আরো ঘনীভূত হচ্ছে। জাতীয় পার্টির (জাপা) সিদ্ধান্ত গ্রহণে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার দলীয় কার্যক্রম গ্রহণেও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একই আদালতে আরেক মামলায় চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরকে বেআইনি ঘোষণার ডিক্রি চেয়েছেন দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া জাপা নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদপদবি থেকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান ২৩ অক্টোবর মামলাটি করেন।
মামলায় জিয়াউল হক ও মসিউর রহমান দুজনই দাবি করেন, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর ছয় মাস আগে ১ জানুয়ারি জি এম কাদের তার বড় ভাই এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে ‘জাতীয় পার্টির জন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ শিরোনামে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করান। এরপর জি এম কাদের প্রথমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, পরে চেয়ারম্যান হন, যা ছিল গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। এ নিয়ে দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এরশাদ ২০১৯ সালের ২২ মার্চ জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। ৪ মে পুনরায় তাকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। তখন এরশাদ গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিনি স্বাভাবিক বিবেচনা প্রয়োগে সক্ষম ছিলেন না বলে মামলায় দাবি করা হয়। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন জি এম কাদের। দলীয় নেতারা দাবি করছেন, দলের গঠনতন্ত্রে এভাবে চেয়ারম্যান ঘোষণার কোনো বিধান নেই। একের পর এক দলীয় নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কার, দলীয় গঠনতন্ত্র অমান্য কিংবা নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে দলীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ জাতীয় পার্টির মতো বৃহৎ একটি দলকে জনপ্রিয়তার তলানিতে নামাবে এবং দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে তাতে সন্দেহ নেই। তবে মতপার্থক্য থাকা রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সৌন্দর্যের অংশ, যা দলকে সুসংগঠিত করবে যদি তা জনকল্যাণকামী ও নৈতিকতার ভিত্তিতে হয়।

তানজিব রহমান : লেখক, গবেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়