গ্রেপ্তার ৭ : ইশরাকসহ ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

শর্তগুলো কঠিন হলেও যৌক্তিক : আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

পরের সংবাদ

নদী কমিশনের চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম যাচ্ছেন আজ : শত চেষ্টায়ও কর্ণফুলী-হালদার দখল-দূষণ ঠেকানো যাচ্ছে না

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সমরেশ বৈদ্য, চট্টগ্রাম অফিস : উচ্চতর আদালতের নির্দেশনা থাকলেও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন অংশ বেদখলকারী ও নদী দূষণকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সরকারি সংস্থাগুলো। এক্ষেত্রে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালানো এবং উচ্ছেদ করা অংশ আবার যাতে বেদখল হয়ে না যায় সেজন্য বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ, লোকবল ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তা না পাওয়ায় এ উদ্যোগ এগুতে পারছে না। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীসহ সারাদেশের নদী রক্ষার জন্য যে নদী কমিশন গঠন করা হয়েছে তারা নানা সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে এলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা স্থবির হয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীসহ অন্যান্য নদী, খাল-বিল-জলাশয় দখল ও দূষণ সরজমিন পরিদর্শনসহ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে চট্টগ্রাম সফর করবে জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি টিম।
চট্টগ্রাম নগরী মূলত: যে নদীকে কেন্দ্র করে আজকে বন্দরনগরীতে পরিণত হয়েছে সেই কর্ণফুলী নদীর দখল-দূষণ রোধে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নানা সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। সচেতন নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও নদী কমিশনের নানা উদ্যোগের ফলে কর্ণফুলী নদীর বেশ কিছু অংশ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হলেও এখনো কয়েক হাজার অবৈধ দখলদার রয়ে গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কলকারখানা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খাল-নালা-নর্দমা দিয়ে বিষাক্ত-দূষিত বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিক, রাবার জাতীয় অপচনশীল দ্রব্য সরাসরি কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে এ দুটি নদীতে প্রতিনিয়ত দূষণ বেড়েই চলেছে।
অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিতের তত্ত্বাবধানে দুই তরুণ গবেষক পিয়াল বড়ুয়া ও আল আমিন তাদের সমীক্ষায় দেখিয়েছেন যে, প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরী থেকে নানাভাবে পায় আড়াইশ মেট্রিক টন পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্য মাছসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এতে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. ওমর ফারুক রাসেলের নেতৃত্বে একদল গবেষক কর্ণফুলী নদী ও এর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় গবেষণা চালিয়ে বলছেন, দখল-দূষণে শুধু কর্ণফুলী নদী নয় এর দুই পাড়ের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যও সংকটাপন্ন। এর মধ্যে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে এবং ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দূষণ ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আরো ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে যাবে। শুধু যে কর্ণফুলী নদী

দূষিত হচ্ছে তা কিন্তু নয়। দেশের একমাত্র জোয়ার-ভাটার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হালদা নদীও নানাভাবে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। নদীর পাড়ে ইটভাটা, নদীর বাঁক কেটে দেয়া, কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খাল-নালা-নর্দমার মাধ্যমে এই নদীতে ফেলে দেয়ার ফলে এই নদীর মাছ ও জলজ প্রাণী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে এই নদীতে বিচরণকারী নিরীহ প্রাণী ডলফিনও। প্রায়ই মৃত ডলফিন ভেসে উঠছে হালদা নদীতে। এই হালদা নদীকে জাতীয় হেরিটেজ ঘোষণা করা হলেও এর প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার্থে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ খুবই কম দেখা যাচ্ছে।
এদিকে জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের আগের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্ণফুলী ও চাক্তাই খালের অবৈধ স্থাপনা আগামী ১০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করার দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে -চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন নেতৃত্বে পাঁচটি পরিবেশ সংগঠন। একই দাবিতে আগামী ৯ নভেম্বর বুধবার ভোর ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত শতাধিক সাম্পান নিয়ে চাক্তাই খালের মোহনায় অনশন ধর্মঘট পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ এর সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক আলিউর রহমান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়