গ্রেপ্তার ৭ : ইশরাকসহ ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

শর্তগুলো কঠিন হলেও যৌক্তিক : আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

পরের সংবাদ

ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালে মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙবে ২০২২ সালে : শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যুর হার দ্বিগুণের বেশি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : বছর শেষ হতে এখনো দেড় মাসের বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের মোট সংখ্যা ২০১৯ সালে মৃত্যুর রেকর্ড প্রায় ছুঁইছুঁই করছে। আর ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছর শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত দ্বিগুণের বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙবে চলতি বছর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। প্রতি এক হাজার রোগীর মধ্যে ওই বছর ১ দশমিক ৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গু রোগী ছিল ১ হাজার ৪০৫ জন, মৃত্যু হয় ৭ জনের। শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যুর হার ছিল শূণ্য দশমিক ৪৯ শতাংশ। প্রতি এক হাজার রোগীর মধ্যে প্রায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে শনাক্ত বেড়ে হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন। মৃত্যুও লাফিয়ে বেড়ে হয় ১০৫ জন। শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। ওই বছর প্রতি এক হাজার রোগীর বিপরীতে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৭ জনে। চলতি বছর ৬ নভেম্বর (সকাল ৮ টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৩ হাজার ১০৭ জন। এই জ¦রে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭০ জন। শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার শূণ্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি এক হাজার রোগীর বিপরীতে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩ দশমিক ৯ জন। যা মৃত্যুর রেকর্ড গড়া ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
অক্টোবরের শেষের দিকেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছিলেন, দেশে ডেঙ্গুর মৃত্যু বেড়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হচ্ছে। এটি খুবই আশঙ্কাজনক বিষয়।
সম্পতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার

পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছিলেন, যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে না আসা এবং অবহেলার কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটছে। হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু অনেক কমে আসবে। এদিকে অধিদপ্তরের তথ্যও বলছে, ২০১৯ সালেও রোগীরা দেরিতে চিকিৎসা নেয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে বেশি।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ডেঙ্গু ভাইরাসটির কয়েকটি ধরন আছে। সোরা টাইপ-১, ২, ৩ ও ৪। যারা আগের বছর ১ বা ২ তে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা যদি পরের বছর ৩ বা ৪ দিয়ে আক্রান্ত হন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। কারণ, যে ধরনটিতে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন সেটির এন্টিবডি শরীরে তৈরি হয়ে যায়। তাই সেই ধরনটিতে আবারো আক্রান্ত হলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার একটি ক্ষমতা শরীরে তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু অন্য কোনো ধরনে আক্রান্ত হলে সেটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি অনেক কম থাকে। তাই ঝুঁকিও অনেক বেশি থাকে। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে সেরোটাইপ ৩ বেশি হয়েছিল। এবার ঢাকায় ৩ এবং ৪ দেখা যাচ্ছে। গবেষণায় ডেন-৩ দেখা যাচ্ছে ৯০ শতাংশ এবং ডেন- ৪ দেখা যাচ্ছে ১০ শতাংশ। কক্সবাজারে ১ এবং ৩ এই ধরন দিয়েই সংক্রমিতের সংখ্যাই বেশি।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর ডেন-৩ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এবার মানুষ এই ধরনটিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়ায় আক্রান্তদের অনেকেই শক সিন্ড্রোমে চলে যাচ্ছে। রক্তের প্ল্যাটিলেট কমে গিয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ফলে মৃত্যু হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে ৬৪ শতাংশ ডেঙ্গুরোগী মারা যাচ্ছেন। এবার যারা মারা যাচ্ছে তারা এর আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, গত বছর পর্যন্ত ডেঙ্গুর ১, ২, ৩ ধরনের সংক্রমণ ছিল। এ বছর ৩ এবং ৪ ধরনের সংক্রমণ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। শহরের ডেঙ্গু মশা ইতোমধ্যে তার সংক্রমণের ধরন বদলে ফেলেছে। বর্তমানে কোনো জ্বর হলে বিলম্ব না করে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা নিতে হবে। কোনোভাবেই কোনো জ্বরকে অবহেলা করা যাবে না। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমানো সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়