৪০তম বিসিএস : নন-ক্যাডারদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ মোমবাতি প্রজ্বালন

আগের সংবাদ

ঝুলে গেল সমন্বিত তিস্তা প্রকল্প : ভূরাজনৈতিক চাপের কারণে এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে আগ্রহ হারিয়েছে সরকার, এখনো হাল ছাড়েনি চীন

পরের সংবাদ

শ্যামনগরে বেড়িবাঁধে ভাঙন : ৪ গ্রামের মানুষের ভরসা ১৪ বাঁশের সাঁকো

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মেহেদী হাসান মারুফ, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পাশে বেড়িবাঁধে ভাঙনের পরে সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সংস্কার করা হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা। ভাঙনকবলিত আড়পাঙাশিয়া গ্রামের রাস্তার ওপর নির্মিত ১৪টি বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করেই চলাচল করতে হয় চারটি গ্রামের ৯ হাজার মানুষের। এতে ওইসব এলাকার মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
এছাড়া পিচ ঢালাইয়ের আগ মুহূর্তে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ দুর্গাবাটির তিন কিলোমিটার রাস্তা মানুষ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরজমিনে শনিবার সুন্দরবন উপকূলবর্তী দুর্যোগকবলিত ইউনিয়ন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৫ নং ও ৬ নং ওয়ার্ডের দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, আড়পাঙাশিয়া, মাদিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকালে প্রবল জলোচ্ছ¡াসে খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পাশে ৩২০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
প্লাবিত হয় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আড়পাঙাশিয়া, মাদিয়া, দুর্গাবাটি ও বিলআইট গ্রাম। ভেসে যায় শতাধিক ছোট বড় চিংড়ি ঘের। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় চার কিলোমিটার ইট সোলিং ও মাটির রাস্তা। এর মধ্যে বিলআইট গ্রামের পরিমল জোয়ার্দ্দারের বাড়ির সামনে থেকে আড়পাঙাশিয়া মণষাতলা হয়ে মাদিয়া খোন্তাকাটা মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তার মধ্যবর্তী ১৪টি স্থানে রাস্তা ভেঙে দিনরাত জোয়ারভাটা খেলতে থাকে। স্থানীয়দের উদ্যোগে ওইসব জায়গায় বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় সাঁকো। দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ৯ হাজার মানুষের চলাচল, সুপেয় পানি সংগ্রহ, গবাদিপশুর ঘাসপাতা সংগ্রহের জন্য এ বাঁশের সাঁকোই একমাত্র অবলম্বন। তবে গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক সময় দোলনা ও নৌকা ব্যবহার করতে হয়। বাঁশের সাঁকো পার হতে অনেক বৃদ্ধ ও শিক্ষার্থী পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন। এছাড়া ৬ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ দুর্গাবাটিসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পিচ ঢালাইয়ের আগেই গোপালের মোড় থেকে মন্দিরবাড়ি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। দীর্ঘদিন রাস্তা পানিতে ডুবে থাকার ফলে রাস্তায় ব্যবহৃত ইটের খোয়া উঠে পায়ে হেঁটে বা বাইসাইকেলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। লোনা পানির কারণে খেতের আমন ধান শুকিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির পুকুর।
আড়পাঙাশিয়া পি এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমিত্র জোয়ার্দ্দার জানান, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। চিংড়ি ঘের, সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণই এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। সিত্রাংয়ে ক্ষতি না হলেও সিডর, আইলা ও ফণির মতো ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অনেক ক্ষতি সয়েছে এখানকার জনপদ। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জলোচ্ছ¡াসে গত ১৪ জুলাই খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের পাশে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে আড়পাঙাশিয়া মণষাতলা হয়ে মাদিয়া খোন্তাকাটা মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তার মধ্যবর্তী ১৪টি স্থানে স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো বানানো হয়। এই সাঁকোই আড়পাঙাশিয়া পি এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুর্গাবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আড়পাঙাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীরসিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন। একইভাবে শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা বলেন তপোবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামরঞ্জন বিশ্বাস।
৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য বিজয় প্রসাদ বিশ্বাস, পরিমল জোয়ার্দ্দার, মনোতোষ মন্ডলসহ কয়েকজন জানান, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার পর ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলোতে মাটি দেয়া হয়েছিল। কোথাও কোথাও ইট সোলিং করা হয়েছিল। প্রতি বছরে ঝড়বৃষ্টিতে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার ওইসব রাস্তা এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেখার কেউ নেই বললেই চলে। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার করে আর পকেট গরম হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের।
৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিকাশ মন্ডল জানান, দীর্ঘদিন রাস্তা পানিতে ডুবে থাকার ফলে রাস্তায় ব্যবহৃত ইটের খোয়া উঠে পায়ে হেঁটে বা বাইসাইকেলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। রাস্তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ তার চোখে পড়েনি। ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুকুন্দ পাইক জানান, রাস্তার ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে এলাকার মানুষ নিচে পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন। ২২ টন চালের কাজ সাড়ে পাঁচ টন চাল দিয়ে করতে বলা হয়েছে। আগামী মাসে কীভাবে মাটি সংগ্রহ করে রাস্তা সংস্কার করবেন সেটা তার বোধগম্য নয়। শ্যামনগরের ৯ নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর আড়পাঙাশিয়াসহ কয়েকটি রাস্তায় সাত টন চাল বরাদ্দ দিয়ে মাটি দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করেছিলেন। দুর্গাবাটিতে স¤প্রতি ভাঙনের পর রাস্তায় মাটি দিতে সাড়ে ৫ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন জানান, গত ১৪ জুলাই দুর্গাবাটির বেড়িবাঁধ ভেঙে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়েনের তিন-চারটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছিল। এতে অনেকগুলো রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা সংস্কারে আপাতত কিছু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে চলতি নভেম্বর মাস থেকে মেরামত কাজ শুরু হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়