৪০তম বিসিএস : নন-ক্যাডারদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ মোমবাতি প্রজ্বালন

আগের সংবাদ

ঝুলে গেল সমন্বিত তিস্তা প্রকল্প : ভূরাজনৈতিক চাপের কারণে এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে আগ্রহ হারিয়েছে সরকার, এখনো হাল ছাড়েনি চীন

পরের সংবাদ

রোগী দেখেন প্রাইভেট ক্লিনিকে : স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অফিসে আসেন বছরে ১০ দিন!

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম নাহিদ ও সোহাগ মাহমুদ সৈকত, মনপুরা থেকে : ভোলা মনপুরা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা। উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৈয়বুর রহমান এক বছরে মাত্র ১০দিন কর্মস্থলে গিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও বেতন ভাতা আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওঠবস করছেন জেলা শহরের এক প্রভাবশালী ক্লিনিক মালিক ও তার এক আত্মীয়ের ইশারায়। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সচিব ও ডিজি অবগত আছেন বলেও ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে তৈয়বুর রহমানকে অপসারণের জন্য মনপুরার মানুষ একাধিকবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে তিনি বহাল তবিয়তে থেকে তার অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুক্তভোগী উপজেলাবাসী বলছেন, সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই মনপুরাবাসী স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই যেন রোগী। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, চারদিকে দুর্গন্ধ। হাসাপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ড্রেনগুলোতে প্রচুর পরিমাণ এডিস মশার লাভা।
গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্তান্ত রোগী ও তার স্বজনরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্দিষ্ট চিকিৎসকদের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। মাত্র দুজন কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার তার নিজ কক্ষ খোলা রেখে কাউকে না জানিয়ে মাসের পর মাস স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না এসে জেলা শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখছেন। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারের কক্ষ, ইপিআই কক্ষ, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, কনসালট্যান্ট গাইনি, প্রসিকিউটর, টিকাদান কেন্দ্র, অফিস সহকারীসহ কর্মকর্তাদের কক্ষ তালাবদ্ধ। জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও চিকিৎসা দেয়ার মতো কোনো চিকিৎসক নেই। কখনো কখনো একজন থাকেন আবার অনেক সময় কোনো চিকিৎসকই থাকেন না।
এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ১০টায় চিকিৎকদের অনুপস্থিতির কারণে হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় আব্দুল্লাহ নামে এক বছরের ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হাসপাতাল কম্পাউণ্ডে ৭ দফার দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন উপজেলাবাসী। এত কিছুর পরও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। হয়নি কোনো তদন্ত।
প্রায় এক বছর পর্যাপ্ত এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না রোগীরা।
প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সের উদাসীনতায় প্রায়ই ঘটছে প্রসূতি মা ও শিশুর মৃত্যু। রোগীরা পাচ্ছেন না বিনামূল্যের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। বিশেষ করে কলেরা, টিবি, টাইফয়েড ও করোনা রোগীরা পাচ্ছেন না কোনো সেবা। অযতœ অবহেলায় পড়ে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটিও।
মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হাবিবুর রহমান বলেন, মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তৈয়বুর রহমান তিনি কর্মস্থলে না এসে ভোলা শহরে বসে সরকারি টাকার নয় ছয় করছেন। তার চরম দায়িত্বহীনতার কারণে মনপুরাবাসী সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না।
কর্তব্যরত আবাসিক অফিসার ডা. মো. আশিকুর রহমান অনিক ভোরের কাগজকে বলেন, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে অনেক জনবলের সংকট। চিকিৎসক মাত্র ছয়জন। নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্যান্য অনেক পদ শূন্য। এ কারণে বিপুলসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কর্মকর্তার অনুপস্থিতির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এই হাসপাতালে ইসিজি মেশিন ছাড়া আর কিছুই নেই। এক্সরে মেশিন নেই।
প্যাথলজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় এগুলো রোগীদের কোনো কাজে আসছে না। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না করায় এই হাসপাতালের রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. তৈয়বুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমি সপ্তাহে একদিন মনপুরায় যাই, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে আবার চলে আসি। সঠিক যন্ত্রপাতি ও প্রচুর জনবল সংকট, আমি একা কী করতে পারি।
মনপুরা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি মিসেস, সেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, মনপুরা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তৈয়বুর রহমান নিয়মিত হাসপাতালে না এসে তিনি ভোলায় প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখার কারণে আমাদের মনপুরাবাসী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমি তাকে বারবার সতর্ক করার পরও তিনি বেপরোয়াভাবে এ কাজ করে যাচ্ছেন। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে মনপুরাবাসীর এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সুরাহা করার অনুরোধ করছি।
ভোলা সিভিল সার্জন একেএম শফিকুজ্জামান বলেন, বিষয়টি অবগত আছি। আমি তাকে এই বিষয়ে বহুবার সতর্ক করেছি। তাছাড়া আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিষয় অবগত আছেন। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়