৪০তম বিসিএস : নন-ক্যাডারদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ মোমবাতি প্রজ্বালন

আগের সংবাদ

ঝুলে গেল সমন্বিত তিস্তা প্রকল্প : ভূরাজনৈতিক চাপের কারণে এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে আগ্রহ হারিয়েছে সরকার, এখনো হাল ছাড়েনি চীন

পরের সংবাদ

বরিশালের গণসমাবেশে ফখরুল : দেশের মানুষ মুক্তি চায় ফয়সালা হবে রাজপথে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : ভোটে ইভিএম ব্যবহার কিংবা ইসি কোনো ইস্যু নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারো বলেছেন, আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং সরকারকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
গতকাল শনিবার বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ একে একে আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। সব স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের মানুষ এখন এই সরকারের কবল থেকে মুক্তি চায়। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার- বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিন, ফয়সালা হবে রাজপথে।
ফখরুল বলেন, আজ আওয়ামী লীগ বর্গীর রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরির ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা- এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য। দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে তিনি বলেন, সব টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক সংকট, ডলারের সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু তখন মনে ছিল না- যখন টাকাগুলো চুরি করে পাচার করছিলেন, বিদেশে পাঠাচ্ছিলেন, তখন মনে ছিল না।
ফখরুল বলেন, এ সরকার দুর্নীতি করেনি, এমন একটা জায়গা দেখান। একটা চাকরিও কি তারা দিয়েছে?। দিয়েছে তবে সেটি আওয়ামী লীগের ছেলেদের। ২০ লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছে। বিনা পয়সার সার দেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু আমাদের থেকে তিন গুণ বেশি দামের সার দিচ্ছেন।

বরিশালে সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে শেষপর্যন্ত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। এই সমাবেশ ঘিরে ডাকা হয় একের পর এক পরিবহন ধর্মঘট। শহরের প্রবেশপথে বাধা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। তারপরও সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) জনতার ঢল নামে। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে ১১টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী, ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাবিব উন-নবী সোহেলসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
সমাবেশে প্রধান বক্তা মির্জা আব্বাস বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ। তাই লাইভ টেলিকাস্ট নেই। রাজপথ, রেলপথ, আকাশপথ সবকিছুই বন্ধ। তারপরও আজ গোটা বরিশাল শহর জনসভার শহর, মিছিলের শহর। তাহলে সব বন্ধ করে কী লাভ হলো? সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে বরিশালে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, ইভিএমে নির্বাচন নয়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন, আর ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচনে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। পুলিশ-র‌্যাব-সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে এখন টিকে রয়েছে। আগামী দিনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ড. মঈন খান বলেন, বরিশালের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কাকে বলে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দুর্বিষহ করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ যা বলে তা করে না। আর যা করে তা বলে না। সুস্থ রাজনীতি নেই, ব্যাংকে টাকা নেই। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে একজন পরারষ্ট্রমন্ত্রী আছেন তিনি ভারতে গিয়ে এই সরকারকে বহাল রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। মানুষ কষ্টে আছে, না খেয়ে আছে তার কোনো খোঁজ রাখে না। অথচ ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে। সেলিমা রহমান বলেন, ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে একের পর এক মামলা দিয়েও বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না; এর প্রমাণ আজকের জনসমুদ্র।
হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, এ সরকার থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চাল ও গমের দাম সেঞ্চুরি করবে। দিনের ভোট রাতে করা যায়। কিন্তু এভাবে জনসমুদ্রে পরিণত করা যায় না।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সরকারি দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রত্যেকটি জিনিসের পয়েন্টে পয়েন্টে হিসাব করা হবে। জনগণের আদালতে সবকিছুর বিচার হবে।
এ সময় সমাবেশে অংশ নেয়া হাজার হাজার নেতাকর্মী সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেয়। সেই সঙ্গে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়