৪০তম বিসিএস : নন-ক্যাডারদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ মোমবাতি প্রজ্বালন

আগের সংবাদ

ঝুলে গেল সমন্বিত তিস্তা প্রকল্প : ভূরাজনৈতিক চাপের কারণে এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে আগ্রহ হারিয়েছে সরকার, এখনো হাল ছাড়েনি চীন

পরের সংবাদ

পুলিশের গিনিপিগ হতভাগ্য বিড়াল : কার নির্দেশে এ পরীক্ষা জানেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে একটি বিড়ালকে ‘গিনিপিগ’ বানিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ। গবেষক, আইনজীবী ও প্রাণী সংরক্ষণে যারা কাজ করেন- তারা বলছেন, এমন ঘটনা প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯’র সুস্পষ্ট ব্যত্যয়। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের মতে, চিকিৎসা গবেষণায়ও প্রাণীর ব্যবহার করতে হলে কয়েক স্তরের নীতিগত অনুমতি নিতে হয়। মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে একটি বিড়ালকে ব্যবহার করা হয়েছে। তারা এর জন্য কার কাছ থেকে নীতিগত অনুমোদন নিয়েছে? সমালোচনার মুখে বিব্রত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। কার নির্দেশে এমন ঘটনা ঘটানো হলো সেটিও জানেন না তারা।
এ প্রসঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী ভোরের কাগজকে বলেন, এটি একটি পরীক্ষামূলক কাজ। যদি এমন কাজ করতেই হয় তবে পুলিশের এথিক্স (নৈতিকতা বিষয়ক) কমিটি থাকা উচিত। তাদের এই কাজটি নীতিগত কিনা- তা ওই কমিটি নির্ধারণ করবে। সব মিলিয়ে একটি কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েই করা উচিত। এথিক্স কমিটির মাধ্যমে যদি না হয়ে থাকে, তাহলে এটি প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়।
প্রাণীদের অধিকার রক্ষায় যারা কাজ করছেন তাদের বক্তব্য, সিনেমায় পাখি খাওয়ার দৃশ্য দেখালেও যেখানে মামলা হয়, সেখানে একটি প্রাণীকে ২৬ মিনিট ধরে ‘বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে’ রেখে হত্যা করা হলো। এটি আইনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয়। প-ফাউন্ডেশনের (পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার) স্থপতি রাকিবুল ইসলাম এমিল তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘একটা সুস্থ বিড়ালকে গাড়ির ভেতর আটকে রেখে ধীরে ধীরে মরতে দিয়েছে পুলিশ। গাড়ির এসিতে বিষাক্ত গ্যাস আছে কিনা প্রমাণ পেতেই এই পরীক্ষা! বিড়াল মরে গিয়েছে। এক হত্যাকাণ্ড রহস্য আবিষ্কার

করতে নিজেরাই একটা প্রাণী হত্যা করল পুলিশ। সঙ্গে কোনো প্রাণী চিকিৎসকও ছিলেন না।’
প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধে সরকার ২০১৯ সালে নতুন আইন করে। যার নাম প্রাণিকল্যাণ আইন। আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রাণীকে ওষুধ অথবা বিষ মেশানো খাবার খাওয়ান বা বিষ প্রাণীর দেহে প্রয়োগ করেন, এ ধরনের কাজ করার চেষ্টা করেন বা করতে সহায়তা করেন এবং এতে প্রাণীর মৃত্যু বা স্থায়ী অঙ্গহানি অথবা স্বাভাবিক আকার ও কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়, তাহলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ আইনে সাজা হিসেবে অনধিক ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার কথা বলা আছে। সর্বোচ্চ সাজা অনধিক ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য। অ-আমলযোগ্য অপরাধ বলতে সেসব অপরাধকে বোঝায়, যা সংঘটিত হওয়ার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করতে হয়। বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মতে, রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার মডেলটাই এমন; যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়েই তো তেমন কেউ চিন্তিত নন, কুকুর-বিড়াল তো পরের কথা। বিচার ব্যবস্থাকে আমরা একটি প্রহসনের জায়গায় নিয়ে গেছি।
প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী এই ঘটনা কতটা নৈতিক সে প্রসঙ্গে সেন্টার ফর ল’ এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন ভোরের কাগজকে বলেন, আইনের একটি ধারায় বলা আছে, নিষ্ঠুরতাটি কোনো সরকার স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বা গবেষণার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকলে সেটি বৈধ। অর্থাৎ সরকারি সংস্থা সেটি বৃহত্তর স্বার্থে করতে পারেন। তবে সরকারি সংস্থা ব্যতিত যদি কেউ এই কাজটি করে থাকে তবে সেটি অপরাধ।
তবে এহেন কাজ কার নির্দেশে করা হয়েছে তা জানেন না পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে তারা বিব্রতও। এ প্রসঙ্গে গাজীপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ দক্ষিণের উপকমিশনার মাহবুব আলম ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা বিশেষ করে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই এই বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। বিভিন্ন সংবাদকর্মীরা ফোন করে এ বিষয়টি জানতে চাইছেন। শুক্রবারই আমি ঘটনাটি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, কোনো ঘটনা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আমাদের একটি প্রক্রিয়া আছে। বিভিন্ন ধাপে এই কাজটি করতে হয়। আমরা এখনো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট পাইনি। বাতাসে বিষাক্ত কিছু হলে সেক্ষেত্রে আমাদের পদ্ধতি কি হবে সেটি নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু বিড়াল দিয়ে পরীক্ষা, পাখি দিয়ে পরীক্ষা- এগুলো কার মস্তিষ্ক থেকে প্রসূত তা আল্লাহ ছাড়া বলা যাবে না।
তাহলে এই পদ্ধতি কার্যকর করা হলো কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনুসন্ধানের কাজ এখনো চলছে। ভিসেরা ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা কোর্টে পাঠাই। এই রিপোর্ট কী কোর্টে উপস্থাপন করা যাবে? কিছু লিখতে বা বলতে তো ন্যূনতম জ্ঞান থাকতে হয়। আমি খুবই বিব্রত। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়েছেন। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বহির্ভূত একটি বিষয়।
প্রসঙ্গত; গত ১৮ আগস্ট ভোরে গাজীপুর নগরের খাইলকুর এলাকায় প্রাইভেট কার থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মুখ দিয়ে সামান্য লালা বের হওয়া ছাড়া কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ঘটনাটি থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করেছেন। কিন্তু তারা কোনো সূত্র খুঁজে পাননি। এখনো পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও পাওয়া যায়নি। স¤প্রতি গাড়িটির ভেতরে একটি বিড়াল রেখে দরজা বন্ধ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ছেড়ে বিষয়টি পরীক্ষা করে স্থানীয় পুলিশ। তাতে দেখা যায়, বিড়ালটি আধা ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে মারা গেছে। এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওই দম্পতির মৃত্যুর কারণ গাড়ির এসির বিষাক্ত গ্যাস। তবে পুলিশের এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন মামলার বাদী নিহত স্কুলশিক্ষক জিয়াউর রহমানের বড় ভাই আতিকুর রহমান। তার মতে, পুলিশের এই ‘বিড়াল ব্যাখ্যা’র কোনো ভিত্তি নেই। পুলিশ তাদের তদন্ত সঠিকভাবে করতে না পারায় এমন ব্যখ্যা দিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়