নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

রাণীনগরে গাড়ল পালনে ভাগ্য খুলেছে মান্নানের : সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন খামার

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : নওগাঁর রাণীনগরে গাড়লের খামার করে সাড়া ফেলেছেন আব্দুল মান্নান। গাড়ল পালনে তার ভাগ্যের দুয়ারও খুলেছে। তার দেখাদেখি লাভজনক এই পশু পালনে ঝুঁকছেন অনেকেই।
চাকরির পেছনে না ছুটে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া, দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ ও বেকার মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আব্দুল মান্নান ২০১৭ সালে উপজেলার মালশন গ্রামের মালতিপুকুর নামক স্থানে ১৭ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন আমিন হাসান এগ্রো লিমিটেড নামে এক সমন্বিত খামার। এই খামারে বর্তমানে ছোট-বড় ৭৫টি গাড়ল রয়েছে। এর পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণ, দেশি হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন, মাছ চাষ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির বাগানও রয়েছে। বর্তমানে মান্নানের খামারে ১২ জন বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
গাড়ল দেখতে ভেড়ার মতোই। জীবনচক্রও এক। তবে ভেড়ার চেয়ে আকারে বেশ বড়, মাংসের পরিমাণও প্রায় দ্বিগুণ। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ‘গাড়ল’। ভেড়া পালনের সমান খরচে গাড়ল পালনে বেশি লাভ। তাই উপজেলার অনেকে এখন গাড়ল পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। প্রতিদিনই উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগ্রহী ব্যক্তিরা মান্নানের খামার দেখতে আসছেন এবং তারা পরামর্শ নিচ্ছেন। এরইমধ্যে মান্নানের দেখাদেখি আশপাশের গ্রামে ছোট-বড় ১৬টি নতুন খামার তৈরি হয়েছে। ওই সব খামারে কেউ গাড়ল, কেউ গরু, কেউ ছাগল, কেউ মাছ আবার কেউ কেউ দেশি প্রজাতির হাঁস-মুরগি পালন করছেন। উপজেলার মালশন গ্রামের মৃত আব্বাস আলী মোল্লার ছেলে আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির ইচ্ছা থেকেই গাড়লের খামার গড়ে তোলা। প্রথম দিকে একটু লোকসান গুনতে হলেও এখন অত্যন্ত লাভজনক। এখানকার খামারিদের কাছ থেকে গাড়লের বাচ্চা কিনে নিয়ে নতুন নতুন খামার গড়ে তুলছেন অনেকে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উদ্যোক্তারা খামার থেকেই বাচ্চা কিনে নিয়ে যান। শিশু গাড়লের প্রতিটি ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া মাংসের চাহিদার জন্য বিক্রি হয় আরো অনেক গাড়ল। মাংস বিক্রির উপযুক্ত গাড়লের চেয়ে বাচ্চা বিক্রি লাভজনক। স্থানীয় পশুর হাটে গাড়ল বিক্রি হয়। তবে বাচ্চা গাড়ল বিক্রি হয় খামার থেকেই।
তিনি আরো জানান, সব উপকরণের দাম লাগামহীন বৃদ্ধি পাওয়ায় আস্তে আস্তে লাভ হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও খামারিদের সব উপকরণ কম দামে দিতে হবে। খামারিদের তালিকাভুক্ত করে প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে। তবেই নতুন করে খামার সৃজন হবে, পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার যুবকরাও ছোট ছোট খামার তৈরিতে ঝুঁকে পড়বে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত হবে।
উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের আমিনুর রহমান (২৮) পেশায় ছিলেন গাড়িচালক। মান্নানের দেখাদেখি পেশা বদল করে গত দুই বছর ধরে তিনি গাড়ল পালন করছেন। শুধু তিনিই নন, মালশন গ্রামের আশপাশে প্রায় ১৬টি খামার তৈরি হয়েছে। একজন রাখালকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই গাড়ল পরিচর্যা করেন তিনি। গাড়ল পালন করে প্রতি বছর তার আয় লাখ টাকারও বেশি, যা দিয়ে দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়া আর সংসারের অন্যান্য খরচ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই চালিয়ে যাচ্ছেন আমিনুর।
গিরিগ্রামের খামারি খোরশেদ আলম (৫০) জানান, গাড়ল বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার ২ থেকে ৩টি বাচ্চা প্রসব করে মা গাড়ল। দেশি ভেড়ার চেয়ে গাড়ল আকারে প্রায় দ্বিগুণ। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি গাড়লের ৩৫-৫০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। দামও বেশি এবং এর মাংস খেতে সুস্বাদু। যেখানে একটি দেশি ভেড়ার ২০-২৫ কেজি মাংস মেলে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি গাড়ল ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। খাবার, আবাস ও পালন পদ্ধতি দেশি ভেড়ার মতোই।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কামরুন নাহার জানান, উপজেলায় একমাত্র মান্নানই বাণিজ্যিকভাবে গাড়লের খামার গড়েছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে মান্নানকে সবসময় সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আরো বড় ধরনের সহযোগিতা পেলে খামারকে আরো সম্প্রসারিত করতে মান্নানের অনেক সহজ হতো।

তিনি বলেন, দেশে ভেড়ার উন্নত জাত তৈরির বিষয়ে কোনো গবেষণা কিংবা প্রকল্প নেই। তাই চাষিদের এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে পুরো উপজেলায় গাড়লের জাত ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি জাত উন্নয়ন ও পালন বিষয়ে আগ্রহী খামারি কিংবা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ জাত সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিতে আরো সুবাতাস বয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়