নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

টার্গেট ৪ ডিসেম্বর : বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে চমক দেখানোর প্রস্তুতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বাংলাদেশের রাজনীতিতে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ভূমিকার বিষয়টি বিবেচনা করেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম জনসভার জন্য চট্টগ্রামকেই বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আগামী ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সেই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করতে দীর্ঘ এক দশক পর পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় আসছেন তিনি। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ উপস্থিতি ও বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে চমক দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। এই জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহউদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ডে চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। চট্টগ্রামের এই সমাবেশ থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে দলটি। এর প্রায় দুই মাসের কাছাকাছি সময়ের (৫২ দিন পর) ব্যবধানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একই মাঠে জনসভা করতে যাচ্ছে। তাই বিপুল জনসমাগমের টার্গেট নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহের মধ্যে নানা ধরনের কোন্দল এবং কোন্দলের কারণে নানা সময়েই সংঘর্ষ-হতাহতের ঘটনা ঘটলেও নেতারা আশা করছেন, ডিসেম্বরে দলের সভানেত্রীর উপস্থিতিতে সমাবেশের আগে এসব কোন্দলের অবসান ঘটিয়ে অঅগামী ৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল হবে। আর এই সমাবেশকে কেন্দ্র করেই নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠবেন এ আশা নিয়ে সমাবেশকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। জনসভায় বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিতে তারা আগামী ৯ নভেম্বর নগরীর কাজির দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে যৌথ প্রতিনিধি সভার আয়োজন করেছেন। প্রতিনিধি সভায় দুই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, নগরের ৪৩ ওয়ার্ড ও ১৫ থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়ক, জেলার ১৯০টি ইউনিয়ন, ১২টি পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ স¤পাদক, আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৫ উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদক, আওয়ামী লীগের আট অঙ্গ ও দুই সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদকরা মিলে প্রায় আট শতাধিক নেতা উপস্থিত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের মাঠে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। তার ঠিক ১০ বছর ৯ মাস পর আগামী ৪ ডিসেম্বর একই মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন শেখ হাসিনা। তার আগমনে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিপুল লোকসমাগম ঘটিয়ে চমক দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্য ও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলীয় প্রধানের সামনে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত অক্টোবরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে জানান।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে প্রথম জনসভাটি সফল করতে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভার আয়োজন করা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামের নেতাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের অনেক উন্নয়ন করেছেন। ইতোমধ্যে যার সুফল পাচ্ছে চট্টগ্রামবাসী। সুফল পাবে আগামীতেও। এসব নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যেও আনন্দ-উৎসব সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ৯ নভেম্বর আমরা যৌথ প্রতিনিধি সভা করব। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা দিকনির্দেশনা দিবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভাটি স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা করতে চাইছি। এই সমাবেশকে সফল করতে প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় ওয়ার্কিং কমিটির সভা করা হবে। তিনি আরো বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এ জনসভাটি চট্টগ্রামের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কথামতো চট্টগ্রামের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এসব প্রকল্পে চট্টগ্রামের দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, প্রস্তুতিমূলক সভা করতে গিয়ে দেখেছি, নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো মতপার্থক্য থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে সবাই আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির পর প্রথমবারের মতো জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম থেকেই জনসভা শুরু করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই জনসভাকে স্মরণকালের বড় জনসভায় রূপ দেয়ার ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিবেন। যে ভাষণে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও নির্বাচনের ইঙ্গিত থাকবে। জনসভা সফল করতে জেলার প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে মিটিং করা হচ্ছে।
তবে চট্টগ্রামের আওয়মী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিরাজমান দীর্ঘদিনের বিরোধ-দ্ব›েদ্বর জেরে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেন্দ্রীয় মহাসমাবেশকে ঘিরে গত বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সঙ্গে সমন্বয় সভার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। বঙ্গবন্ধু হলে সভা চলার সময় আধিপত্য বিস্তার ও পক্ষে-বিপক্ষে স্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রেস ক্লাবের নিচে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পাঁচজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয় বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর বিকালে নগরীর নন্দনকাননে আয়োজিত এক ছাত্রলীগ নেতার শোকসভা দলীয় কোন্দল ও আধিপত্যের জেরে হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। চাপা উত্তেজনা রয়েছে এসব নিয়ে। এছাড়া চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিবদমান দ্ব›দ্ব-বিরোধের কারণে বিভিন্ন এলাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ-সংঘাত লেগেই আছে। এর মধ্যে পলোগ্রাউন্ডে শেখ হাসিনার জনসভায় দলীয় কোন্দলের জেরে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হলেও দলীয় নেতারা বলছেন, নিজেদের মধ্যে দ্ব›দ্ব বা ছোটখাটো মতপার্থক্য থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে সবাই আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে অনেক হাঁকডাক করে ১-৪ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করা হলেও আপাতত এসব সম্মেলন হচ্ছে না। ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাম্মেলনের দিন ধার্য করা হয়েছিল। সম্মেলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ৪ ডিসেম্বর সম্মেলন না হলেও মহাসমাবেশের পরপরই সম্মেলন হবে। আগামী ৯ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। সেই তারিখ হতে পারে ৭ বা ৮ ডিসেম্বর। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৮ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়