নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

‘জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ’ : রাজনীতির খেলা’য় ইমরান খানের শ্বাসরুদ্ধকর ইনিংস

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : প্রায় ১৫ বছর আগে ২০০৭ সালে এমনি এক হালকা শীতের বিকালে নির্বাচনের ঠিক কয়েকদিন আগে একটি র‌্যালিতে গুলি হয়েছিল। তখনকার শিকার লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টো সেদিন নিহত হয়েছিলেন। এবারো যেন একই ‘খেলা’র পুনরাবৃত্তি ঘটল পাকিস্তানে। তবে শিকার হাতছাড়া হয়। বন্দুক হামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী পায়ে গুলি খেয়েও বেঁচে যান। এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, ইমরান খান পাকিস্তানের শক্তিশালী জেনারেলদের বিরুদ্ধে জনসমর্থন জোগাড় করার জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রচারণা শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার তাকে হত্যা চেষ্টার পর উভয় পক্ষ লিপ্ত হয়েছে এক শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক খেলায়। যে খেলার পরিণতির ওপর নির্ভর করছে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ।
বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান : সারাদেশের শহরগুলোতে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। সেইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমরানের প্রতি সহানুভূতির ঢেউ উঠেছে। ১৯৪৭ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় অর্ধেক সময় ধরে সরাসরি পাকিস্তান শাসন করেছে যে সেনাবাহিনী, তাদের বিরুদ্ধেও চলছে সামাজিক বিশ্লেষণ। পাঞ্জাব বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের বর্জন চলছে। রাস্তায় রাস্তায় চলছে আগুন জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ। বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সড়ক। অনেক সরকারি দপ্তর অবরোধ করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের এস রাজারতœম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক বলছেন, সামনের সময়টা বেশ রক্তাক্ত হতে পারে।
হিসাবের গরমিল : বৃহস্পতিবারের ঘটনা সামরিক সংস্থার হিসাবকেও জটিল করে তোলে; যারা ২০১৮ সালে ইমরান খানের ক্ষমতায় উত্থানকে সমর্থন করেছিল। পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত টিসিএ রাঘবন বলেছেন, পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এমন পরিস্থিতি চাইবে না- যেখানে বিশাল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। সুতরাং প্রতিবাদ

ুবিক্ষোভ যদি আরো ফুলে ওঠে, সেনাবাহিনী সরকারকে বলতে পারে ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। এই অস্থিরতার সময়টি সেনাবাহিনীর জন্য সংবেদনশীল, কারণ সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এই মাসেই অবসর নিতে চলেছেন।
অভিযোগের তীর : স¤প্রতি ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন সামরিক গুপ্তচর শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ অঞ্জুম।

অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে ইমরান বলেছিলেন, চাইলে আইএসআইয়ের মুখোশ খুলে দিতে পারতাম। কিন্তু দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই কাজ করিনি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে মোটেও ভালোভাবে নেয়নি আইএসআই। সেদিনের হামলা সেই বৈরিতার ফল কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পিটিআইয়ের তরফে সরাসরি আইএসআইএর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সল নাসিরের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। দলের নেতাদের অভিযোগ, ইমরানকে শেষ করে দিতেই অন্যায়ভাবে পদোন্নতি দিয়ে ফয়সলকে আইএসআইতে নিয়ে আসা হয়। শ্যুটার ঠিক করা থেকে শুরু করে অস্ত্র জোগানো, হামলার পুরো পরিকল্পনাই এই সেনা অফিসারের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে দাবি করেছেন তারা। আইএসআই ছাড়াও, পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহর দিকেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন পিটিআই নেতারা। হামলার আগে এই তিন ষড়যন্ত্রী বৈঠক করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেনি আইএসআই।
পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আইএসআইএর ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুমের ডান হাত হিসেবে পরিচিত মেজর জেনারেল ফয়সল নাসির। অতি স¤প্রতি ব্রিগেডিয়ার থেকে পদোন্নতি পেয়ে এই সংস্থায় এসেছেন। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই ৩০ জন ব্রিগেডিয়ারের পদোন্নতি হয়। সেই তালিকায় ছিল ফয়সল নাসিরের নাম। পিটিআইয়ের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী একসঙ্গে ১০ জনের বেশি ব্রিগেডিয়ারের পদোন্নতি হয় না। শুধু ইমরানকে ঠেকাতেই সেই নিয়ম ভেঙে ফয়সলকে মেজর জেনারেল করা হয়। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ইমরানের ঘনিষ্ঠ নেতা শাহবাজ গিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পিটিআই নেতাদের দাবি, ইমরানকে রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করতেই এই গ্রেপ্তার। ওই ঘটনার নেপথ্যেও মেজর জেনারেল ফয়সলের হাত ছিল বলে অভিযোগ তুলেছে ইমরানের দল।
রাজনীতির ঝুঁকি : নিজের দলের ওপর রাশ থাকলেও পাকিস্তানের ‘ভাগ্যবিধাতা’ পাকসেনা কিংবা দেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইএর সঙ্গে সদ্ভাব ছিল না ইমরানের। এমনকি স্বভাববিরুদ্ধভাবে আমেরিকার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে সদ্ভাব তৈরি করছিলেন। লোকে বলে, দুই পক্ষের ষড়যন্ত্রেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন তিনি। শুধু আইএসআই কিংবা সেনাবাহিনী নয়; সে দেশের ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগেরও চক্ষুশূল তিনি। ইমরান ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না জেনেও দেশজুড়ে ‘রিয়েল ফ্রিডম’ যাত্রা শুরু করেন। যার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো শাহবাজ শরিফ বিরোধিতার আবহ তৈরি করা। ইমরানের আন্দোলন চাপ তৈরি করছিল সরকারের ওপর। সেই চাপ কাটাতেই কি নিশানা করা হলো তাকে? ভাবনায় এ বিষয়টিও এড়ায়নি।
শত্রæর অভাব নেই : রাজনীতির ময়দানে শক্রর অভাব ছিল না ইমরান খানের। তাকে রক্তচক্ষু দেখিয়েছিল তেহরিক-ই-তালিবানও (টিটিপি)। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাদের সঙ্গে আলোচনার পথে হেঁটেছিলেন ইমরান। কিন্তু লাভ হয়নি। ফলে নাশকতার আশঙ্কা বাড়ে। ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে টিটিপি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিল, কোনো ধরনের সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণার আগে পাকিস্তানের জেল থেকে তাদের বন্দি সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। এই আলোচনা চলাকালীনই ক্ষমতা হারান ইমরান। ফলে এবার তারাই কি নিশানা করল প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীকে? সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে।
জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ : জলে কুমির, ডাঙায় বাঘের সঙ্গে লড়াই করে পারবেন কি পাকিস্তানের ভাগ্যবিধাতা হয়ে উঠতে? ইমরানকে ঘিরে গোটা পাকিস্তানজুড়ে উচ্চারিত হচ্ছে- এই একই প্রশ্ন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়