নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

চলনবিলে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, বিপাকে খামারিরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : চলনবিল অঞ্চলে বন্যা, অতি বৃষ্টি, খরাসহ বৈরী আবহাওয়া এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অপরিকল্পিত স্থাপনার কারনে গোচারণভূমি ও ঘাসের জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও পশু পালনকারীরা। এছাড়া ভাটি এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট বেশি হওয়ায় এ এলাকার গো-খামারিরা চলনবিল এলাকা থেকে বেশি দামে খড় কিনে নৌকা ও সড়ক পথে নিয়ে যাচ্ছেন ভাটির দিকে।
এদিকে মাঠ থেকে কাঁচা ঘাস সংগ্রহ করতে না পেরে চলনবিল এলাকার গরু-মহিষের মালিকদের খড়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। খড়ের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেকে। গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে গরু-মহিষকে খাওয়ানো হচ্ছে কচুরিপানাসহ কলার গাছ। জানা যায়, চলনবিলের পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, তাড়াশ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা এখনো বর্ষার পানিতে ডুবে আছে। মাঠের পর মাঠ এখনো পানির নিচে। এতে জমিতে কেউ ঘাস চাষ করতে পারছেন না। এর ফলে এ অঞ্চলে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও পশু পালনকারীরা।
এদিকে গো-খাদ্যের সংকটের কারণে স্থানীয় খড় ব্যবসায়ীরা বোরো ধানের খড় রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ দেশের উঁচু এলাকার জেলাগুলো থেকে ক্রয় করে সড়ক ও নৌপথে নিয়ে আসছেন। এতে চলনবিল অঞ্চলে খড়ের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলছে। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রতি ১শ আঁটি ধানের খড় সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে গো-খাদ্যের বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা, কলার গাছসহ বিভিন্ন গাছের লতা-পাতা খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু। পাশাপাশি গাভির দুধ উৎপাদনের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত গাভি মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার তিনটি গরুর ফার্ম রয়েছে। প্রতি মণ খড় দ্বিগুন দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। খইল ভূসির দামও অনেক বেড়েছে। বাধ্য হয়ে বিল ও নদী থেকে কচুরিপানা এনে খাওয়াতে হচ্ছে। এতে গবাদি পশু মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরুর দুধ উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। গুরুদাসপুর থানা সদরের বঙ্গবন্ধু কলেজ রোডের উত্তর নারিবাড়ির খামারি আব্দুর রহিম খান বলেন, আমার খামারে অনেকগুলো গরু ও ছাগল ছিল। কিন্তু গোখাদ্যের দাম বাড়ার কারনে লোকসান গুনতে হচ্ছে। যার কারণে প্রায় সবগুলোই বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে আমার খামারে ১০টি বিদেশি ছাগল আর মাত্র ৫টি গরু রেখেছি।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অনেক খামারি খাদ্য সংকটের কারণে কচুরিপানা খাওয়াচ্ছেন বলে শুনেছি। প্রতি বছর বন্যার কারণে চলনবিল এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। তবে গবাদি পশুকে কচুরিপানা বা অন্যান্য গাছপালার পাতা না খাওয়ানোই ভালো। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গোচারণভূমি বন্যা কবলিত হওয়ায় খামারিদের ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে খামারিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে শুধু গুরুদাসপুরেই গরুর খামার রয়েছে ৭২টি। মোট গরুর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার। মোট ছাগলের বাণিজিক খামার রয়েছে ৪৯টি, ছাগলের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার। মহিষের সংখ্যা রয়েছে ৪শ ২০টি। ভেড়ার ১১টি খামারে মোট ৪২০টি ভেড়া রয়েছে।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মণ, নতুন ঘরবাড়ি নির্মান, বৈরী আবহাওয়ার আর নগরায়নের ফলে গোচারণভূমি কমে আসছে। তবে খামারিরা ব্যক্তি পর্যায়ে উন্নতমানের ঘাস চাষ করে তাদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছেন। তাছাড়াও নাটোর, সিরাজঞ্জ, পাবনা জেলার বিভিন্ন হাটে কাঁচা ঘাসের হাট বসে। সেখান থেকে খামারিরা ঘাস ক্রয় করে থাকে। যেটি আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই ব্যবস্থা করেছি। এতে কৃষক এবং খামারিরা উভয়ই উপকৃত হচ্ছে। এছাড়াও গবাদি পশুর জন্য ৯০ শতাংশ শুকনো এবং ১০ শতাংশ কাঁচা ঘসের প্রয়োজন হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়