নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে সেমিনারে শিক্ষাবিদরা : মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর তাগিদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বাংলাদেশে শিক্ষার হারের ক্ষেত্রে বেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে একটি বড় প্রশ্ন রয়েছে। শ্রেণিবিভক্ত এই সমাজে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ সবার জন্য সমান নয়। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে বৈষম্যমূলক একটি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে হার বাড়লেও তা গুণগত মানের বিচারে এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে না পারলে এবং শিক্ষাকে শুধুমাত্র অর্থ আয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলে সেই শিক্ষা থেকে কোনো মানবিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারি সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারবে না। তাই মুক্তিযদ্ধের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৃণমূল পর্যায় থেকে অভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করাটি জরুরি।
শুক্রবার নগরের নন্দনকাননে শিশুতোষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ফুলকি’র এ কে খান স্মৃতি মিলনায়তনে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর এডুকেশন এন্ড রিসার্চের আয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আদর্শ অর্জনে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক সেমিনারে শিক্ষাবিদ ও আলোচকরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
সংগঠনটির মহাপরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাবেক সুপারনিউমারি প্রফেসর ড. ইমাম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ৫ জন শিক্ষাবিদ তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কবি-সাংবাদিক-শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন ‘শিশুর বিকাশ ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা’, যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূধন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. স ম রেজাউল করিম ‘ গুণগত মানসম্মত শিক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন’, বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষক নেতা কানাই দাশ ‘মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষাদর্শন ও মাধ্যমিক শিক্ষার চালচিত্র’, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবদুল আউয়াল বিশ্বাস ‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য গুণগত শিক্ষা’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিন পর্বে বিভক্ত এ সেমিনারে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাসনিম ইমামের উপস্থাপনায় প্রাবন্ধিক-গবেষক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ, ইউল্যাবের পরিচালক ড. ফাহিম হাসান শাহেদ, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ ড. সুদীপ্তা দত্ত, শিক্ষকনেতা ও বিজয় সরণি কলেজ, চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সমাজ গবেষক ও লেখক খন্দকার শাখাওয়াত আলী, রাঙ্গুনিয়া হাসিনা জামাল ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শীলা দাশগুপ্তা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, নর্থ আমেরিকার আহ্বায়ক আবু জাফর মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রাবন্ধিক-শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন বলেন, স্কুল থেকে শিক্ষা চলে গেছে কোচিং সেন্টারে। নোট আর গাইড বইই যেন ভরসা। শিক্ষাটা পরীক্ষামুখী হয়ে গেছে। শিক্ষা জিনিসটা স্কুল থেকে কোচিং সেন্টারে গেছে। বইয়ের চেয়ে নোট বই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষকের চেয়ে কোর্স গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। লেখাপড়ার চেয়ে পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। জ্ঞানের চেয়ে সনদ পত্রের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। এই জায়গা থেকে বের হতে হবে। আবুল মোমেন শিশুর শারীরিক-মানসিক-সাংস্কৃতিক ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সর্বজনীন-বিজ্ঞানমনষ্ক একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর তাগিদ দেন।
শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মাহবুবুল হক ‘শিক্ষা কোনো বাণিজ্য নয়, শিক্ষা সবার অধিকার’ এই স্লোগানটিকে প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষা জীবনের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির মধ্যে যে চরম সুবিধাবাদিতা প্রবেশ করেছে তার সমালোচনা করে সে জায়গা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি প্রাইভেট ও কোচিং ব্যবসার মধ্য দিয়ে অধিক টাকা উপার্জনের প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বানও জানান।
শিক্ষকনেতা কানাইদাশ বলেন, একটি জ্ঞানভিত্তিক বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ গড়ে তোলার জন্য, যুক্তিনির্ভর সমাজ মানস গড়ে তোলার জন্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ ও রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা যেমন অপরিহাযর্, তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় কর্নধারদের শিক্ষাচিন্তা। ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে মুক্তিযুদ্ধের সেই শিক্ষাদর্শ রয়েছে। ড. আবদুল আউয়াল বলেন, দেশে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তোলা সব শিক্ষকের জাতীয় পবিত্র দায়িত্ব। একই সঙ্গে তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্বলিত জ্ঞানদানের মধ্য দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
ড. খ ম রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষা যে কোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ও টেকসই সমাজ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে, সেখানে শিক্ষকই হলেন প্রধান চালিকাশক্তি। শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে এ পেশায় আনা, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের পেশাগত মান উন্নয়নে শুরুতেই যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণ ও অব্যাহত রাখতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়