নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

আওয়ামী লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত : বিদ্রোহীরা দলে থাকলেও পদ-মনোনয়ন পাবেন না

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ৫৯টি জেলা পরিষদের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় ২৫ জনসহ ৪৯টিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। দলের ‘বিদ্রোহী’ নেতারা জয় পেয়েছেন ৬টিতে। প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো ইউনিয়ন পরিষদে সাত দফায় নির্বাচনে ১ হাজার ৬৯৪টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন ‘বিদ্রোহী প্রার্থীরা’। গত জানুয়ারিতে শেষ হওয়া ওই নির্বাচনে দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। যার অধিকাশংই হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলটির ১৭০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী জয় পান। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন, পরে দলীয়প্রধানের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন- তাদের আবেদনগুলো বিবেচনা করে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে ওই নেতাদের দলীয় কোনো পদে দায়িত্ব না দেয়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকমান্ড। ঘরের শত্রæ বিভীষণদের কোনো নির্বাচনেও মনোনয়ন দেয়া হবে না। সেইসঙ্গে দলীয় এমপি যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এবং নৌকার প্রার্থীকে হারাতে ভূমিকা রেখেছেন- তাদের উচিত শিক্ষা দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সবশেষ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী বৈঠক (২৮ সেপ্টেম্বর) এবং গত বুধবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের (এএলপিপি) বৈঠকে এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুটি বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, যেসব এমপি-মন্ত্রী স্থানীয় সরকারের ভোটে নৌকার বিরোধিতা করছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের কপালে নৌকা জুটবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কারা কারা নৌকা ডুবিয়েছেন, আমার প্রার্থীকে পছন্দ হয়নি বলে বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন- সব তথ্য আমার কাছে আছে। তারা উচিত শিক্ষা পাবেন। আগামী নির্বাচনে তাদের দলের মনোনয়ন না দেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন সংসদনেতা। সভায় এমপিরা তৃণমূলে ভয়াবহ কোন্দলের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। তারা বলেন, আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রæ। আওয়ামী লীগকে হারাতে বিএনপি-জামায়াত প্রয়োজন হয় না, আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগকে হারায়। নৌকা নিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে নৌকার এমপির বিরোধিতা করেন।
জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে দলীয় সবশেষ অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন একজন কেন্দ্রীয় নেতা। জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে বিবেচনা করা হবে। তবে যেসব মন্ত্রী-এমপি বা কেন্দ্রীয় নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেন- তাদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভোরের কাগজকে বলেন, কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে অবশ্যই তা গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া হয় এবং হবে। তবে, রাজনৈতিক জীবনে একবার দুইবার মানুষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুল করতে পারেন। সেটি অপরাধের পর্যায়ে পড়লে এবং বারবার করলে নিঃসন্দেহে তিনি মনোনয়নের অযোগ্য হবেন।
দলীয়প্রধানের বরাত দিয়ে নেতারা জানিয়েছেন, প্রতিটি কাউন্সিলে পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করা হবে। আগামী নির্বাচনে বিতর্কিতরা মনোনয়ন পাবেন না। জরিপ চলছে। সবদিক বিবেচনায় প্রার্থী দেয়া হবে। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি, তৃণমূলে সংযোগ নেই, তারা মনোনয়ন পাবেন না। আগামী নির্বাচন কঠিন হবে। বিএনপি যতই বলুক, নির্বাচনে অংশ নেবে না, সঠিক সময়ে পুরো শক্তি নিয়েই ভোটে নামবে বিএনপি। প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচনে জিতে আসার মতো দক্ষদেরই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অতীতে যেসব নেতা দলের বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন, তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে তাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে প্রতিটি সম্মেলনে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মনোনয়ন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয়প্রধান।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ভোরের কাগজকে বলেন, বিদ্রোহীদের ছাড় না দিতে সবসময় বলা হয়। আমাদের কাছে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, ত্যাগী-দক্ষ-পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করে তৃণমূল কমিটি করার জন্য। দলীয়শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের শাস্তি না হলে এদের দৌরাত্ম্য কমবে না। আমাদের আস্থা ও ভরসা, বরাবরের মতোই আগামী কাউন্সিল ও নির্বাচনে দলীয়প্রধান সুসময়ের বন্ধুদের বাদ দিয়ে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়