বাংলা একাডেমির তিনটি পুরস্কার ঘোষণা

আগের সংবাদ

মহাসড়কে পদে পদে মরণফাঁদ :

পরের সংবাদ

সীতাকুণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর : ইউএনও-এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ ইউসুফ খাঁন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : সীতাকুণ্ডে ভূমি আছে, ঘর আছে, আছে দোকানও। এরপরও ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন দুজন। তারা হলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেনের গাড়িচালক বেলাল হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলমের গৃহপরিচারিকা পারভীন আক্তার। উপজেলার পৌর এলাকায় মাত্র ৬টি ঘর বরাদ্দ দিতে গিয়ে ইউএনও-এসিল্যান্ডের এমন স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, গত ২১ জুলাই সারাদেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই তালিকায় সীতাকুণ্ড উপজেলার পৌরসভার মহাদেবপুর এলাকায় জমিসহ ৬টি সেমিপাকা ঘর ৬টি পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এই ৬টি ঘরের মধ্যে একটি ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক বেলাল হোসেন সম্রাটের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার, একটি এসিল্যান্ড মো. আশরাফুল আলমের গৃহকর্মী পারভিন আক্তার ও একটি নন্দ রানি দাসকে দেয়া হয়। অপর ৩টি ঘর দেয়া হয় রোসন আরা বেগম, হাসিনা আক্তার ও নাছিমা বেগমকে।
শেষের ৩ জন আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের আগে থেকেই ওই জমিতে বসবাস করে আসছিলেন। সরকারের এই খাস জমিটি তারা ৩ জন দখলদারের কাছ থেকে দখলস্বত্বে মোটা অঙ্কের টাকায় কিনেছিলেন বলে জানান।
ইউএনওর গাড়িচালক বেলাল হোসেন সম্রাটের স্ত্রীর নামে ঘর বরাদ্দের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে এলাকায় নানা সমালোচনার জন্ম দেয়। কারণ বেলালের যেমন পৈতৃক বাড়ি রয়েছে তেমনি তার স্ত্রী তাসলিমারও রয়েছে পৈতৃক সম্পত্তি।
এছাড়া গত কয়েক মাস আগে বেলালের সহোদর দুই ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করতে সীতাকুণ্ড উপজেলা গেটের মতো জমজমাট ব্যবসায়িক কেন্দ্রে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে একটি দোকান নির্মাণেরও সুযোগ করে দেন ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন, যা শুভ হোটেল নামে চলছে। এছাড়া ইউএনও তার অস্থায়ী গাড়িচালক বেলালকে স্ত্রী-পরিজনসহ বসবাসের স্থান করে দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের ভেতরে অবস্থিত সরকারি কর্মকর্তার জন্য বরাদ্দকৃত বাসায়। এ নিয়েও উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে।
একদিকে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে ভাইদের জন্য দোকান অন্যদিকে স্ত্রীর নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ। এ যেন বেলাল ও বেলালের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়ার অঘোষিত এজেন্ডা।
অথচ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী বেলালের সীতাকুণ্ডের মুরাদপুরের দোয়াজি পাড়া এলাকায় নিজস্ব জমিতে রয়েছে সেমিপাকা পৈতৃক বাড়ি, আছে দোকান, গাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া এসিল্যান্ড মো. আশরাফুল আলমের গৃহপরিচারিকা পারভীন আক্তারের সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নে রয়েছে পৈতৃক সম্পত্তি। তার স্বামীর বাড়িও আছে। বড় কর্তার গৃহপরিচারিকা হওয়ার সুবাদে সেই বেলালের একই কায়দায় উপজেলার সামনে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে স্বামীকে দোকান নির্মাণ করে দিয়েছেন পারভীন আক্তার। বেলাল ঘর পেয়েছেন স্ত্রীর নামে, আর পারভীন আক্তার পেয়েছেন স্বামীর নামে দোকান। মান্নান স্টোর নামে চলছে দোকানটি। আর সেই শুভ হোটেল ও মান্নান স্টোরের অবস্থানও পাশাপাশি।
এমনকি আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাদের ঘর দুটিও সর্বাধিক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সরজমিনে গত শুক্রবার সীতাকুণ্ডের মহাদেবপুর ইকোপার্ক সড়কে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, তাসলিমা আক্তারের নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরটি তালাবদ্ধ এবং তারা সেখানে থাকেন না বলে জানান প্রতিবেশীরা।
বেলাল ভোরের কাগজ প্রতিনিধিকে তার নিজস্ব ঘরবাড়ি থাকার কথা অস্বীকার করেছেন কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন তার পৈতৃক জমিজমাসহ সেমিপাকা বাড়ি ও সম্পত্তি আছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে উপস্থিত থাকা এসিল্যান্ডের গৃহপরিচারিকা পারভীন আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, মুরাদপুরে তার পৈতৃক অনেক সম্পত্তি রয়েছে। তবে সেসব সম্পত্তি নিয়ে নানা ঝামেলা পোহাচ্ছেন তিনি। সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম (এসিল্যান্ড) সব দায় ইউপি চেয়ারম্যানের ঘাড়ে চাপিয়ে বলেন, চেয়ারম্যানরা আমাদের যাদের ভূমিহীন সনদ দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ঘর দেয়া হয়েছে। এসিল্যান্ড অফিসের সামনে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে গৃহপরিচারিকার দোকান নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার বিষয় না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিদের দেয়া ভূমিহীন সনদ দেখে আমরা গৃহহীন বাছাই করেছি। সেক্ষেত্রে বেলালের নিজস্ব বা পৈতৃক জায়গা নেই। তাই তাকে দেয়া হয়েছে। ইউএনও জানান, তিনি বেলালকে ঘর দিয়েছেন কিন্তু ঘর দেখা গেছে তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের নামে।
যে এলাকায় এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের অবস্থান সেই পৌর এলাকার জনপ্রতিনিধি ও মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম ভোরের কাগজকে জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমার এলাকায় ১২২ জন গৃহহীন, ভূমিহীন রয়েছে। যাদের কেউই এ প্রকল্পে ঘর পায়নি।
সরকারি জায়গা দখল করে গাড়িচালক বেলালের দোকান নির্মাণ বিষয়ে ইউএনও বলেন, কাউকে এরকম দোকান করার কোনো অনুমতি আমি দিইনি। যে যেদিকে খালি পেয়েছে সে সেখানে দোকান করেছে।
সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, ঘর বরাদ্দে গৃহহীনদের যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব আমার নয়।
ইউএনও-এসিল্যান্ডের কাছে গৃহহীনদের আবেদন জমা পড়লে সেগুলো থেকে বাছাই করে যাদের নাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয় তারাই ঘর পান। তিনি বলেন, কোনোরূপ অনিয়ম-স্বজনপ্রীতির সঙ্গে আমি যুক্ত নই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়