বাংলা একাডেমির তিনটি পুরস্কার ঘোষণা

আগের সংবাদ

মহাসড়কে পদে পদে মরণফাঁদ :

পরের সংবাদ

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ধুঁকছে জনবল সংকটে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মসিউর রহমান ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে প্রতিনিয়ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সাতক্ষীরা জেলার ২২ লক্ষাধিক মানুষ এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নেন। তবে জনবল সংকটে এখন ধুঁকছে হাসপাতালটি।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, হাসপাতালে উপপরিচালকসহ সার্জারি, চক্ষু, এনেসথেসিয়া, ইএনটি, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজিসহ সিনিয়র কনসালটেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ১২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। আটজন চিকিৎসকের পদ শূন্য। শুধু তাই নয়, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, চক্ষু, এনেসথেসিয়া, ইএনটি, চর্ম ও যৌন, রেডিওলজিসহ ১৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন সাতজন। বাকি ১১টি পদ শূন্য অবস্থায় চলছে বছরের পর বছর- যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
অন্যান্য যেসব শূন্যপদ- সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি, এনেসথেসিস্ট/সহকারী সার্জন, প্যাথলজি/সহকারী সার্জন, রেডিওলজিস্ট/রেডিওথেরাপিস্ট/সহ-সার্জন/সমমান, ইনডোর এমও/সহ-সার্জন, আউটডোর এমও/সহ-সার্জন, রেজিস্টার/সহ-রেজিস্টার, এমও (ব্লাড ব্যাংক)/সহ-সার্জন, এমও ফিজিওথেরাপি/সহ-সার্জন, ইমারজেন্সি এমও/সহ-সার্জন, পারফিউশনিস্ট/সহ-সার্জন, ডেন্টাল সার্জন/সহ-ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসারসহ (আয়ুর্বেদিক/হোমিও) ৫৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন। এক্ষেত্রেও ৩৪টি গুরুত্বপূর্র্ণ পদ শূন্য। জেলায় ২২ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় সামেক হাসপাতালের জনবলের চিত্রে হতাশ হয়েছে সাতক্ষীরার সচেতন মহল।
সরজমিনে দেখা গেছে, সামেক হাসপাতাল ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও বেড খালি না থাকায় প্রায় দেড় থেকে দুইশ রোগীকে ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। অত্যাধুনিক ভারী যন্ত্রাংশ থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে মারাত্মক হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রোগীরা। রোগীরা এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে স্বাস্থ্যসেবা। ইনডোরের ডাক্তারদের আউটডোর সামলাতে দেখা যায়। একেকজন চিকিৎসকের তিনটি চারটি করে দায়িত্ব পালন করতে হয়। হাসপাতালে সিনিয়র, জুনিয়র মিলে ১১ জন কনসালটেন্টকে ভর্তি ও আউটডোরসহ প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগীকে সামলাতে হয়।
হাসপাতালে কর্মরত ১১ জন চিকিৎসক অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইনডোর, আউটডোর, জরুরি বিভাগসহ ফ্লোরে থাকা রোগীদের সেবা দিতে দেখা যায়।
এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মী ৭৮ জনের বিপরীতে আছে ২২ জন, আয়া ৫০ থেকে ৬০ জনের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত থাকায় রোগীদের মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের প্রতিটি স্থান অপরিচ্ছন্ন, নোংরা। ওয়ার্ড কেবিনের বাথরুমসহ ডাক্তারদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জায়গায়ও অপরিচ্ছন্নতা লক্ষ করা যায়। এছাড়া বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে দুর্গন্ধ- যা রোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির। সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার শোতকনা গ্রামের আলম চোখের সমস্যা নিয়ে সামেক হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় বাধ্য হয়ে জুনিয়র একজন ডাক্তারকে দেখান। তার মতো জেলার প্রতিটি রোগী এভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদরের মাটিয়াডাঙ্গা থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘চর্ম ও যৌন ডাক্তার দেখানোর জন্য আমার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি। এখানে আসার পরে জানলাম হাসপাতালে কোনো চর্ম ও যৌন ডাক্তার নেই। তাই ফিরে যেতে হচ্ছে।’
এদিকে শিশু ওয়ার্ডে বিশেষজ্ঞের পদ দুটি শূন্য রয়েছে। এই শিশু ওয়ার্ড চালাচ্ছেন একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট।
সামেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খুদা জনবল সংকটের কথা নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত পদ সংখ্যা ৯৮টি। কর্মরত আছেন মাত্র ৪৫টি। বাকি পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দিন দিন হাসপাতালে রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে জরুরি বিভাগ, আউটডোরে এত রোগী হতো না। এখন নিয়মিত শুধু আউটডোরে হাজার ১২শ রোগী আসে। তাদের ও ভর্তি হওয়া রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আয়া ও সুইপারের সবগুলো শূন্যপদে জনবলের বিকল্প নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও ফোনে কথা বলেছি। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো কিছু হয়নি।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়