বাংলা একাডেমির তিনটি পুরস্কার ঘোষণা

আগের সংবাদ

মহাসড়কে পদে পদে মরণফাঁদ :

পরের সংবাদ

গ্যাসের সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

শীতের আগে রাজধানীতে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানীসহ আশপাশের কিছু এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় রান্নাবান্না অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এক বেলা গ্যাস থাকলে আরেক বেলায় পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাসের দেখা মিলছে না অনেক এলাকায়। গ্যাসের অভাবে শুধু রান্নাবান্নাই বিঘিœত হচ্ছে না, ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদনও। প্রতিদিন গড়ে কয়েক ঘণ্টা করে কারখানা বন্ধ রাখছেন মালিকরা। রাজধানী ছাড়াও সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ আশপাশের অনেক এলাকায়ও গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে বলে গতকাল প্রকাশিত ভোরের কাগজের প্রতিবেদনে জানা যায়। এই সমস্যা আজকের নয়। এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। কিন্তু কেন এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না- তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছেন, অর্থ সংকটের কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি গ্যাস কেনা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে জাতীয় গ্রিডে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গ্যাসের সংকট কাটাতে পাইপলাইনের গ্যাস সঞ্চালন নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘœ করতে সরকার অটোমেশন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সব লাইনের গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস সরবরাহ ও গ্যাসের মজুত বাড়াতে সরকার বেশ কিছু নতুন গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে কাজ শুরু করেছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের এমন বক্তব্যে আমরা আশাবাদী হতে চাই। সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্যাসের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও রাজধানীতে শীতকালে যে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তাতে বড় ধরনের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের ত্রæটির কারণে শীত মৌসুমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাস সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। দেখা গেছে, একটা সময় নির্দিষ্টসংখ্যক গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে এক ধরনের পাইপ বসানো হয়েছে, সময়ের ব্যবধানে ওই এলাকার গ্রাহক বেড়েছে ১০-২০ গুণ। ফলে আগের সেই সংকীর্ণ পাইপলাইন দিয়ে ক্রমবর্ধমান গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে শীত মৌসুমে পাইপলাইনে তরল হাইড্রোকার্বন জমেও গ্যাস সরবরাহে বিঘœ ঘটায়- এটাও গ্যাস সংকটের আরেকটা কারণ। রাজধানীর আবাসিক গ্রাহকের ভোগান্তির এসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে বহু আগে। এসব নিয়ে লেখালেখিও সব সময়ই হচ্ছে। তারপরও কেন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। দেশে গ্যাসের মজুত কিন্তু অফুরন্ত নয়। অথচ চাহিদা বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন সংযোগও দেয়া চলছে। ফলে ঘাটতিও থেকে যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের গ্যাস ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমন পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রচুর অপচয় ঘটে। এই অপচয় ঠেকাতে মিটার সিস্টেম চালু করা বা এরকম কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার সুলভ ও সহজলভ্য করার কথা অনেক দিন থেকে বলা হলেও তা হচ্ছে না। পরিবহন খাতে অবাধে সিএনজির ব্যবহার চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসনির্ভরতাও দ্রুত কমছে না। গ্যাসের চাহিদা মেটানো ও গ্যাসের সংকট উত্তরণে নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধান ও খনন করে গ্যাসের মজুত বাড়াতে হবে। গ্যাসের অপচয় রোধ করতে হবে। গ্যাসের সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সর্বোপরি গ্যাসের সাশ্রয়ী ও সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়