জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

আগের সংবাদ

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে ফের জেলে পাঠানো হবে খালেদাকে

পরের সংবাদ

সমঝোতার পথ খোলা রেখেই আন্দোলনে বিএনপি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : রাজপথের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের জেদি মনোভাব আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে বিএনপিকে। পাল্টে দিয়েছে নীতি-নির্ধারকদের হিসাব-নিকাশও। দলটি মনে করছে- রাজপথের আন্দোলনে দাবি আদায়ে নেতাকর্মীদের যে মনোবল দেখা যাচ্ছে- তাতে আর পিছু হটার পথ নেই। তবে এর মধ্যেও সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথ খোলা রেখেছে দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে পাওয়া সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা। তবে সমঝোতার প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি তারেক রহমান। এমনকি সমঝোতার প্রশ্নে বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরও সাফ জবাব- ‘নো, নেভার’।
তবে সূত্রের দাবি, এখনো বন্ধ হয়নি ‘সংলাপ বা সমঝোতা’র পথ। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর আরো চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে দলটি। নেতারা মনে করেন, যত বেশি চাপ বাড়ানো যাবে- সমঝোতার আলোচনায় তত বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বিএনপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের কথাবার্তায় আত্মপ্রত্যয় লক্ষ করা যাচ্ছে। বিএনপিকে আন্দোলনের গতি এবং তৃণমূল ও সাধারণের জনসমর্থন ধরে রাখতে হবে। তবে একই সঙ্গে সতর্ক থাকতে হবে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার গুঞ্জন নিয়ে। এ ধরনের গুঞ্জন কর্মীদের হতাশ করবে। কর্মসূচিভিত্তিক গতির রাশ টেনে ধরবে। দলটি পুুনরায় হোঁচটও খেতে পারে।
সরকারের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ ও সমঝোতার ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতার কী ধরনের প্রস্তাব আসে তা দেখে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার যদি বিএনপিকে কিছু আসন দিয়ে খুশি করে পাতানো নির্বাচনের ব্যবস্থা করে- এমন

সমঝোতার প্রস্তাবে রাজি হওয়াটা ঠিক হবে না। আর যদি হয় তাহলে বিএনপি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অর্থাৎ সমঝোতার নামে প্রবঞ্চনা করলে নেতাকর্মীরা তা মানবে না।
তিনি বলেন, তবে সরকার যদি একটি নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করে সেক্ষেত্রে বিএনপি কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও আলোচনায় যেতে পারে। তবে সেই সমঝোতার প্রস্তাব দিলেই হবে না, সরকার তা কতটা বাস্তবায়ন করবে সেটাই বড় প্রশ্ন। এক্ষেত্রে সমঝোতাকারী দুই দলের বাইরে তৃতীয় পক্ষের ৩-৪ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে স্বাক্ষরিত দলিলের মাধ্যমেই সেই সমঝোতা হতে হবে।
গত কয়েক মাসের বিভিন্ন কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে বিএনপির তৃণমূলের শক্তিকে তুলে ধরছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে স্বার্থের দ্ব›দ্ব থাকলেও তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ। পাল্টে গেছে তাদের ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’। আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন প্রশ্নে তাদের জবাব- বিএনপির সেই দিন আর নেই, সময় পাল্টে গেছে। এবার ‘হয় এসপার নয় ওসপার’। অর্থাৎ নেতাকর্মীদের পরিষ্কার বার্তা তারা মাঠে থাকতে চান। তৃণমূল নেতাদের এমন জেদি বক্তব্যে সিনিয়র নেতারাও হালে পানি পেয়েছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ কিংবা সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। তাদের চলে যেতেই হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। সমঝোতা তো বহু দূরের কথা।
বিগত দিনে নির্বাচন কমিশন গঠন, রোডম্যাপ কিংবা রাষ্ট্রপতির সংলাপ সবকিছুই প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। সরকারকে চাপে ফেলে সমঝোতার মাধ্যমে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও বিরোধী দলের আসন পেতে পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে দেনদরবারের গোপন কৌশল ছিল দলটির। এ বিষয়ে বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।
সূত্র জানায়, দুপক্ষের দুদফা বৈঠকে সমঝোতার কিছু প্রস্তাবও তৈরি করা হয়। যেখানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হবে, নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহার, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বহাল রেখে জাতীয় সরকারের আদলে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও সংসদের সব দলগুলোর অংশগ্রহণে মন্ত্রিসভা গঠন করা- সেখানে বিএনপিকে স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়া হবে। সর্বোপরি ৭০-৮০টি নির্বাচনী আসন দিয়ে বিএনপিকে রাখা হবে প্রধান বিরোধীদলের আসনে।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দুপক্ষের সমঝোতার খসড়া প্রস্তাব নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গত মাসে (সেপ্টেম্বর) লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যান। সরকারের সঙ্গে বৈঠকের আদ্যপান্ত খুলে বলেন। তবে এই প্রস্তাবের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেননি তারেক রহমান। সংলাপ কিংবা সমঝোতা নিয়ে দলের কোনো নেতাকে টু-শব্দ করতে বারণ করে তিনি বলেছেন- ভবিষ্যতে কী হবে সেটা সময় নির্ধারণ করবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এমন যুক্তিতে মত দিয়ে দেশে ফিরে আসেন বিএনপির দুই নেতা খসরু ও টুকু। সূত্রের দাবি গত ৩-৪ মাস আগেও সরকারের সঙ্গে সমাঝোতা ও আসন ভাগাভাগি নিয়ে দলে জোর আলোচনা ছিল।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতার প্রস্তাব প্রশ্নে বিএনপির সিদ্ধান্ত কেমন হতে পারে- জানতে চাইলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপির দাবি পরিষ্কার- আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে দিলে, নির্বাচন কমিশন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলে বিএনপির দাবি অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কিছু আসন নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার মতো দুর্বল অবস্থায় বিএনপি এখন নেই। আর সমঝোতার জন্য সরকার এই মুহূর্তে প্রস্তুত বলে আমার মনে হয় না। বাকিটা সময় বলে দেবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়