জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

আগের সংবাদ

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে ফের জেলে পাঠানো হবে খালেদাকে

পরের সংবাদ

রপ্তানি বাড়াতে পরিকল্পনা জানতে চায় আইএমএফ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়ালেও সা¤প্রতিক বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ফের ধাক্কা খেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণদাতা সংস্থাটির সফররত প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই পরিকল্পনার সম্পর্কে জানতে চায়।
জানা গেছে, ঋণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। একই দিনে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করে তারা। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী তিন বছরের রপ্তানি আয় প্রাক্কলনের তথ্য জানতে চায় আইএমএফ। স¤প্রতি রপ্তানি আয় কমার কারণ এবং রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়। বৈঠকে পাঁচ সদস্যের আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির দক্ষিণ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনান্দ। অন্যদিকে সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অতিরিক্ত সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্ততি, উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পদক্ষেপ, ট্যারিফ কাঠামো যৌক্তিকীকরণ, পণ্যের বহুমুখীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। বাণিজ্য সচিব আইএমএফ কর্মকর্তাদের জানান, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে কাজ করছে সরকার। প্লাস্টিক, তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কাজ করছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত আয় ভালো ছিল। সেপ্টম্বর-অক্টোবরে তা কিছুটা কমে গেছে। ডিসেম্বরে বড়দিন আসছে। শীত মৌসুমও শুরু হয়ে গেছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে আগামীতে রপ্তানি আয় ফের বাড়বে।
বৈঠকে এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি জানতে চায় আইএমএফ। প্রতিনিধি দলকে বাণিজ্য সচিব জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক পণ্য থেকে। আর বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০২৬ সালের পর আরো তিন

বছর বাংলাদেশের পণ্যকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে। এছাড়া এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে বাংলাদেশ ছয় বছর সময় চেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নেয়া যাবে। কাজেই রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কার কারণ নেই। এছাড়া ভারতের সঙ্গে সমন্বিত অংশীদারত্ব বা সেপা চুক্তির ব্যাপারে দুই সরকার প্রধান একমত হয়েছেন। এখন নতুন করে আলোচনা শুরু হচ্ছে। ২০২৬ সালের আগেই এসব দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব দেশের সঙ্গে চুক্তি হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়বে।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে সংস্কারের রোডম্যাপ জানাতে বলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগুলোর সঙ্গে গত কয়েক দিনের সিরিজ বৈঠক শেষে গতকাল গর্ভনর আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে আর্থিক চিত্র সম্পর্কে সংস্থাটির মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়। এর সঙ্গে দেয়া হয় সংস্কারের পরামর্শ। গভর্নর বিষয়গুলো আমলে নিয়ে শিগগিরই সংস্কার কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনার কথা জানান আইএমএফ মিশনকে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, রুটিন অনুযায়ী গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফ মিশন। তারা গভর্নরকে সফরের মিড আপডেট অবহিত করেছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ খেলাপি ঋণ বন্ধের পদক্ষেপ সম্পর্কে জোড়ালোভাবে জানতে চেয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অব্যাহত খেলাপি ঋণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া সরকারি ব্যাংকগুলোর পর্ষদে আমলাদের নিয়োগ ও তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। পর্ষদের ওপর চাপ রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের প্রভাবসহ খাত সংশ্লিষ্ট যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন আইএমএফের কর্মকর্তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়