জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

আগের সংবাদ

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে ফের জেলে পাঠানো হবে খালেদাকে

পরের সংবাদ

ভুয়া রপ্তানি বিলে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে ৮১ প্রতিষ্ঠান : রপ্তানির তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : কোনো ধরনের পণ্য রপ্তানি না করেই সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নিয়ে গেছে ৬২ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। আর ১৯ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য রপ্তানি অর্থাৎ আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করেছে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অনিয়ম করা ৮১ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের থেকে প্রণোদনাও নিয়েছে এবং তা আত্মসাৎ করেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এক অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে এই জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, জাল কাগজপত্র তৈরি মাধ্যমে প্রকৃত রপ্তানি তথ্য গোপন করে ৬২ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনার অর্থ নিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আরো ১৯ প্রতিষ্ঠান ঘোষণার কম পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেছে। এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস অভ্যন্তরীণ তদন্তে এসব জালিয়াতির প্রমাণ পায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন এবং আমদানি-রপ্তানির সনদ বাতিল করার জন্য এনবিআরের কাছে চিঠি দেয়। এসব রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক প্রতিবেদনে এসব প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির তথ্য যাচাই করে ভুয়া প্রমাণিত হয়। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের নেয়া সরকারি প্রণোদনা ফেরত আনার জন্য গত ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। আর এনবিআরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভুয়া ৮১ রপ্তানিকারকের রপ্তানি তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে বলেছে।
গত ২৬ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এনবিআরের কাছে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যে ৬২ প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের পণ্য বিদেশে রপ্তানি না করে এবং কিছু প্রতিষ্ঠান

ঘোষণার কম পণ্য বিদেশে পাঠিয়ে সরকারের কাছ থেকে রপ্তানি প্রণোদনা নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি প্রণোদনার অর্থ ফেরত আনতে এনবিআরের কাছে বিল অব এক্সপোর্টের তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, ভুয়া রপ্তানির দলিলাদি তৈরি করে যারা অনিয়ম করেছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব অনিয়মে সহযোগিতা করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা একা এই ধরনের অনিয়ম করতে পারেন না। তবে এনবিআর যেসব প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম বন্ধ হবে।
সরকারি প্রণোদনার অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থপাচারে চিহ্নিত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ঢাকার টয়েনবি সার্কুলার রোডের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলা ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সুগার জুট ডাইভারসিফাইড ইন্ডাস্ট্রিজ, আহনাফ করপোরেশন, আলআমিন করপোরেশন, দো ইমপেক্স লিমিটেড, ফাতেমা করপোরেশন, জান্নাত করপোরেশন, জেটিএফ ইন্টারন্যাশনাল, খান এন্টারপ্রাইজ, এম কে এগ্রো ফুড প্রোডাক্ট, এমবি এগ্রো ফুড প্রোডাক্ট, এমটি এগ্রো ফুড প্রোডাক্ট, মদিনা এগ্রো, মামুন এন্টারপ্রাইজ, মাসালা ফুডস লিমিটেড, মিয়াজি ফুড প্রোডাক্ট, এস এস ফুড লিমিটেড, সিয়াম ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স আলভি এন্টারপ্রাইজ, আফ্ফান ফুড, এগ্রোটেক বিডি, আতিকা ইন্টারন্যাশনাল, আল-আজমি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আল সাবিদ ট্রেডার্স, বেস্ট ওয়ান ফুড প্রোডাক্ট, বিক্রমপুর ট্রেডার্স, চৌধুরী করপোরেশন, ক্রাফট এন্ড ক্রিয়েশন বিডি, ডিএইচএস ইন্টারন্যাশনাল, ইজি কোক ফুড প্রসেসিং, ইনক্লাইন লিমিটেড, জেএমএইচ মাল্টি ট্রেড, কাশমেরি এগ্রো ফুড, এমআর ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল, ম্যাজেস্টিক এন্টারপ্রাইজ, মারজান ফুড, নাফিস ফুড প্রোডাক্ট, নভেল ফুড, নর্থ বেঙ্গল এগ্রো, ওমর ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, প্রভা জেনারেল ট্রেডিং, আর কে ইন্টারন্যাশনাল, আরএম এগ্রো ফুড প্রোডাক্ট, রাজকমল ফুড প্রোডাক্ট, রুচিকর এগ্রো ফুড প্রোডাক্ট, এসকে ইন্টারন্যাশনাল, এসআর এন্টারপ্রাইজ, এস রহমান ট্রেডিং করপোরেশন, সাফওয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, শিরিন ফুড অ্যান্ড কনজুমার প্রোডাক্ট, সিমরাহ ট্রেডার্স, স্ট্যান্ডার্ড ফুড করপোরেশন, থাসা ওয়ার্ল্ড বিডি এক্সপো, তাসনিম ট্রেডিং, ইউনিক কনজুমার ফুড, তাসরিফ আবেদিন এসোসিয়েট, টাচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ওয়াদুদ ট্রেডার্স, জিলানি এক্সিম, জিলানি গেøাবাল ট্রেড, পিও ইপো ইন্টারন্যাশনাল, ইনশা এগ্রো ফুড, সান ট্রেড লিমিটেড, বিডি ক্রিয়েশন, ইউনিপেক্স ট্রেড করপোরেশন, ট্রাসকো এপারেল লিমিটেড, আদিলা এপারেল, আরএম সোর্সিং বাংলাদেশ, আরডিসি প্যাকেজিং, এসআর ফ্যাশন, ডিজাইন গার্ডেন নিটওয়্যার, রিফাত ট্রেডিং এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট, সেফ ফ্যাশন এন্ড ট্রেডিং, গোলন্দাজ কনসোটিয়াম এন্ড লাইন, তাসিন ইন্টারন্যাশনাল, সায়েম ফ্যাশন, বেলা ফ্যাশন, রাফসা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এসকে এগ্রো ট্রেড প্রসেসর এবং সারা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড মার্কস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাস্টমসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ভুয়া রপ্তানি বিল বা জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি প্রণোদনা নিয়েছে, তারা সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। কারণ রপ্তানি না করে প্রণোদণা নেয়া বড় ধরনের অনিয়ম। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার করেছে তারাও বড় ধরনের অনিয়ম করেছে। এনবিআরের উচিত শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স বাতিল করে শাস্তির আওতায় আনা।
এ বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ভুয়া রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ভুয়া রপ্তানির দলিলাদি তৈরি করে কিভাবে সরকারি অর্থ ছাড় করা সম্ভব। বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ অডিট ছাড়া রপ্তানির বিপরীতে ক্যাশ ইনসেনটিভ সম্ভব নয়। কারা অডিট রিপোর্ট দিল বা কারা এই অর্থ ছাড় করলেন, পুরো বিষয়টি তদন্তের আওতায় নিয়ে এলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়