জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

আগের সংবাদ

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে ফের জেলে পাঠানো হবে খালেদাকে

পরের সংবাদ

ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট লুলার সামনে ৩ চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ হাসি হেসেছেন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তার সমর্থকদের মধ্যে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। বিপরীতে জইর বলসোনারোর নির্বাচনী শিবির এখন স্তব্ধ। তবে জয়ের এই আনন্দ ক্ষণস্থায়ী। কেননা, অচিরেই লুলার সামনে দারিদ্র্য, আবাসন ও আমাজন- এই তিন বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গত রবিবার দ্বিতীয় দফার ভোট হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বামপন্থি রাজনীতিক লুলা ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। কট্টর ডানপন্থি প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট বলসোনারো পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। আগামী ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন লুলা। এর মধ্য দিয়ে প্রায় এক যুগ পর দেশটিতে ক্ষমতায় ফিরছেন তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দায়িত্ব নেয়ার পরপরই লুলাকে ওপরের তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দেশের পুনর্গঠন ও দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষত বলসোনারোর চার বছরের মেয়াদে ব্রাজিলে যে বিভাজন দেখা দিয়েছে, তার ক্ষত সামলাতে হবে বামপন্থি লুলাকে।
বলসোনারোর আমলে ৩ কোটির বেশি ব্রাজিলবাসী চরম খাদ্যসংকটের ঝুঁকিতে পড়েছে। দরিদ্র হয়েছে ১০ কোটি মানুষ। এজন্য করোনা মহামারি ও বলসোনারোর নীতিগত ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়। বিশেষত আমাজন বন উজাড়ে বলসোনারোর নীতি বিশ্বজুড়ে ব্রাজিলকে সমালোচিত করেছে। দেশের লাখ লাখ নারী-শিশু-পুরুষ পর্যাপ্ত খাবার পান না, এটা সাধারণ কোনো বিষয় হতে পারে না।
নির্বাচনী প্রচারে লুলা এ বিষয়গুলোকে দেশবাসীর সামনে তুলে এনেছিলেন। এমনকি জয় লাভের পর দেয়া ভাষণেও তিনি বলেছেন, ক্ষমতা নেয়ার পর ব্রাজিলের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য ফেরানো তার অগ্রাধিকার হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের লাখ লাখ নারী-শিশু-পুরুষ পর্যাপ্ত খাবার পান না, এটা সাধারণ কোনো বিষয় হতে পারে না। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম খাবার উৎপাদনকারী দেশ ও বৃহত্তম প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রতিদিন ব্রাজিলের প্রত্যেক মানুষের পাতে তিনবেলা খাবার তুলে দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান আমাদের কর্তব্য।’
গত সপ্তাহে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি খোলাচিঠি লিখেছিলেন লুলা। তাতে তিনি তার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো উল্লেখ করেছিলেন। এই চিঠি উচ্চাকাক্সক্ষায় ভরপুর ছিল। তাই বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেছিলেন, অগ্রাধিকারের এই তালিকা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিশেষত নারী-পুরুষকে সমান মজুরি দেয়া, হাসপাতালগুলোয় অস্ত্রোপচার ও শারীরিক পরীক্ষার জন্য মানুষের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ঘোচানো এবং সব নবজাতকের জন্য ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা করা বেশ কঠিন হয়ে যাবে। যদিও এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় ও অর্থায়ন নিয়ে লুলা বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে দেশবাসী তার কথায় ভরসা রেখেছেন। প্রায় এক যুগ পর তার ক্ষমতায় ফেরার পথ উন্মুক্ত করেছেন। দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে লুলা যেসব প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, তার অনেক কিছুই তিনি নিজের প্রথম মেয়াদে (২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত) বাস্তবায়ন করেছিলেন। তিনি দেশবাসীকে সাধ্যের মধ্যে আবাসন সুবিধা এবং গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও পানির সুবিধা পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে জ্বালানি-পরিবহনসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, কর সংস্কার ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির প্রতিশ্রæতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন লুলা।
লুলা তার প্রথম মেয়াদে ‘বোলসা ফ্যামিলিয়া পোভার্টি-রিলিফ প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছিলেন। এর আওতায় দরিদ্র পরিবারগুলো মাসে ১১০ ডলার করে সরকারি সহায়তা পেত। এছাড়া পরিবারে ৬ বছরের কমবয়সি শিশু থাকলে অতিরিক্ত ৩০ ডলার দেয়া হতো মাসে। করোনা-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে লুলা এই প্রকল্প কীভাবে এগিয়ে নেবেন, সেটা এখন বড় প্রশ্ন। অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে লুলাকে। ব্রাজিলের ন্যাশনাল কংগ্রেসে বলসোনারোর দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। বড় কৃষি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন অনেক কংগ্রেসম্যান নির্বাচনে বলসোনারোকে সমর্থন দিয়েছেন। তারা আমাজন রক্ষায় লুলার যে কোনো উদ্যোগ পার্লামেন্টে আটকে দিতে পারেন কিংবা বাধা তৈরি করতে পারেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়