জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

আগের সংবাদ

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে ফের জেলে পাঠানো হবে খালেদাকে

পরের সংবাদ

জেলহত্যাকাণ্ড : দণ্ডিত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা হোক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ জেলহত্যা দিবস। জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় চার নেতা- স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান। বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী দখলদার চক্রান্তকারী অশুভ রাজনৈতিক শক্তির প্ররোচনায় কিছু সেনাসদস্য রাষ্ট্রের সুরক্ষিত স্থান হিসেবে বিবেচিত কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার সুপরিকল্পিত ও সুগভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। আজ এ দিনে আমরা জাতীয় এ চার নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী দখলদার রাজনৈতিক শক্তির প্ররোচনায়ই যে কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে এই বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল, তা বোঝা গিয়েছিল তখনকার ক্ষমতাসীনদের আচরণেই। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ নেয়া তো দূরের কথা, আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। হন্তারকদের বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশে নিরাপদ অবস্থানের ব্যবস্থা করে, কাউকে কাউকে মর্যাদাপূর্ণ চাকরি দিয়েও পুরস্কৃত করেছে পরবর্তী সরকারগুলো। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিচারকাজ শুরু করে। পরবর্তী সময় বিচারকাজ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। ২৯ বছর পর ২০০৪-এর ২০ অক্টোবর অভিযুক্তদের মধ্যে পলাতক ৩ জনের ফাঁসি, জেলে অবস্থানরত ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জামিনে মুক্তদের নির্দোষ ঘোষণা করে বিচারিক আদালত দায়সারা একটি রায় দেয়। রায়ে এত বড় একটি ঘটনায় ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির আওতায় না আসাও জাতিকে বিস্মিত করে। পরে ডেথ রেফারেন্স ও রায়ের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে বেকসুর খালাস এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে চারজনকে দণ্ড থেকে অব্যাহতি দেন। এ রায় জাতিকে আরো স্তম্ভিত ও মর্মাহত করে। আত্মস্বীকৃত মূল আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে এটা কারো কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না। বিস্ময়করভাবে তখন রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করেনি। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রত্যাশিত আপিল দায়ের করা হয়। আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির বেঞ্চ ২০১৬ সালে ৩০ এপ্রিল রায় দেন। হাইকোর্টের রায়টি বাতিল করে বিচারিক আদালতের রায়ই বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। বহুল আলোচিত এই জেলহত্যাকাণ্ডের আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এতে দণ্ডিত ১১ আসামির সবাই পলাতক আছে, যাদের তিনজন মৃত্যুদণ্ড ও ৮ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। এদের মধ্যে দুজন ছাড়া বাকি আসামিরা কোথায় আছে, সে ব্যাপারে সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্যও নেই। প্রশাসনের দায় পলাতক দণ্ডিত আসামিদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা। এটি স্পষ্ট যে, মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার নেতার হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই কেবল গুটিকতক অস্ত্রধারীর কাজ নয়, এটি ছিল জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে, দেশকে মুক্তি সংগ্রামের চেতনার বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে স্বাধীনতার শত্রæদের ঘোরতর ষড়যন্ত্রের অংশ। আপিল রায়েও এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ জাতির সামনে পুরোপুরি উন্মোচিত হওয়া, ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হওয়াও জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়