সাগর-রুনি হত্যা মামলা : তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাল ৯৩ বার

আগের সংবাদ

গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় শঙ্কা : ৩৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে বিতরণ ২৬০ কোটি ঘনফুট

পরের সংবাদ

বারবাজার হাইওয়ে থানা : ‘চাঁদাবাজিতে’ অতিষ্ঠ বাস-ট্রাক চালকরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বেলাল হুসাইন বিজয়, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে : রোড ডাকাতি ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ প্রতিষ্ঠা করা হলেও বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কোনো সুফল পাচ্ছে না বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা। বরং ঝিনাইদহ বারবাজার হাইওয়ে থানা পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বাস-ট্রাক মালিক ও চালকরা। প্রতি মাসে বারবাজার হাইওয়ে থানা পুলিশকে দিতে হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। বাস, ট্রাক, মাইক্রো, মিনি ট্রাক, সিএনজির ফিটনেস ফেল, ট্যাক্স টোকেন ফেল, রুট পারমিট ফেল, ইন্স্যুরেন্স ও চালকদের লাইসেন্স না থাকায় তাদের কাছ থেকে মাসিক হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিকাশে ও খামে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় বারবাজার হাইওয়ে পুলিশের ওসি মঞ্জুরুল আলমের কাছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যেসব বাস-ট্রাক-মাইক্রোবাসের কাগজপত্র নেই, সেসব গাড়ি থেকে মাসিক চুক্তি করে নেয়া হয়। এসব গাড়ির গায়ে রিভার ভিউ ফিলিং স্টেশন, ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ, আল আলিফ মটরস সাতক্ষীরা, মাসুদ মটরস কানাইপুর ফরিদপুর, মুক্তার মটরস ঝিনাইদহ, বাদশা মটরস ঝিনাইদহ, আরাফাত মটরস কুষ্টিয়া, এপ্রিল সাতক্ষীরা, সুজন মটর কুষ্টিয়া, আলিফ মটরস সাতক্ষীরা, কে এম মটরস, মাহিম এন্টারপ্রাইজের স্টিকার ও মোবাইল নাম্বার লেখা আছে। হাইওয়ে পুলিশ যেসব বাস-ট্রাকে এসব স্টিকার দেখে সে গাড়িগুলো চেক না করেই ছেড়ে দেয়।
সূত্র আরো জানায়, বারবাজার হাইওয়ে থানার আওতাধীনে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর জেলা রয়েছে। এর মধ্যে যশোরের নাভারণে একটি, মাগুরার রামনগরে একটি, কুষ্টিয়ার চৌড়হাসে একটিসহ মোট তিনটি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি আছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জের মাইক্রো থেকে ছয় হাজার, ঝিনাইদহ মাইক্রো থেকে পাঁচ হাজার, চুয়াডাঙ্গা জেলার মাইক্রো থেকে পাঁচ হাজার, কোটচাঁদপুরের মাইক্রো থেকে পাঁচ হাজার, চৌগাছার ইজিবাইক সিএনজি চালকদের পক্ষে ইন্নাত হোসেনের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা, বারীনগর বাজারে ইজিবাইক ও আলমসাধুর (গরুটানা গাড়ি) পক্ষে হাবিলের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, বারবাজার সিএনজি-লেগুনা স্ট্যান্ডের পক্ষে বাবলুর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, রঘুনাথপুর লাটা গাড়ির পক্ষে মন্নুর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা, কালীগঞ্জ সিএনজির পক্ষে আরশেদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, কালীগঞ্জ মাইক্রোচালক সমিতির সভাপতি মিন্টুর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, কোটচাঁদপুর সিএনজির পক্ষে বাবলুর কাছ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা, জীবননগর মাইক্রোচালকদের পক্ষে প্রদীপের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, বিষয়খালী বাজার সিএনজির পক্ষে মুজিদের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা, রাস্তার পাশে ১৯টি তেলের দোকানির কাছ থেকে তিন হাজার করে ৫৭ হাজারসহ অনেকের কাছ থেকে মাসিক চুক্তি অনুযায়ী টাকা আদায় করেন ওসি। মোট ২৭টি খাত থেকে প্রতি মাসে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা মাসিক চুক্তি আদায় করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর থেকে কালীগঞ্জগামী একাধিক সিএনজি চালক জানান, সিএনজি থেকে প্রতি মাসে বারবাজার হাইওয়ে থানাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে চলাচল করতে হয়। মাসিক টাকা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে মামলা দেয়া হয়। চৌগাছা এলাকার লেগুনা চালক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমি বারবাজার হাইওয়ে থানার সামনে দিয়ে ঝিনাইদহে যাচ্ছিলাম। হাইওয়ে পুলিশ এ সময় আমার গাড়ি ধরে মামলা দেয় এবং গাড়ি থানার মধ্যে আটকে রাখে। মামলা ভাঙিয়ে গাড়ি আনতে থানায় গেলে এক স্যার এসে বলেন, তোমার এলাকার যত ইজিবাইক আছে, সবাই যদি থানায় প্রতি মাসে অল্প কিছু করে টাকা দেয়, তাহলে তাদের গাড়ি আমরা ধরব না। আর ওই টাকা তুমি তুলে এনে থানায় এসে আমার কাছে দিয়ে যাবে। পরে জানতে পারলাম তিনিই থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম। পরে স্যারকে জানিয়ে দিয়েছি আমি এসব ঝামেলার কাজ করতে পারব না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ওসি নিজেই বিভিন্ন জনের সঙ্গে মাসিক চুক্তি করেন এবং টাকা আদায় করেন। এদের অনেকে থানায় এসে চুক্তির টাকা দিয়ে যান, আবার অনেকে ওসির ব্যবহৃত বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেন। তিনি আরও জানান, যোগদানের পর থেকে ড্রেস পরিহিত অবস্থায় ওসিকে মহাসড়কে ডিউটি করতে খুব কম দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে বারবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আগে কে কি করেছে তা আমি জানি না। কর্তৃপক্ষ যেটা পছন্দ করে না, সেটা করা যাবে না।’
সহকারী পুলিশ সুপার (হাইওয়ে সার্কেল, যশোর) আলী আহমেদ হাশমী বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। তবে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়