সাগর-রুনি হত্যা মামলা : তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাল ৯৩ বার

আগের সংবাদ

গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় শঙ্কা : ৩৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে বিতরণ ২৬০ কোটি ঘনফুট

পরের সংবাদ

চসিকে সাকা চৌধুরীর ভূত! : প্রভাব খাটিয়ে হুমকি-ধমকি দেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এখনো রয়ে গেছেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ভূত! ৭১-র মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর সাকা চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক জানিয়েছিলেন চসিক’র বিদ্যুৎ বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (বৈদ্যুতিক হেলপার) মো. সবুর খান মাসুম। সরকারিবিরোধী পোস্টে ভরপুর তার ফেসবুক ওয়াল। চসিক জাতীয়তাবাদী শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মো. সবুর খান কোনো কাজ না করেই রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে মাসের পর মাস ধরে বেতন উত্তোলন করছেন। শুধু তাই নয়, মো. সবুর খানের হুমকি-ধামকিতে তটস্থ থাকেন চসিক’র বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। এতকিছুর পরও এখনো বহাল তবিয়তে আছেন যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর আদর্শিক অনুসারী মো. সবুর খান।
বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত সবুর খানের ফেসবুক আইডি মাসুম খান নামে। তার ফেসবুক পোস্টজুড়ে সরকার বিদ্বেষী প্রচারণা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সাকা চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর চসিক কর্মচারী মো. সবুর খান তার ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্ট দেন। সাকা চৌধুরীর ছবি যুক্ত করে দেয়া পোস্টে তিনি লিখেন, ‘তুমি রবে নীরকে হৃদয়ে মম, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকেও আপনি সত্যের পক্ষে ছিলেন, কোনো অন্যায়ের কাছে আপনি মাথা নত করেননি। মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে একটিই চাওয়া জান্নাতের সর্বোচ্চ জায়গায় আপনাকে কবুল করে নিন।’ শুধু তাই নয়, তিনি সাকা চৌধুরীর পিতা আরেক যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত পোস্ট করেন ২০২১ সালের ১৮ জুলাই। এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী বিভিন্ন পোস্ট দেয়া হয় তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে।
চসিক বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ বিভাগের হেলপার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত সবুর কাজ না করেই বেতন নেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়ে তিনি প্রায়ই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শাসান। তার কথামতো প্রকৌশলীরা না চললেই শাসান। একাধিক কর্মকর্তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে চসিক মেয়রের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অভিযোগ রয়েছে, চসিক’র নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল বারীর প্রশ্রয়ে তিনি এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সবুর খান সিটি করপোরেশনের কর্মচারী হয়েও অন্যের লাইসেন্স দিয়ে ঠিকাদারি করেন। প্রকৌশলীদের কাজ থেকে কোটেশনে (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি) কাজ নিয়ে থাকে। সাধারণত ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার কাজ তিনি জোর করে নিয়ে যান। প্রকৌশলীরা তাকে কাজ না দিলে বা না পেলেই খারাপ আচরণ করেন। চসিক’র অন্তত তিন থেকে চারজন প্রকৌশলী সবুর খানের হয়রানির শিকার হয়েছেন। চসিক’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপসহকারী প্রকৌশলী ভোরের কাগজকে বলেন, সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সবুর খান শ্রমিক সংগঠনের দাপট দেখিয়ে সব সময় দলবল নিয়ে করপোরেশনে ঘুরে বেড়ায়। সবাইকে হুমকি-ধমকি দেয়। অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়ে সে কাজ নেয়। সে কাজ না পেলেই প্রকৌশলীদের হুমকি-ধমকি দেয়।
সবুর খান বর্তমানে বিদ্যুৎ হেলপার পদে থেকেও অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে মিটার রিডার কাম বিল সহকারী হিসেবে ৪ নম্বর জোনে কাজ করছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় সিটি করপোরেশনের সড়ক বাতির লাইন থেকে অবৈধ বাণিজ্যিক সংযোগ দিয়ে দোকান ও বাসাবাড়িতে লাইন দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চসিক নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল বারীর দূরসম্পর্কের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে নানা অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চসিক’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল বারী ভোরের কাগজকে বলেন, প্রকৌশলীকে হুমকি দেয়ার ঘটনাটি আমার সামনে হয়নি। আমি জানি না। মেয়র বরাবরে দেয়া অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করছেন।
আপনার প্রশ্রয়েই সবুর খান বেপরোয়া আচরণ করছেন- এমন অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এগুলো বাজে কথা, মিথ্যা প্রপাগান্ডা। সে আমার কোনো আত্মীয় নয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সবুর খান ভোরের কাগজকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মেয়রের কাছে দেয়া অভিযোগের বিষয়ে মেয়র তদন্তের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রকৌশলীদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈদ্যুতিক সহকারী সবুর খান বলেন, প্রকৌশলীরা ঘুস দুর্নীতি করলে, আমরা তার প্রতিবাদ করি, এজন্য তারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে এটি তদন্তের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।’ সাকা চৌধুরীর ছবিযুক্ত পোস্ট দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়ে মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সবুর খানের ভাই শাহিন খান ও চাচা দৌলত খান চসিক’এ গাড়িচালক পদে কর্মরত। তবে তারা কেউ গাড়ি চালান না। গাড়ি চালান তাদের সহকারী বা বদলি চালকরা। মাঝে মাঝে পরিবহন বিভাগে হাজিরা দিয়ে বেতন নেন তারা। চসিক’র পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক সম্পত্তি কর্মকর্তা আহমেদুর রহমানের গাড়ি চালাতো শাহিন খান। কিন্তু তিনি অবসরে যাবার পর শাহীন খান আর গাড়ি চালায়নি। মাঝে মাঝে এসে হাজিরা দেয়, গাড়ি চালায় অন্য মানুষ। তার চাচা দৌলত খানও গাড়ি না চালিয়ে, ডিউটি না করেই মাসের পর মাস বেতন নিচ্ছে।
গত ৩ অক্টোবর চসিক’র বিদ্যুৎ উপবিভাগের সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক মেয়রের কাছে সবুর খানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘গত ২৯ সেপ্টেম্বর সরাসরি ও গত ২ অক্টোবর বিকালে আমার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল দিয়ে চসিক বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী সবুর খান ওরফে মাসুম তাকে মারধরের হুমকি দেন।’ সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১১ অক্টোবর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলেন। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। এনামুল হকের অভিযোগটি তদন্ত করছেন চসিক’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা জামান। তিনি বলেন, আমার কাছে অভিযোগটি এসেছে। এখনো কোনো পক্ষকে ডাকিনি। আমি কাজ করছি। শিগগিরই অগ্রগতি হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়