সাগর-রুনি হত্যা মামলা : তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাল ৯৩ বার

আগের সংবাদ

গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় শঙ্কা : ৩৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে বিতরণ ২৬০ কোটি ঘনফুট

পরের সংবাদ

এডিস মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের তাগিদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘মশা মারতে কামান দাগা’- প্রবাদটি সবার জানা থাকলেও ক্ষুদ্র এই মশার কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ। কামান না দাগালেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের কোনো কমতি নেই। এদিকে ক্রমেই হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর অক্টোবরেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। সেই রেশ নিয়েই গতকাল শুরু হয়েছে নভেম্বর মাস। প্রথম দিনই ৯ শতাধিক ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত এবং ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযান, বিশেষ কর্মসূচিসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ অনান্য সিটি করপোরেশন। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকেরও বেশি সময় দেশে ডেঙ্গু একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ এই জ¦রে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী গুরুত্ব পায়নি। বরং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে চলেছে একে অপরের উপর দায় চাপানোর প্রবণতা।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এখন প্রতি জেলায়ই ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সহায়তাও দিচ্ছি। আমরা চিকিৎসা দিতে পারি কিন্তু আক্রান্তের হার কমাতে মশা কমাতে হবে। এটি স্থানীয় সরকার বিভাগকে করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৯২ জন, মারা যায় ৩ জন। ২০২১ আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪২৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১০৫। আর এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ১ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭ জন। মারা গেছে ১৪৮ জন। তবে বাস্তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, দুই সিটি

করপোরেশনের কার্যক্রম মূলত মশক নিধন কর্মীর ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে কথাবার্তা হওয়ার পর বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকজন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে না পারলে মশা নিয়ন্ত্রণ আদৌ সম্ভব নয়।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, বৃষ্টিপাত না হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে। তবে সেই আশায় অনেকটাই জল ঢেলেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। বৃষ্টির কারণে বহু জায়গায় নতুন করে পানি জমেছে। সেখানে এডিস মশার ডিম থাকলে তা থেকে মশা জন্ম নেবে। তবে এটি বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একক কোনো পন্থা দিয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। একাধিক পন্থায় কাজ করতে হবে। একসঙ্গে যদি সব এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় তাহলে এটি সুফল বয়ে আনবে।
এডিস মশা নির্মূলে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নিয়ে অনেকটাই হতাশ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বছরের শুরু থেকেই এ ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে- সেই শঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম। আগস্টে ডেঙ্গুরোগী কম থাকায় দুই সিটির কার্যক্রম কিছুটা কম ছিল। থেমে থেমে বৃষ্টি ডেঙ্গু পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমি একটি কথা বারবার বলছি। হট স্পট ম্যানেজমেন্ট। হট স্পট ধরে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কারো বাসায় যদি একজন ডেঙ্গুরোগী থাকে। সেই বাসার ৫শ মিটারের মধ্যে যদি কোনো উড়ন্ত এডিস মশা বাঁচিয়ে না রাখা হয় তাহলে ওই রোগী থেকে আর কোনো রোগী আক্রান্ত হবে না। সেই হট স্পট ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছি। যে কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়