স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

সুনাকের ওপর সুয়েলার বোঝা, খেলছেন বরিসও

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ব্রিটেনের আগের চার প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, টেরেসা মে, বরিস জনসন ও লিজ ট্রাসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এসেছিল দলের ভেতর থেকেই। জনসনের পতনের পর থেকেই লেবার পার্টি নতুন নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। কনজারভেটিভ দলের মধ্যেও অনেকে আছেন যারা সুনাকবিরোধী। এই অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে নেতৃত্ব দিতে ঋষি সুনাক কতটা দক্ষতার পরিচয় দেবেন- তার ওপরই নির্ভর করবে তার সরকারের স্থায়িত্ব। এমনটাই বলছেন যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. অ্যান্ড্রæ বার্কলে। তিনি বলেন, কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে অন্তর্দলীয় কোন্দল চলছে। ফলে সুনাককে এ মুহূর্তে দুটি সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রথমটি রাজনৈতিক, দ্বিতীয়টি অর্থনৈতিক।
রক্ষণশীলতার শৃঙ্খল ভাঙা : অধ্যাপক বার্কলে বলছেন, সুনাক ব্রিটেনের প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী। সব দলের নেতারা তাকে স্বাগত জানিয়েছে। তার নিয়োগ ব্রিটিশ রাজনীতিতে সংখ্যালঘুদের অগ্রগতির প্রমাণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যারা তাকে নিয়োগ করেছে, সেই কনজারভেটিভ পার্টির বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকে উপেক্ষা করার অভিযোগ ছিল। এ কারণে ব্রিটিশ এশিয়ানদের একটা বড় অংশ এতদিন লেবার পার্টিকে ভোট দিয়েছে। এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে বলাই যায়, কনজারভেটিভ পার্টিতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে। ১৫/২০ বছর আগেও কনজারভেটিভ এমপিদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া কষ্টকর হতো।
সুয়েলা চাপ : তবে এই মুহূর্তে ঋষির সামনে সবচেয়ে বড় বোঝা হয়ে আছে লিজের নিয়োগ দেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান। বিরোধী দল প্রথমদিনেই অভিযোগ করেছে, তাকে পুনর্নিয়োগ দিয়ে ঋষি আত্মমর্যাদা ও স্বচ্ছতার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন- যা তিনি জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে বলেছিলেন। লেবার দলের ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার স্কাই নিউজকে বলেছেন, এমন একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের থাকতে পারেন না, যিনি সরকারের বিশ্বস্ত নন। তার আমলেই লিজের ফোন হ্যাক হয়েছিল দাবি করে লেবার ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মন্ত্রিসভা অফিস তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। বিরোধীরা বলেন, তিনি মন্ত্রীর কোড ভঙ্গ করেছেন। তার নিয়োগকে ঋষির প্রথম পরাজয় বলে মনে করছেন অনেকে। ইভেট কুপার বিবিসি রেডিও-৪ কে বলেছেন, একটি তাৎক্ষণিক প্রশ্ন হলো- তিনি আরো কত নিরাপত্তা লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন? এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ব্র্যাভারম্যানকে বরখাস্ত করার পর এত তাড়াতাড়ি সরকারে ফিরিয়ে

আনা উচিত হয়নি এবং তাকে বিশ্বাস করা যায় না।
১৭ নভেম্বরের বাজেট : ব্রিটেন গভীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ঋষি সুনাক দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বক্তৃতায় বলেছিলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা। জীবনযাত্রার ব্যয় এবং অর্থনৈতিক পতনের গতি বেড়ে যাওয়ায়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটি সত্যিই একটি কঠিন সময়। ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভবত সে কারণেই বরিস জনসন দশ নম্বরে দ্বিতীয়বার অবস্থানের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তাই ৩০ অক্টোবর বাজেট নীতিমালা ঘোষণা না করে আগামী ১৭ নভেম্বর তিনি তার বাজেট নীতি বা অর্থনৈতিক সংকট এড়ানোর জন্য কী কী করণীয় তা ঘোষণা করবেন। বিশ্লেষকরা এই দিনটির দিকেই তাকিয়ে আছেন। এই ঘোষণার পরই বোঝা যাবে সুনাক কতটা সফল হবেন বা আদৌ হবেন কিনা।
অভিবাসন ও আবাসন সমস্যা : এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অভিবাসন ও আবাসন সমস্যা। গত রবিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর ডোভারে অভিবাসীদের প্রক্রিয়াকরণের একটি কেন্দ্রে একজন ব্যক্তি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে নিজেও আত্মহত্যা করেন। এদিকে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত বৈধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হোটেলগুলোতে তল্লাশি চালাতে বলেছেন। নতুন পরিসংখ্যান দেখায়, জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের কারণে আরো বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছে। তথ্যের প্রতিক্রিয়ায়, লন্ডনের মেয়র সাদিক খান জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে ‘মানুষের ভ্রাম্যমাণ দরজা’ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন এবং অবিলম্বে ভাড়া করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জনসনের অভ্যন্তরীণ খেলা : বিশ্লেষকরা আগেই বলেছিলেন, অনেক চাপের মধ্যে সবচেয়ে বড় চাপ হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপ সামলানো। প্রথমেই ঋষিকে চাপে ফেলেছে বরিসের জলবায়ু সম্মেলনে যাওয়ার ঘোষণায়। প্রধানমন্ত্রী হয়ে গত সপ্তাহে ঋষি বলেছিলেন, জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি মিশরে যাবেন না। এই সুযোগে মিশরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন বরিস। আর এতেই ঋষির ঘনিষ্ঠরা ঋষিকে যোগ দিতে চাপের মধ্যে ফেলেছেন। কারণ এই সুযোগে অন্যরাও বলাবলি শুরু করে দিয়েছে ঋষির যাওয়া উচিত। ধারণা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ঋষি চাপে পড়ে যেতে পারে। ঋষি সুনাককে তার সিদ্ধান্তে ইউটার্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি তার ফোকাস পরিবর্তন করে বিশ্বনেতাদের বৈঠকে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছেন বলে দাবি করা হয়েছে। সরকারের জলবায়ু মুখপাত্র অলোক শর্মা বলেছেন, তার এই পদক্ষেপে ‘হতাশ’ হয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী মার্ক স্পেন্সার আজ স্পষ্ট করেছেন, প্রধানমন্ত্রী রেড সি রিসোর্টে বিশ্বনেতাদের সমাবেশে যেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী তার মন পরিবর্তন করতে পারেন এবং আগামী সপ্তাহে কপ ২৭-এ যেতে পারেন। অলোক শর্মা গøাসগোতে গত বছরের কপ ২৬ সম্মেলনের সভাপতি, যিনি আগামী সপ্তাহে শর্ম আল-শেখে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের আলোচনাকারী দলের নেতৃত্ব দেবেন। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন না বলে আমি বেশ হতাশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়