স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ও উন্নতমানের চিকিৎসার দাবি : শ্রীপুরে এক পরিবারের আট সদস্য দৃষ্টিহীন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন জর্জ, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : প্রথমে বাবা এবং একেক করে সন্তান ও তার নাতিরাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছেন। ওই পরিবারে এখন আটজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। দিনের একবেলা খেলে আরেক বেলা খাবার থাকে না ঘরে। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা ১৫ দিন পর শেষ হয়ে যায়। প্রতিবন্ধী হওয়ার এ সংকট থেকে পরিবারটি যেন বের হতে পারছে না। মাঝে মধ্যে অর্থ সাহায্য পেলেও চিকিৎসা সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি কখনো। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার উজিলাব (হলাটিরচালা) এলাকার হোসেন আলী এখন প্রয়াত। ২০২০ সালে তিনি মারা যান। তার একটি চোখে কিছুই দেখতেন না। আমৃত্যু তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। মৃত্যুর সময় তিনি দুই ছেলে ও দুই কন্যা রেখে যান। একমাত্র স্ত্রী চোখে দেখেন। তাদের পরিবারে জন্ম নেয়া সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্ত্রী রাশিদা অনেক কষ্টে সন্তানদের বড় করেন এবং প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে-সাদী দেন। বিধি বাম তাদের ঘরে জন্ম নেয়া শিশুরাও জন্মান্ধ। বংশ পরম্পরায় অন্ধত্বের গøানি মুছবে কিনা তা নিয়ে তারা শঙ্কিত। চিকিৎসায় কেউ এগিয়ে এলে তাদের এ গøানি মুছে যাবে বলেও স্বপ্ন দেখেন তারা। নিজের চেষ্টায় চলতে চান কিন্তু নিয়তি তাদের সে সুযোগ না দেয়ায় বাধ্য হয়ে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন প্রতিবন্ধীর শিকার পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের একমাত্র সুস্থ নারী হোসেন আলীর স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, স্বামী মারা গেছে ২০০০ সালে। স্বামীর এক চোখে সমস্যা ছিল। মারা যাওয়ার সময় জন্মান্ধ দুই ছেলে ও দুই কন্যা রেখে গেছেন। তাদের লালন-পালন করে বড় করেন, বিয়ে দেন। এখন তাদের ঘর থেকে জন্মগ্রহণ করা শিশুরাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করছে। কোনোদিন ভাত মিললে খান; না মিললে না খেয়েই দিন চলে তাদের।
হোসেন আলীর বড় ছেলে আমীর হোসেন বলেন, আমার কোনো উপার্জন নাই। একবেলা খেতে পারলে আরেক বেলা খেতে পারি না। একটি বাউল গানে ঢোল বাজাতেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানুষজন সাধারণত নিতে চায় না। এখন আবার পায়ে সমস্যা হওয়ায় বেশি সংকটে পড়েছেন। প্রতিবন্ধী ভাতা প্রতিজন তিন মাস পর পর ২ হাজার ২৫০ টাকা পান। এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে এ টাকা দিয়ে চলা এখন কষ্টের। সরকারিভাবে কমমূল্যে যে পণ্য বিক্রি হয় তার জন্য কোনো কার্ড আমাদের দেয়া হয় না। প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ায় সেটা থেকেও বঞ্চিত আমরা।
হোসেন আলীর বড় মেয়ে হাসিনা আক্তার জানান, আমরা চার ভাইবোন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এখন আমার সংসারেও এক ছেলে এক মেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েছে। এখন আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই। তারা লেখাপড়াও করতে পারে না। আড়াই বছরের শিশুটিও এখন অসহায়। হোসেন আলীর ছোট ছেলে জাকির হোসেন বলেন, বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি ছোট ছিলাম। ছোট থেকে এ পর্যন্ত বেড়ে উঠলেও কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা এমনকি পড়ালেখারও সুযোগ পাইনি। আমার এক মেয়ে আছে জোনাকী। সেও দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন হয়ে জন্ম নেয়ায় তার বয়স যখন এক বছর তখন তার মা আমাকে ও জোনাকীকে ছেড়ে চলে গেছে। আমাকে মেনে সে সংসার করলেও ভবিষ্যতে আরো সন্তান এলে এরকম হবে সেজন্য তার মা চলে যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সুযোগ সুবিধা বা উন্নতমানের চিকিৎসা কেউ করাতে চায় তাহলে ভালো। আমরা সমাজের অন্য মানুষের ন্যায় দুমুঠো ভাত খেয়ে পরে চলতে চাই। শ্রীপুর উপজেলা সামজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, মৃত হোসেন আলীর পরিবারের আটজন প্রতিবন্ধী। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করেছি। উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে ঘর প্রদান করা হয়েছে। স্বোচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়