স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

বিশ্ব মাতাচ্ছেন ঢাকা এক্সপ্রেস

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ধরেই কাঁধের চোটের সঙ্গে লড়াই করেছেন বাংলাদেশ দলের পেসার তাসকিন আহমেদ। এই চোট থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য লন্ডনেও যান তিনি। ইনজুরির জন্য অনেক ম্যাচ হাত ছাড়া হয়েছে তার। সেই সঙ্গে চোট তার ক্যারিয়ারে ভালোই প্রভাব ফেলছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়ে বল হাতে ২২ গজে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকেন।
এবার অস্ট্রেলিয়াতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ঢাকা এক্সপ্রেস। তার সুবাদে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ মঞ্চে শুরুটা করেছে জয় দিয়ে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২৫ রান খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেন ঢাকার ছেলে তাসকিন। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে এটাই ডানহাতি টাইগার পেসারের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। এতদিন সেরা বোলিং ফিগার ছিল ১২ রানে ২ উইকেট। যাইহোক তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সুবাদে ২৪ অক্টোবর ওভালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডাচদের ৯ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। কম পুঁজি নিয়েও ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে এনে দেন তাসকিন।
বোলিং দিয়ে তার গড়ে দেয়া পথেই জয়ের গল্প লেখেন সাকিব-লিটনরা। এখানেই শেষ নয়। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন তাসকিন। ব্রিসবেনে ৩০ অক্টোবর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রেজিস চাকাভাকে আউট করে ৮ উইকেট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছেন টাইগার এই পেসার।
এই ম্যাচ শুরুর আগে তাসকিনের উইকেট ছিল ৫টি। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ উইকেট সংগ্রহ করে পৌঁছে গেছেন শীর্ষ উইকেট শিকারির তালিকায়।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা দুর্দান্ত ছিল তাসকিনের। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্বে ২০১৪ সালে ১ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অভিষেক হয় তার। একই বছর ভারতের বিপক্ষে তাসকিনের ওয়ানডে অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকেই ওয়ানডেতে ৫ উইকেট শিকার করেন।
এরপর ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ। সেই সফরেই ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে টেস্টে শুভাশিস রায়ের সঙ্গে তাসকিনের অভিষেক হয়। কিন্তু ইনজুরির জন্য একটা সময় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন তাসকিন। জাতীয় দলের কোনো পর্যায়েই ছিলেন না ডানহাতি এই পেসার। সেখান থেকে জাতীয় দলের রাস্তা খুঁজে বের করতে নিজেকে বদলে ফেলেন তিনি।
কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়ে নিজেকে দেন নতুন রূপ। ডাক পড়ে জাতীয় দলে, এরপর থেকে তিনি পেস আক্রমণের অন্যতম ভরসা। ১৫ বছর ধরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় ছিল না বাংলাদেশের। ২০০৭ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে মূল পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল টাইগাররা।
এরপর ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০২১ সালে বিশ্বকাপ মঞ্চে খেললেও দীর্ঘ ১৫ বছরের আক্ষেপ মেটাতে পারেননি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। অবশেষে এবার তাসকিনের চমৎকার বোলিংয়ে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। করোনাকালে সবকিছু যখন বন্ধ ছিল, তাসকিন তখন কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। সেই পরিশ্রমের ফল পাচ্ছেন বিশ্বকাপ মঞ্চে। তাসকিন দেখিয়েছেন কীভাবে ভিনদেশি উইকেটে চোখে চোখ রেখে ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করতে হয়। দারুণ লাইন-লেন্থে বোলিং করে ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য পেয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি। এরপর সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশকে ১০৪ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ম্যাচে ৩ ওভার বোলিং করে ৪৬ রান খরচায় ১ উইকেট শিকার করেন তাসকিন। কিন্তু জিম্বাবুয়েকে বল হাতে পাত্তা দেননি এই টাইগার পেসার। তার দারুণ বোলিংয়েই খেই হারায় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। তাইতো ম্যাচসেরার পুরস্কার নেয়ার সময় তাসকিন বলেন, এমন কিছু এর আগে কখনো দেখিনি আমি। শুরুতেই জোড়া উইকেট শিকার করে তাসকিন জিম্বাবুয়েকে চাপে ফেলেন।
তিনি প্রথম ওভারে তৃতীয় বলে ওয়েসলি মাধভেরেকে আউট করেন। তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে ওয়েসলি মাধেভেরে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন।
টপ এজ হয়ে বলটা চলে যায় ডিপ থার্ডম্যানে থাকা মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। সেটা ধরতে একটু বেগ পেলেও শেষমেশ ক্যাচ লুফে নেন কাটার মাস্টার। এর পরের ওভারে তাসকিন ফেরান অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে। এবারও অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সফলতা। তার বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ দেন আরভিন।
ইনিংসের ১২তম ওভারে টাইগার পেসার ফেরান চাকাভাকে। তাতেই তিনি বনে যান বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের সেরা বোলার। বাংলাদেশ এরপর ২ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে। আর ৬ নভেম্বর নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। দুই ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে কেমন খেলবেন তাসকিন, তা দেখতে মুখিয়ে আছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

:: কামরুজ্জামান ইমন

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়