স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

নাটকীয় সমঝোতার পথে জাপা :

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

** সম্মেলন স্থগিত রওশনের, থাকছেন বিরোধীদলীয় নেতা ** স্পিকারের আশ্বাসে সংসদে এমপিরা **
এস এম মিজান : জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব নাটকীয় মোড় নিয়েছে। গত রবিবার বিকালে সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে দলের সংসদীয় কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন জি এম কাদের। এতে সর্বসম্মতিক্রমে জাপার এমপিরা একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন- জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত সংসদে যাবেন না পার্টির এমপিরা। এরপর ওই রাতেই রওশন এরশাদ আহূত আগামী ২৬ নভেম্বরের জাতীয় পার্টির কাউন্সিল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত আসে। উভয়পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- সমঝোতার অংশ হিসেবেই হঠাৎ রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে কাউন্সিল স্থগিতের এই ঘোষণা দেয়া হয়।
সূত্র জানায়- রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের দ্ব›দ্ব নিরসনে অবশেষে সরকারের শীর্ষ মহলের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। কারণ সরকারও চায় না এ মুহূর্তে জাতীয় পার্টিতে কোনো ভাঙন ধরুক। এতে সরকারের স্বার্থও রয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপি না এলে ২০১৪ সালের মতো জাপাকেই প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সামনে আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ কারণেই সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়েই মূলত দেবর-ভাবীর এই দ্ব›দ্ব নিরসনের চেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবেই রওশন এরশাদের ডাকা ২৬ নভেম্বরের কাউন্সিল স্থগিতের ঘোষণা আসে। এ অবস্থায় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নিয়ে রওশন-জি এম কাদের টানাপড়েনের অবসান হতে যাচ্ছে বলে জাপা সূত্রে জানা গেছে। এক্ষেত্রে রওশন এরশাদই সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার আসনে থাকছেন। তবে সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গার বিষয়ে কোনো আপস করবেন না জি এম কাদের। গতকাল সোমবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কার্যালয়ে ফখরুল ইমামকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নির্বাচন করা হয়েছে সংসদীয় দলের বৈঠকে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করে। এমন পরিস্থিতিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলকে অনাকাক্সিক্ষত বিভাজনের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে যেকোনো মূল্যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে সমাধানের পথ খুঁজছিলেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। কিন্তু রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন দ্ব›দ্ব নিরসনে দলের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এতে আরো হার্ডলাইনের দিকে হাঁটেন জি এম কাদের। সবশেষ দলের প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়- সমঝোতায় না এলে প্রয়োজনে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদকেও বহিষ্কার করা হবে। যদিও সে পথে আর যেতে হচ্ছে না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কারণ ইতোমধ্যে উভয়পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সমঝোতার একটি আভাস পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান- জাপা চেয়ারম্যান অত্যন্ত সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি চান না, তার হাতে প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া দলটি কোনো কারণে বিভাজিত হোক। তিনি সবাইকে নিয়েই জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে চান। এজন্য তিনি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চান। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের খুব বেশি সময় হাতে নেই। আমাদের দলীয় প্রস্তুতিরও প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে অনৈক্যের সুযোগ নেবে অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলো। পাশাপাশি বিভ্রান্ত হবে দলের নেতাকর্মীরা। এর ফল আমাদের জন্য মোটেই ভালো হবে না। এ অবস্থায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই। এজন্যই চেয়ারম্যান চান, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে অনাকাক্সিক্ষত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার স্বার্থে কিছুটা ছাড় দিতেও প্রস্তুত তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, সমস্যা তো রওশন এরশাদই সৃষ্টি করেছেন। দল থেকে বিভিন্ন সময় বাদ পড়া কয়েকজন ব্যক্তি ম্যাডামকে বিভ্রান্ত করেছেন। রওশন এরশাদকে আমরা সম্মান করি। তিনি আমাদের মুরুব্বি। আমরা চাই, তিনি যে কয়দিন বেঁচে থাকবেন, সম্মানের সঙ্গে থাকবেন। তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর কোনো পরিকল্পনাও ছিল না। কিন্তু তার কর্মকাণ্ডে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে দলের চেয়ারম্যানকে।
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত সংসদে যাবে না বলে রবিবার ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। তবে তাদের আবেদনের বিষয়ে স্পিকারের আশ্বাস পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত পাল্টে গতকাল সোমবার সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। এ বিষয়ে জানতে জাপা চেয়ারম্যানের এক ঘনিষ্ঠ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আপনারা তো স্পিকারের আশ্বাসে সংসদে যোগ দিয়েছেন, বিরোধীদলীয় নেতার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন কিনা স্পিকার- এমন প্রশ্নে ওই নেতা বলেন- বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে স্পিকার জাপা নেতাদের বিষয়টি মানবিক উল্লেখ করে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে বলেছেন।
এদিকে রওশনের ডাকা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসীহ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার আগামী ২৬ নভেম্বর আহূত কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউই কিছু জানেন না বলে জানান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থি এক নেতা বলেন, আমরা তো সমঝোতার দিকেই যেতে চাই। সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হলে সেটি ভালো লক্ষণ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরাও চাই দল ঐক্যবদ্ধ থাকুক। দলে বিভাজন কেন হবে? সবাইকে নিয়ে আরো শক্তিশালী হোক পার্টি। সামনের জাতীয় নির্বাচনে সবাইকে নিয়েই দলকে শক্তিশালী করতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করার বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত, আট মাস চিকিৎসা নিয়ে গত ২৭ জুন থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন রওশন। এ সময় দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করেন। পরের দিন তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে দলের নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। চার দিন পর পুনরায় চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান তিনি। এর মধ্যে হঠাৎ গত ৩১ আগস্ট রওশন এরশাদ থাইল্যান্ডে চিকিৎসারত অবস্থায় দলের জাতীয় সম্মেলনের ডাক দেন। সে অনুযায়ী তিনি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করেছেন বলেও তার বরাত দিয়ে তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ জানান। এরপর দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজের জন্য জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশনকে সরানোর জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি দেয় জাপা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়