স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

তিন পাত্তি গোল্ড : অনলাইন জুয়ায় টাকা পাচার, মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ৬

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অনলাইন গেম ‘তিন পাত্তি গোল্ড’-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায়, এটিকে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছিল এর সার্বিক নিয়ন্ত্রণে থাকা ভারতের মুনফ্রগ ল্যাব। এজন্য তারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান উল্কা গেমসের সহায়তায় অপতৎপরতা চালিয়ে আসছিল। সম্প্রতি এই গেমের জনপ্রিয়তা এতই বেড়েছে যে, প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার কোটি চিপস বিক্রি হতো। প্রতি কোটি চিপস বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৬ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করা হতো। ‘তিন পাত্তি গোল্ড’-এর প্রায় ৯ লাখ নিয়মিত গেমারের কাছে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার চিপস বিক্রি হচ্ছিল। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এভাবে হাতিয়ে নেয়া প্রায় ২০০ কোটি টাকা ভারতে পাচার করা হয়েছে।
বিশাল অঙ্কের এই টাকা পাচারের মূল হোতা উল্কা গেমসের সিইও জামিলুর রশিদসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- সায়মন হোসেন, মো. রিদোয়ান আহমেদ, মো. রাকিবুল আলম, মো. মুনতাকিম আহমেদ ও কায়েস উদ্দিন আহম্মেদ। গত রবিবার রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, সিপিইউ, সার্ভার স্টেশন, হার্ড ডিস্ক, স্ক্যানার, ডিভিডি ড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নগদ টাকাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে গতকাল সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৭ সালে ভারতের মুনফ্রগ ল্যাবের সঙ্গে উল্কা গেমসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জামিলুর রশিদের পরিচয় হয়। ২০১৮ সালে তিনি মুনফ্রগ ল্যাবের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে দেড় লাখেরও বেশি টাকা বেতনে নিযুক্ত হন। মুনফ্রগ ল্যাবের অনলাইন জুয়া অ্যাপ ‘তিন পাত্তি গোল্ড’-এর জনপ্রিয়তা বাড়ায় গেমটিকে আরো ছড়িয়ে দিতে চান জামিলুর রশিদ। এজন্য বাংলাদেশে বৈধতা পেতে কয়েকজন আইনজীবীর পরামর্শে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে উল্কা গেমস লিমিটেড নামে একটি গেমিং ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেন। ২০১৯ সালে মুনফ্রগের ০.০১ শতাংশ শেয়ার উল্কা গেমসকে দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে গেমিং খাতের উন্নয়নে তারা প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে চুক্তিবদ্ধ হন। দেশে গেম ডেভেলপমেন্টের অনুমোদন থাকলেও অনলাইন জুয়া/ক্যাসিনোর অনুমোদন না থাকায় উল্কা গেমস বিভিন্ন ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আইনি বৈধতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে। এভাবেই ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ যাত্রা শুরু করে শহর নগরে ছড়িয়ে পড়ে।

উল্কা গেমসের যাত্রা গেমিং ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও তারা বস্তুত গেম ডেভেলপমেন্ট না করে তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাঠিয়ে আসছিল।
কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন বলেন, তিন পাত্তি গোল্ডের একটি অ্যাপে তিন পাত্তি গোল্ড ছাড়াও ‘রাখি’, ‘অন্দর বাহার’ ও ‘পোকার’ নামেও অনলাইন জুয়ার গেম রয়েছে। যে কোনো কাজের পাশাপাশি এই গেম খেলা যায় বলে তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে এটি জনপ্রিয়তা পায়।
র‌্যাব জানায়, বিভিন্ন রোবট প্লেয়ারের মাধ্যমে মূল গেমারদের কৌশলে হারিয়ে প্লেয়ারদের পরে আরো চিপস কিনতে উৎসাহিত করা হয়। বাংলাদেশে তিন পাত্তি গোল্ডের চিপস বিক্রির কাজটি ১৪টি অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এসব ডিস্ট্রিবিউটরের সাব-ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে। এ ছাড়াও প্রাইভেট টেবিল অপশনের মাধ্যমে অন্য প্লেয়ার থেকেও চিপস কেনা যায়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে চিপস বিক্রির টাকা ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে সংগ্রহ করা হতো। বর্তমানে উল্কা গেমসের ৪টি একাউন্টে প্রায় ৮০ কোটির বেশি টাকা রয়েছে। এছাড়া গত দুই বছর তারা মুনফ্রগ ল্যাবকে ব্যাংকের মাধ্যমে ২৯ কোটি টাকা দিয়েছে। উল্কা গেমসের মোট ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল। বেতন দেয়াসহ অফিস পরিচালনায় প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হতো। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাৎসরিক বেতনের ৩০-৯০ শতাংশ হারে বোনাস দেয়া হতো। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে দেশের বাইরে অনলাইন জুয়ার টাকা পাঠানো হতো।
র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, জামিলুর রশিদ ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই মোবাইল গেমের প্রতি আসক্ত হওয়ায় ২০১৫ সাল থেকে তিনি মোবাইল গেম তৈরির কাজ শুরু করেন। ‘হিরোজ অব ৭১’ ও ‘মুক্তি ক্যাম্প’ নামে ২০১৭ সালে দুটি গেম নির্মাণের জন্য তিনি সরকারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা অনুদান পান। ২০১৯ সালে উল্কা গেমস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিইও হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তিনি মুনফ্রগ থেকে মাসে প্রায় ৪ লাখ টাকা বেতন পেতেন। এছাড়া বাৎসরিক আয়ের ৯০-১০০ শতাংশ বোনাস পেতেন তিনি। তার বিভিন্ন একাউন্টে বেশ কিছু টাকা, একটি দামি গাড়ি এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়