স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন : প্রস্তাবিত সংশোধনীর বাস্তবায়ন জরুরি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান ৮ কারণের মধ্যে ৬টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। কোনোভাবেই ক্ষতিকর এই পণ্য নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তামাক ব্যবহারকারীদের হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি এবং তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন, যা উদ্বেগজনক। দেশে ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে কিছু সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ অধিকতর শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের পরে আবারো সংশোধন করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রণীত বিদ্যমান আইনটির দুর্বলতা নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালেই ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্য অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের নির্দেশনাও দেন তিনি। সরকারের অঙ্গীকার থাকার পরও তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক উদ্যোগ আটকে রয়েছে দীর্ঘ সময়। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। অবিলম্বে এর বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা আশাবাদী। গত রবিবার মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) আয়োজনে তামাকবিরোধী প্রচারণায় গুরুত্বারোপ করা হয়। আমরা তাদের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তামাক কোম্পানিগুলো মানুষকে মরণ নেশায় উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও লোভনীয় প্রচারণা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকবিরোধী প্রচারণা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সবক্ষেত্রে জনসাধারণের বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করা দরকার। তামাকবিরোধী আন্দোলনকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যে আইনটির খসড়া সংশোধনী তৈরি ও তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং অংশীজনের মতামত নেয়ার কাজও শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই খসড়া চূড়ান্তের কাজটি এগোচ্ছে ধীরগতিতে। অবিলম্বে এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। খসড়া সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্য উৎপাদন, আমদানি, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। আমরা মনে করি, সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ফাঁকগুলো রয়েছে সেগুলো বন্ধ হবে। এছাড়া তামাকের ব্যবহার কমবে ও নতুন করে জনগণ তামাক গ্রহণে নিরুৎসাহিত হবে। এতে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে অধূমপায়ীরাও রক্ষা পাবে। এছাড়া গণপরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে। শুধু তামাকবিরোধী সংগঠন নয়, সর্বস্তরের মানুষ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। তামাকমুক্ত দেশ গড়তে এর বিকল্প নেই। কোম্পানিগুলো সব সময়ই চেষ্টা করে তামাকের বিরুদ্ধে আইনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম যাতে না হয়। তাদের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে রুখে দাঁড়াতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়