স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

অসময়ের ভাঙনে পদ্মায় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বাড়িঘর : রাজশাহীর বাঘা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে : একদিকে অসময়ে পদ্মার ভাঙন আরেক দিকে কার্তিকের মঙ্গা। যা, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে গত এক সপ্তাহে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে ৩১টি পরিবার। বসতভিটাসহ পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমি ও গাছপালা। তুলে নেয়া হয়েছে নাটের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ কর্তৃক বসানো ২১টি পুল। অসময়ের ভাঙন দেখা দিয়েছে বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাশখালী এলাকায়।
গতকাল সোমবার সরজমিনে পদ্মার চরাঞ্চলের কালিদাসখালী এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফয়েজ উদ্দিন, মিস্টার হোসেন, সুরমান আলী, মোজাম আলী, মোহাম্মদ আলী, আবুল ফজল, মিশু আহমেদ, মহর উদ্দিন, জাফর খা, আবুল গায়েন, আহাদুল ইসলাম, আবু সাইদ, আনোয়ার শিকদার, আবুল বিশ্বাস, হাবু আলী, আবদুল খালেক, আলিফ মোল্লা, ওলিউর রহমান, জুয়েল আহমেদ, ওহাব মেকার, জামাল উদ্দিন ও মালেক ব্যাপারির মতো অনেকের বাড়িঘর, গাছপালা, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই অন্যত্র সরে গেছে তারা। ভাঙনের মুখে রয়েছে মান্নাফ খা, আদম আলী, রবিউল ইসলাম, সাহেব খা, আলিফ হোসেন, হাসান আলী দোকানদারসহ ৪৫টি পরিবার। পদ্মা গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে এসব পরিবারগুলো। হাসান আলী দোকানদার বলেন, এ বছরেই চারবার পদ্মার ভাঙনে পড়েছেন তিনি। আবারো ভাঙনের মুখে পড়ে দোকান সরিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় তার আয়ের উৎস। আবুল বিশ্বাস, হাবু আলী বলেন, কার্তিকের এই সময়ে এলাকায় তেমন কোনো কাজ থাকে না। কাজের সন্ধানে এলাকার বাইরে যেতে হয়। এবার ধারণা করছিলেন পদ্মার পানি কমে গেলে এলাকায় চাষিদের জমিতে কাজ করবেন। কিন্তু ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকায় সেটাও হচ্ছে না। বাইরেও কাজে যেতে পারেননি। আরেক বেকার কামলা আবু সাইদ, দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে বলেন, বর্তমানে জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে ৩/৪০০ টাকার মজুরিতে কাজ করে চলে না। এরপরেও এলাকায় তেমন কোনো কাজ নেই। ঘরে ৪ জন সদস্য। কি করে বাঁচি? কামরুল ইসলাম জানান, অসময়ের ভাঙনে আবাদ করা কপি ও টমেটোর এক বিঘা জমি পদ্মায় চলে গেছে। এর আগে পানি বৃদ্ধির কারণে কামরুল ইসলামের, জারমান আলীর, মোজাম্মেল হকের, আব্দুল মান্নানের, আসাদুল সরকারের ও বাবলু প্রামাণিকের পেঁয়াজ ক্ষেত ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলে জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ বিঘার মতো। কালিদাসখালী গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, ৩০ বিঘা জমির সবটাই পদ্মায় চলে গেছে। বছর চুক্তিতে ৫ হাজার ২০০ টাকায় ৭ কাঠা জমি নিয়ে ঘর করে বসবাস করছেন। সেই বাড়িও ভাঙনের মুখে পড়েছে। অন্যত্র ভাড়া জমি পেলে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিবেন। ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চরকালিদাসখালী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) শহিদুল ইসলাম জানান, তার ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ২৬২ জন। পরিবার ছিল চার শতাধিক। কয়েকবার নদীভাঙনের কবলে পড়ে দুই শতাধিক পরিবার বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার বলেন, কমবেশি ভাঙন লেগেই আছে। তবে অসময়ের এই ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পদ্মা পাড়ের লোকজন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, অসময়ের ভাঙনে ও হঠাৎ পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বাঘা পল্লী বিদ্যুৎ সাবজোনের ডিজিএম সুধীর কুমার বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিদ্যুতের ২১টি পুল উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে যারা অন্যস্থানে বাড়ি করছে, তাদের সংযোগ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, অসময়ে পদ্মার ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়