মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ : ফরহাদকে সরানো হচ্ছে, মুস্তাফিজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

আগের সংবাদ

সব দলকেই নির্বাচনে চাই

পরের সংবাদ

বাউফলে চিকিৎসাবঞ্চিত বিচ্ছিন্ন জনপদের মানুষ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অতুল পাল, বাউফল (পটুয়াখালী) থেকে : বাউফলের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় ২২ হাজার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রায় এক দশক আগে চন্দ্রদ্বীপকে ইউনিয়ন করা হলেও আজো সেখানে গড়ে ওঠেনি কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অবহেলিত ওই মানুষগুলোর একমাত্র ভরসা একটি জরাজীর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিক এবং একজন হেলথ কমিউনিটি কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। 
স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালে তেঁতুলিয়ার বুকে জেগে ওঠা  ১১টি চর নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে প্রায় ২২ হাজার মানুষের বসবাস, যাদের সিংহভাগই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের প্রধান পেশা হচ্ছে মাছ ধরা এবং কৃষি কাজ করা। মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। কিন্তু একদশকেও ওই মানুষগুলোর চিকিৎসাসেবা দিতে গড়ে ওঠেনি  কোনো হাসপাতাল কিংবা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে তিনটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকার কথা থাকলে চন্দ্রদ্বীপে রয়েছে একটি ক্লিনিক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ১৯৯৮ সালে ওই ক্লিনিকটি স্থাপন করা হয়। সংস্কারের অভাবে এখন সেই ক্লিনিকটিও জরাজীর্ণ। ২২ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় সপ্তাহে ৬দিন মাত্র একজন প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) এবং তিন দিন পর পর একজন স্বাস্থ্য সহকারী গিয়ে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী ওই ক্লিনিকে সপ্তাহে দুই দিন একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ও তিন দিন একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই। ওই ক্লিনিকের অনুকূলে ৬ হাজার মানুষের প্রতি দুই মাসের জন্য ১ কিট ও কিছু ওষুধ সামগ্রী দেয়া হয়, যা দিয়ে ২২ হাজার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হচ্ছে।
সরজমিন দেখা গেছে, ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন প্রায় ৫০ জন নারী-পুরুষ এবং গর্ভবতী মা ও শিশু। যারা জ¦র, সর্দি-কাশি এবং এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ক্লিনিকের সিএইচসিপি সিদ্দিকুর রহমান

তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ওই সিএইচসিপি। এ সময় ওষুধেরও সংকট দেখা যায়। স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা কচুয়া গ্রামের আকবার হাওলাদার (৪৭) বলেন, উপজেলা থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন ইউনিয়নে বসবাস করি। উপজেলা হাসপাতালে যেতে আমাদের একমাত্র ভরসা নৌকা বা ট্রলার। উত্তাল তেঁতুলিয়া পাড়ি দিয়ে আমাদের সেখানে যেতে হয়। ভয়াল ওই তেঁতুলিয়া পাড়ি দিতে অনেক সময় দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয়েছে। আমাদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই ক্লিনিক।
মাতৃত্বকালীন সেবা নিতে আসা দিয়ারা কচুয়া গ্রামের আসমা বেগম (৩৯), চর রায় সাহেবের রাবেয়া বেগম (২৯) ও চর ওয়াডেলের ঝুমুর বেগম (২৫)সহ অনেকে বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আসতে হয়। এসেও ওষুধ পাই না। সঠিক চিকিৎসাও পাই না।
এ বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি পরিবার কল্যাণকেন্দ্র ও তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকের বিপরীতে মাত্র একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। যার কারণে চিকিৎসা সেবা সাধারণ মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, নতুন ইউনিয়ন হওয়ায় এখন জনবল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংকট রয়েছে। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চন্দ্রদ্বীপে দুটি কমউনিটি ক্লনিক ও একটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। অতিদ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়