মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ : ফরহাদকে সরানো হচ্ছে, মুস্তাফিজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

আগের সংবাদ

সব দলকেই নির্বাচনে চাই

পরের সংবাদ

প্রতিবাদকারী কিশোরীর লাশ চুরির অভিযোগ : ইরানে এবার হিজাব খুলে স্কুলছাত্রীদের প্রতিবাদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইরানে চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয় ছাপিয়ে এবার স্কুল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। মাথা থেকে হিজাব খুলে বাতাসে দুলিয়ে এবং ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করেছে দেশটির স্কুলছাত্রীরা।
ঠিকমতো হিজাব না পরায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির। মাসার দাফনের দিন থেকে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সেই আগুন এখন পুরো ইরানজুড়ে জ্বলছে। নরওয়েভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস বলেছে, বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ইরানে ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন।
ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত রবিবার রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ তালিকায় নতুন যোগ হলো স্কুল শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।
তেহরানের পশ্চিমের নগরী কারাজে একদল ছাত্রীকে একজন শিক্ষা কর্মকর্তার সামনে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রীরা ‘আপনার লজ্জা করা উচিত’ বলে স্লোগান দিচ্ছে এবং তাদের পানির বোতল ছুড়ে মারছে। খানিকটা বাকবিতণ্ডার পর ওই ব্যক্তিকে দ্রুত একটি ফটকের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। পেছন পেছন ছাত্রীরাও স্লোগান দিচ্ছিল এবং বোতল ছুড়ে মারছিল।
কারাজ নগরীর আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ‘যদি আমরা একতাবদ্ধ না হই, তবে তারা আমাদের একে একে মেরে ফেলবে’ বলে স্লোগান দিচ্ছে। দক্ষিণের নগরী শিরাজে সোমবার

কয়েক ডজন স্কুলছাত্রী একটি প্রধান সড়ক আটকে বিক্ষোভ দেখায়। এ সময় তারা মাথা থেকে হিজাব খুলে বাতাসে নাড়ছিল এবং ‘স্বৈরাচারের পতন চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল।
মঙ্গলবারও কারাজ, তেহরান, সাকাজ ও সানানদাজ নগরীতে স্কুলছাত্রীদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। একটি ছবিতে দেখা গেছে, এক দল ছাত্রী শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মাথার হিজাব খোলা। তাদের সামনে ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এবং বর্তমান ইসলামিক রিপাবলিকের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির ছবি। ছাত্রীদের কেউ কেউ ওই ছবির দিকে মধ্যমা উঁচু করে রেখেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা চলমান বিক্ষোভকে দাঙ্গা ও এজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করার পর প্রতিবাদে যোগ দিল স্কুলছাত্রীরা।
প্রতিবাদকারী কিশোরীর ‘লাশ চুরি’র অভিযোগ : ইরানের নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশটিতে চলমান বিক্ষোভে অংশ নেয়া ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরীর লাশ চুরি এবং গোপনে দাফনের অভিযোগ উঠেছে। নিহত কিশোরীর নাম নিকা শাকারামি। গত সোমবার শাকারামির লাশ দাফনের পরিকল্পনা ছিল তার পরিবারের। কিন্তু লাশ ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং তাদের গ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গোপনে দাফন করা হয়।
২০ সেপ্টেম্বর তেহরানে বিক্ষোভে অংশ নেয়ার পর ১০ দিন নিখোঁজ ছিলেন শাকারামি। তার চাচি বলেছেন, এক বন্ধুর কাছে পাঠানো শেষ বার্তায় সে বলেছিল নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা তাকে তাড়া করছে। শেষ পর্যন্ত রাজধানীর একটি কারাগারের মর্গে শাকারামির মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। আমরা যখন তাকে শনাক্ত করতে যাই তখন তার মরদেহ আমাদের দেখতে দেয়া হয়নি। শুধু কয়েক সেকেন্ডের জন্য মুখ দেখানো হয়েছে।
রবিবার পরিবারের সদস্যরা শাকারামির মরদেহ খোরামাবাদে পাঠান। দিনটি হওয়ার কথা ছিল তার ১৭তম জন্মদিন। চাপের মুখে পরিবারের সদস্যরা রাজি হয়েছিলেন পারিবারিকভাবে দাফন করতে। কিন্তু খোরামাবাদ থেকে নিরাপত্তাবাহিনী তার লাশ ‘চুরি’ করে নিয়ে যায় এবং ভেসিয়ান গ্রামে দাফন করে।
খোরামাবাদে কয়েকশ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। শাকারামিকে নিয়ে সোশাল মিডিয়া পোস্ট দেয়া আতাশ নামের একজনকে রবিবার গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনী আতাশের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবারের কেউ বিক্ষোভে অংশ নিলে আতাশকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব তেহরানের : তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরান নিয়ে ‘হস্তক্ষেপমূলক মন্তব্য’ করেছে অভিযোগে তুলে তেহরান এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক বলেছেন, যুক্তরাজ্যের একপাক্ষীয় বিবৃতিতে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের বিরুদ্ধে দাঙ্গাবাজ সন্ত্রাসীদের সক্রিয় দৃশ্যপট রয়েছে। ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে লন্ডন ‘মিথ্যা এবং উসকানিমূলক’ মন্তব্য করেছে।
এর আগে সোমবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লন্ডনে নিযুক্ত ইরানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করে। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে অভিযোগে যুক্তরাজ্য এই পদক্ষেপ নেয়। তেহরানের কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্রিটেনের যে কোনো অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে তেহরান সম্ভাব্য বিকল্প বিবেচনা করবে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিম নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের যে উন্নতি হয়েছে তাতে শত্রæরা ক্ষুব্ধ ও ক্ষিপ্ত। দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ইব্রাহিম রাইসি বলেন, শত্রæরা যেসব নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে সেগুলো সম্মানজনকভাবে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তেহরান। এ ব্যাপারে সমান মনোযোগ দেয়া হয়েছে। শত্রæরা ভালো করে জানে যে, তাদের কথিত সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি ব্যর্থ হয়েছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটি স্বীকারও করেছে যে, নিষেধাজ্ঞা কাজ করছে না। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। শত্রæরা ইরানের উন্নতি সহ্য করতে পারছে না। ইরানের সা¤প্রতিক বিক্ষোভকে ‘বিদেশি মদতপুষ্ট’ বলেও আখ্যায়িত করেন রাইসি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়