মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ : ফরহাদকে সরানো হচ্ছে, মুস্তাফিজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

আগের সংবাদ

সব দলকেই নির্বাচনে চাই

পরের সংবাদ

উখিয়ায় টোকেন বাণিজ্যে কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জসিম আজাদ, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : কক্সবাজারের উখিয়ায় টোকেন বাণিজ্য হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নেই কোনো পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা, যানজটে নাকাল পথচারী ও যাত্রীরা, সঠিক পদক্ষেপ নেই ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের।
মরিচ্যা থেকে পালংখালী পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি সিএনজি থেকে মাসে ৬০ লাখ টাকারও বেশি টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে কথিত নামধারী সিএনজি সমিতির সিন্ডিকেট ও সড়কে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের আইনি জটিলতা থেকে বাঁচতে উখিয়ার বিভিন্ন সড়কে প্রতিমাসে ৩০০ টাকার টোকেন-স্টিকার দিয়ে চলছে সহস্রাধিক অবৈধ সিএনজি। পার্কিংয়ের সুব্যবস্থার কথা বলেও লাইন খরচের নাম দিয়ে সমিতি কর্তৃক প্রতি গাড়ি থেকে নির্ধারিত একটি ফি আদায় করে যাচ্ছেন সমিতির লাইনম্যানরা। অধিকাংশ সিনএনজি গাড়ির নম্বরপ্লেট, রুট পারমিট কিংবা কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। এসব গাড়ির চালকরা একটি টোকেন বা স্টিকার দেখিয়ে পুলিশের তল্লাশি থেকে মুক্তি পায়। সূত্রে জানা যায়, এই টোকেনগুলো বিক্রি করেন নামধারী সমিতির লাইনম্যানরা।
কি আছে এই টোকেনে এমন তথ্য অনুসন্ধানে উঠে আসে, উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা থেকে পালংখালী পর্যন্ত ৩টি সিএনজি সমিতির আওতায় প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার) তিন চাকার সিএনজি ও অটোগাড়ি রয়েছে। এই সমিতির নিয়ন্ত্রিত গাড়ি এবং ড্রাইভারকে নিরাপদ রাখতে ৩০০ টাকা করে মাসোহারা নিয়ে একটি টোকেন ধরিয়ে সড়কে চলাচলের জন্য অনুমতি দিয়ে থাকেন। এতে সড়কে পুলিশ বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়লে সমিতিগুলো তাদের সমস্যা সামাধান করে দেয়।
অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে সিএনজি সমিতি থেকে প্রতিমাসে নির্ধারিত অংকের মাসোহারা দিতে হয় যাতে সমিতির কোনো গাড়ি পুলিশ না আটকায়। গাড়ি বৈধ হোক বা অবৈধ হোক সমিতি প্রদত্ত টোকেন থাকলেই গাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজি ড্রাইভার বলেন, গাড়ির যাবতীয় কাগজপাতি ঠিক থাকলেও সমিতির মাসিক টোকেন না থাকলে পুলিশ গাড়ি আটকিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে মামলা দেয়, নইলে মুচলেকা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়। এখানে গাড়ির লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে ৩০০ টাকা দামের টোকেন অনেক দামি। তাই আমরা মাসিক টোকেন নিয়ে থাকি।
ব্যবসায়ীদের মতে, অবৈধ গাড়ি এবং ড্রাইভার দ্বারা যেমন সড়কে সমস্যা সৃষ্টি হয় তেমনি এই অবৈধ মাসিক টোকেন বাণিজ্যের কারণে সরকার বড় রকমের রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রতি মাসে এই কথিত সমিতিগুলো লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে- যা থেকে সরকারের কোষাগারে একটি পয়সাও জমা হচ্ছে না।
এদিকে উখিয়ার সড়কগুলোতে যেমন বেড়েছে অবৈধ সিএনজি ও অটোরিকশা তেমনি বেড়েছে যানজট। কারণ, নেই কোনো পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। সড়কে অনিয়ন্ত্রিত ফিটনেসবিহীন ড্রাইভার দ্বারা প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সড়কে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাইওয়ে পুলিশের নেই কোনো ভূমিকা। সচেতনতায় নেই কোনো প্রচার প্রচারণা। আছে শুধু সড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগ। মাসদেড়েক আগে শাহপুরী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জয়নাল আবেদীনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, একটি গাড়ি আটকিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে গাড়ির মালিক দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় গাড়ি জব্দ করে নিয়ে যায়। পরে তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালায় ভুক্তভোগী পরিবার ও সাধারণ জনগণ। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটেছে বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী ড্রাইভাররা।
উখিয়া সিএনজি সমিতির সভাপতি মামুন চৌধুরী বলেন,

সমিতি করা হয়েছে গাড়ি এবং ড্রাইভারদের নিরাপত্তা ও সুবিধা দেয়ার জন্য, এখানে টাকার কোনো কাজ কারবার নেই। তাছাড়া মাসিক টোকেন উখিয়া সমিতি নেয় না, অন্য সমিতির ব্যাপারে আমরা অবগত নই।
কোটবাজার সিএনজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরিফ চৌধুরী জানান, সিএনজি সমিতির নাম দিয়ে কিছু অবৈধ কালোবাজারি এসব টোকেন বাণিজ্য করেন। কিন্তু প্রকৃত সিএনজি মালিক সমিতি টোকেন বাণিজ্য করে না। কোটবাজার সিএনজি মালিক সমিতি সড়কে ড্রাইভার এবং গাড়ি নিরাপদ রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে, কিন্তু কারো কাছ থেকে একটা পয়সাও নেয়া হয় না। তবে মাঝেমধ্যে থানার পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সমিতি থেকে ফ্রি গাড়ি দেয়া হয়, তাও যে ড্রাইভারের আপত্তি থাকে তাকে দেয়া হয় না।
মরিচ্যা সিএনজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ বলেন, গত ডিসেম্বরে আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো গাড়ি থেকে মাসিক টোকেন দিয়ে টাকা নেয়া হয়নি। শুধু ড্রাইভারদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য আমরা সংগঠন করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, হাইওয়ে পুলিশ কোনো ধরনের মাসিক চাঁদা নেয় না, কোনো সমিতি যদি বলে মাসিক চাঁদা দিয়েছে তবে যাকে দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া সড়কে অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
উখিয়ার ট্রাফিক সার্জন পলাশ পাল বলেন, যানজট নিরসনের জন্য আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি, পাশাপাশি অদক্ষ চালক ও অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সিএনজি সমিতির কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়