সিনহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়নে এবার গুরুত্ব দিন

পরের সংবাদ

গাজীপুরের নদী, খাল ও বিলের পানি ব্যবহারের অযোগ্য : কারখানার দুষিত বর্জ্যে বিষাক্ত জনপদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন জর্জ, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : গাজীপুরের উল্লেখযোগ্য নদী, খাল ও বিলগুলোর পানি মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। এখন সেই পানিগুলো ফসলে ব্যবহারেও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন কল কারখানার নির্গত দুষিত বর্জ্যে পানি ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে। বিষাক্ত রাসায়নিক পানি একত্রিত হয়ে পড়ছে তুরাগে।
পাশের বানিয়ারচালা গ্রামের যুবক সোহাগ মিয়া বলেন, ১২ বছর আগেও লবণদহ খালের সরু সেতুর ওপর এলাকার মানুষ অবকাশ যাপন করতে যেত। খালে প্রবহমান ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে মুখে লেগে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এ খাল দিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা ও গাজীপুরের শ্রীপুর এবং সদর উপজেলার অধিকাংশ কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য প্রবাহিত হয়।
গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার স্থানীয় যুবক সবুজ মিয়া বলেন, লবণদহ খালটি শ্রীপুর থেকে উৎপন্ন হয়ে সদর উপজেলার বানিয়ারচালা, ভবানীপুর হয়ে মির্জাপুরে গিয়ে শালদহ নদীর সঙ্গে মিশেছে। শালদহ নদীতে প্রবাহিত হয়ে বিষাক্ত বর্জ্য তুরাগে গিয়ে পড়ছে।
ভবানীপুর এলাকার গৃহিণী আমেনা খাতুন বলেন, নাকে মুখে রুমাল দিয়ে রাখতে হয়। বর্ষাকালে কালো পানি কিছুটা রং বদলায়। ঈদের সময় কারখানা বন্ধ থাকলে পানি সাদা হয়। কারখানা খোলা হলের আবার পানির রং কালো হয়।
স্কুলছাত্র শিমুল, জনি ও রাজীব বলেন, বাইরে খেলাধুলা করতে বের হলেই ঝাঁঝালো গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। এরকম দুর্গন্ধ অব্যাহত থাকলে মানুষ বাঁচবে না।
স্থানীয় কৃষক আফাজ উদ্দিন নূরু বলেন, এখন সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। তারপরও পানির ঝাঁঝালো গন্ধ রয়ে গেছে। কারখানার বিষাক্ত পানির সঙ্গে প্রাকৃতিক পানি মিশে যেতেও সময় লাগে। কারখানার রাসায়নিক পানির বৈশিষ্ট্য এমন যে, বৃষ্টির পানিতে বেড়ে যাওয়া খালের পানি জমির পানির সঙ্গে মিশে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে। শুষ্ক মৌসুমে রাসায়নিক পানির দুর্গন্ধের তীব্রতা এলাকার বাতাসকেও দুষিত করে তোলে। আগে তিনি নিজেই চাষাবাদ করতেন। বছর দশেক ধরে তার জমি বর্গা দিয়েছেন। পানি বিষাক্ততার কারণে তিনি নিজে এখন আর চাষাবাদ করেন না। খালে নেমে যাওয়ার ভয়ে গবাদি পশুগুলো উম্মুক্ত ছেড়ে দিয়ে পালন করতে পারেন না।
শ্রীপুর উপজেলা জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, লবলং খালের পানি ছিল স্বচ্ছ, খুব সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত, বর্তমানে দখল ও দূষণের কারণে মাছ তো দূরের কথা কোনো জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। একদিকে দূষণ অন্যদিকে দখল, এ দুই মিলে আজ লবলং খাল বিলুপ্তির পথে। দখল ও দূষণ মুক্ত করার জন্য নদী রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে বলে আসছি। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশননের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশের মূল দূষণকারী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাদের যে নিদারুণ অবহেলা সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। গাজীপুরের যে পানি সেটা বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই জনপদ একটা বিষাক্ত জনপদে পরিণত হয়ে গেছে। বিশাল কারখানার সমান্য জরিমানা দিয়ে ক্ষতিপূরণ হবে না। আইন খতিয়ে দেখে যারা পরিবেশের ক্ষতি করছে তাদের জেলে নিতে হবে।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, অনেক কারখানা বায়োলজিক্যাল ইটিপি ব্যবহার করে। আমরা সম্প্রতি মেঘনা নিট কম্পোজিট কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে তাদের পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যানটা (পিএইচ) বন্ধ পেয়েছি। তারা (কারখানা কর্তৃপক্ষ) বলেছে পানির লেবেলটা বাড়লে তারা প্ল্যানটা চালু করে। এটা অনেক বেশি টেকনিক্যাল বিষয়। এখন আলোচনা করা যাবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়