সিনহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়নে এবার গুরুত্ব দিন

পরের সংবাদ

ওয়াশিংটন পোস্টকে শেখ হাসিনা : ক্যাম্প জীবন ছেড়ে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যেতে চায়

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : জাতিসংঘে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সাহায্য চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ক্যাম্পের জীবন ভালো নয়। এই জীবন ছেড়ে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরতে চায়। তাছাড়া আমাদের বাংলাদেশ খুবই ছোট এবং জনবহুল দেশ। আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থা আমেরিকার মতো নয়। আমেরিকা একটি বিশাল দেশ। তাদের প্রচুর খালি জমি ও কাজের সুযোগ রয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক নিয়ে কলাম লিখেছেন ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক পেটুলা দেভোরাক। ওই কলামটিও ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে। কলামের চুম্বক অংশ আমাদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী উত্তর ভার্জিনিয়ায় যান। সেখানে একটি হোটেলে অবস্থানকালে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক পেটুলা দেভোরাককে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ নাইমি। নিজের ছয় বছর বয়সি মেয়ে জোয়াকে একাই লালন-পালন করছেন তিনি। জোয়াকে দেশের উচ্চতম স্থানে দেখতে চান এই বাবা। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি বিবেচনায় নাইমির এই আশা, অর্থাৎ নারীপ্রধান সরকার কি গ্রহণযোগ্য? না, খুব শিগগিরই এমন সম্ভাবনা সেখানে দেখা যাচ্ছে না। নাইমি বলেন,

‘আমি আমার মেয়েকে সেই প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করাতে ইচ্ছুক। তিনি নারী জাগরণের এবং নারী নেতৃত্বের একটি শক্তি।
ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি নারী সরকারপ্রধান হওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার চেয়ে বেশি লোক নিয়ে একটি দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। অন্তত ২০টি হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া সরকারপ্রধান তিনি। এছাড়া হাসিনা একজন দাদি। ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত ছেলে ও ১৬ বছরের নাতনিকে নিয়ে নিজের ৭৬তম জন্মদিন পালন করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী হয়ে কীভাবে নাতি-নাতনিদের সামনে দাদি হওয়ার জন্য সময় পান? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি তাদের (ছেলের পরিবার) জন্য রান্না করি। তার বাসায় আমি চিকেন বিরিয়ানি রান্না করি। সেখানে আমার নিজের রান্নাঘর আছে যা শুধু আমার জন্য।’
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, এটি একটি জটিল ও বিপর্যস্ত জাতি, যাকে শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি একজন দূরদর্শী নেতা। জাতিসংঘে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সাহায্য চেয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্যাম্পের জীবন তেমন ভালো নয়। তারা তাদের দেশে ফিরতে চায়।’
যখন শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা হয় তিনি বলেন, এ সময় নিজের হাত উত্তর ও দক্ষিণে নিয়ে শেখ হাসিনা জিজ্ঞাসা করেন, কেন মার্কিন সরকার রোহিঙ্গা অভিবাসীদের নিয়ে চিন্তিত হবে। ১৭ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ নিয়ে বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। আমাদের দেশ খুবই ছোট। এর আগে শেখ হাসিনার সহযোগী পেটুলা দেভোরাককে বলেন, আমরা উইসকনসিনের (যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য) আকারের।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তের সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে দেশটিতে জঙ্গিবিরোধী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান নিয়ে শেখ হাসিনার প্রশাসনের পুলিশ বাহিনীও তদন্তের সম্মুখীন হয়েছে।
একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও সন্ত্রাসীদের প্রতি শেখ হাসিনার কঠোর ও জিরো-টলারেন্স পদ্ধতির জন্য ২০১৫ সালে তাকে অভিনন্দন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শেখ হাসিনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাইরাল হওয়া মিম নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘নারীরা পুরুষদের চেয়ে ভালো।’ এরপর তিনি হেসে উঠলেন। বললেন, আমি আমাদের দেশের নারীদের কষ্ট বুঝি। কারণ তারা দারিদ্র্য ও শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে। তাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এতে করে কীভাবে একটি দেশের অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হয় তা আমি বুঝি।
গত এক দশকে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে দারিদ্র্যতা ব্যাপকভাবে কমেছে। শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত হয়েছে ও আবাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আর কুড়েঘর নেই।
নতুন দেশ হিসেবে জন্ম নেয়ার পর বাংলাদেশজুড়ে দারিদ্র্যতা দেখা দেয়। ওই সময়ে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ ছিল এটি। তবে ২০১৫ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বলে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। স্বাস্থ্য ও আবাসন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নারীদের বিনিয়োগ দেশকে উন্নত করতে সাহায্য করেছে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার পর শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন, তার পশ্চিম সফরের নীরব অংশ শুরু হয়েছে। তবে এমনটি হয়নি। তিনি রির্টজ হোটেলে রয়েছেন এমন সংবাদ সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি কমিনিউটিতে দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এর জেরে শেখ হাসিনার অবস্থানকৃত হোটেলের লবিতে ভিড় জমে। এর মধ্যে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ইউসুফ চোধুরী (৬৬)।
শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেয়া ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বলেন, ‘ইউসুফ চৌধুরী একটি কার্ড বের করে বলেছিলেন, আমি সকাল ৬টায় বোস্টনের একটি প্লেনে উঠেছিলাম। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার লড়াইয়ে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। আমাকে সাহায্য করা যায় কিনা দেখেন।
বাংলাদেশিদের ভিড়ে অভিভূত হয়ে পড়েন হোটেলের কর্মীরা। বারবার আক্রমণের শিকার হয়েও শেখ হাসিনা উৎসুক জনতার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন। হোটেলে আসাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল পুরুষ। তবে সেখানে গোলাপি রঙের কাপড় পরিধান করে উপস্থিত ছিলেন জোয়া। এছাড়া ছিলেন ২৪ বছরের মালিহা জামান, যার সেদিন ছুটি ছিল।
দুই বছর আগে বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা মালিহা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি এ রকম নারীকে দেখতে এখানে এসেছি। তিনি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেন। শেখ হাসিনার তৈরি একটি শিক্ষা উদ্যোগের জন্য আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি।’
রির্টজের হলরুমে যখন পুরুষরা শেখ হাসিনাকে দেখার জন্য ভালো অবস্থান খুঁজছিলেন ঠিক তখনই আরেক নারী ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কি প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ করে তুলেছে। শাহেদা পারভীন নামের ওই নারী বলেন, ‘শেখ হাসিনা বয়স্ক লোক ও শিক্ষা নিয়ে ভাবেন। তিনি গণপরিবহন নিয়ে কাজ করছেন। তিনি শিশুদের সম্পর্কে ভাবেন ও গর্ভবতী নারীদের যতœ নেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়