জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুর্ভোগ

পরের সংবাদ

ফুটবলের দৈন্যদশা কাটবে কবে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। সারা বিশ্বেই রয়েছে এ খেলার গ্রহণযোগ্যতা। নাটকীয়তা, উত্তেজনা, শৈল্পিক ইত্যাদি কারণে ফুটবল খুব জনপ্রিয়। ফুটবল মানেই উন্মাদনা, শিহরণ জাগানিয়া কিছু। পরিপূর্ণ আবেগ, ক্ষুরধার মস্তিষ্কে মানুষ ফুটবলকে বেশি উপভোগ করে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কিছু সময় বাংলাদেশে ফুটবল খুবই জনপ্রিয় ছিল। আবেগপ্রবণ জাতি হিসেবে পরিচিত আমাদের দেশের মানুষ ফুটবল কত ভালোবাসে তা বিশ্বকাপ চলাকালীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকেই উপলব্ধি করা যায়। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে অলিগলিতে পর্দা লাগিয়ে এলাকার মানুষ একসঙ্গে দল বেঁধে খেলা দেখা, গাড়ি, বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে পছন্দের দলের পতাকা টাঙানো, বিভিন্ন দলের সমর্থকদের মিছিল, পছন্দের খেলোয়াড়ের নামাঙ্কিত জার্সি পরা ইত্যাদি ফুটবলের প্রতি এ দেশের মানুষের আবেগের প্রকাশ। তবে একটা সময় আবাহনী বনাম মোহামেডানের ম্যাচ কিংবা বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ ছিল, তার ছিটেফোঁটা এখন আর নেই।
দেশের ফুটবলের এমন দৈন্যদশার মধ্যেই কয়েক দিন আগে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তুলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেয় সাবিনা খাতুনের দল। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে মোহিত করে রাখে দর্শক-সমর্থকদের। বিপক্ষ দলকে ভাসিয়ে দিয়েছে গোলের বন্যায়। মালদ্বীপকে ৩ গোলে হারিয়ে শুরুর পরের ম্যাচেই পাকিস্তানের জালে জড়ায় হাফ ডজন গোল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয় ৩-০ গোলে। সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলার মেয়েরা।
মেয়েদের ফুটবলের এমন সাফল্যের বিপরীতে উল্টো চিত্র ছেলেদের ফুটবলে। সম্প্রতি দুইটি ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে অংশ নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে কম্বোডিয়াকে ১-০ গোলে হারায় জামাল ভূঁইয়ার দল। দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন রাকিব হোসেন। এ জয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সাত ম্যাচ আর ১০ মাস পর জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। এর আগে সবশেষ গত বছরের নভেম্বরে তারা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসা ট্রফিতে মালদ্বীপের বিপক্ষে জিতেছিল ২-১ গোলে। এরপর সাত ম্যাচের পাঁচটিতেই তারা হেরেছিল, ড্র হয়েছিল বাকি দুটি। এছাড়া বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার অধীনে এটিই ছিল প্রথম জয়। গত জানুয়ারিতে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে তার অধীনে বাংলাদেশ ছয়টি ম্যাচ খেললেও জিততে পারেনি কোনোটিতে। দুটি হয়েছে ড্র। প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে খেই হারিয়ে ফেলে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। নেপালের বিপক্ষে তাদের মাটিতে হার দেখে ৩-১ গোলের ব্যবধানে।
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা সময় ধুঁকেছে বাংলাদেশ। পরের অর্ধে মোহাম্মদ ইব্রাহিম-সাজ্জাদ হোসেনরা লড়ার পর ব্যবধান কমেছে। কিন্তু হার এড়াতে পারেনি। অঞ্জন বিশ্রার হ্যাটট্রিকের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। সে ম্যাচে প্রায় প্রতিটি বিভাগে দাপট দেখিয়েছে কিরণ কুমার লিম্বুরা। শেষ অর্ধে ৫৪ মিনিটে বাংলাদেশের হয়ে ব্যবধান কমিয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন। অথচ এ মাঠেই নেপালকে উড়িয়ে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উৎসব করেছে বাংলাদেশ। সাবিনা-সানজিদারা পারলেও সাত দিনের ব্যবধানে পারেননি জামাল ভূঁইয়ারা। শেষ তিন দেখায় হিমালয়ের দেশটির বিপক্ষে জয়হীন থেকেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশের ফুটবলের এমন দুর্দশা শুরুটা কয়েক দশক আগে। ১৯৮৪ সালে প্রথম সাফ গেমসে নেপালের কাছে ফাইনালে হেরে যায় বাংলাদেশ। প্রথমবারেই শুধু নয়, সাফ গেমস ফুটবলে ব্যর্থতা নিয়মিত হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য। এ প্রেক্ষাপটে দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। বিশ্বকাপ খেলার হাতছানি থাকায় গত শতাব্দীর নব্বই এর দশকের শুরুতে ফুটবলের জায়গা দখল করে নেয় ক্রিকেট। ফুটবলে দর্শক কমতে থাকে। কাজী সালাউদ্দিন, এমেকা, জাকারিয়া পিন্টু, অমলেশ, সাব্বির, কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না- এ নামগুলো বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। যখনই দেশের ফুটবলের প্রসঙ্গ ওঠে, তখনই এ নামগুলো ঘুরেফিরে আসে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আমরা দেশে যে ফুটবল জাগরণ দেখতে পাই, তাতে এদের অবদান ছিল অসামান্য। কিন্তু তাদের অবসর গ্রহণের পর যে শূন্যতা বাংলাদেশের ফুটবলে তৈরি হয়, তা আর পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশের ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অনেকগুলো কারণ। সূচি অনুযায়ী টুর্নামেন্টের আয়োজন না করা, মাঠের সংকট, মানহীন ঘরোয়া ফুটবল লিগ, পর্যাপ্ত বিদেশি খেলোয়াড়ের সংকট, ম্যাচ পাতানো এবং রেফারিংয়ে অনিয়ম ইত্যাদি এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া আছে স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন না করা। মেয়েদের একসময় গ্রামের স্কুলগুলোর মাঠেও পালা করে ফুটবল খেলা হতো। প্রাথমিক থেকে উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে নিয়মিত প্রতিযোগিতা হতো। সেসব প্রতিযোগিতা আজ আর নেই।
– মোহাম্মদ আল মুকিত

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়