জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুর্ভোগ

পরের সংবাদ

দেবী দুর্গা ও প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা- যাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীও বলা হয়। বহু দেবদেবীর পূজা করে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়; শুধু মনে হয় না, অনেকের ধারণাও এই যে হিন্দুরা বহু-ঈশ্বরবাদী। প্রকৃতপক্ষে তা নয়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একেশ্বরবাদী। দেবদেবীরা তাহলে কারা? কেনই বা তাদের উপাসনা করা হয়? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের ব্রহ্মবাদ ও দেববাদের তাৎপর্য অনুসন্ধান করতে হবে। ব্রহ্ম, ঈশ্বর, ভগবান, অবতার ও দেবদেবী প্রভৃতি ধারণার (ঈড়হপবঢ়ঃ) ব্যাখ্যা করতে হবে।
ব্রহ্ম নিরাকার; তবে প্রয়োজনে তিনি সাকার হতে পারেন। ব্রহ্ম আমাদের ওপর প্রভুত্ব করেন, আমাদের জন্ম, পালন ও বিলয়- এ তিনের কর্তাও তিনি। ব্রহ্ম আমাদের ওপর প্রভুত্ব করেন বলে তাকে বলা হয় ‘ঈশ্বর’। ‘ঈশ’ ধাতুর সঙ্গে ‘বরচ’ প্রত্যয়টির যোগে ‘ঈশ্বর’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। ব্রহ্ম আমাদের প্রভুত্ব করেন বলে তার নাম ঈশ্বর। আবার তিনি আমাদের কৃপা করেন বলে তিনি ভগবান। আবার দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন এবং ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য তিনি প্রয়োজনে এবং লোকশিক্ষার কোনো না কোনো রূপ ধরে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অবতরণ করেন বলে তাকে বলা হয় অবতার। আবার যারা ঈশ্বরের এক-একটি গুণ ও শক্তি ধারণ করেন, তদের বলা হয় দেবদেবী। দেবদেবীদের এককথায় দেবতাও বলা হয়। যেমন, দেবী দুর্গা ধারণ করেন ব্রহ্মের শক্তি। তিনিই আদ্যাশক্তি মহামায়া। সিদ্ধি বা সাফল্য প্রদান করেন গণেশ। দেবী সরস্বতী জ্ঞানের দেবী, দেবী ল²ী ধনৈশ্বর্যের দেবী। শিব কল্যাণের দেবতা। তবে তিনি পৃথিবীতে ভারসাম্য রক্ষার জন্য জীবদের ধ্বংস করেন। যদি কেবল জীবের জন্ম হতো, তাহলে পৃথিবী জীবেই ভরে যেত। তাই তিনি জীবদের ধ্বংস করে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করেন।
এরা সবাই কিন্তু ব্রহ্মের শক্তি ও গুণের বিশেষ প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাদের বিশেষ গুণ বা শক্তি আছে। তাদের কাছে বিশেষ গুণ বা শক্তি প্রার্থনা করতে হয়। তারা ভক্তের প্রার্থনা পূরণ করেন।
শক্তির দেবী অন্যায়কে ধ্বংস করে জীবের কল্যাণ সাধন করেন এবং ফিরিয়ে আনেন শান্তি। দেবী দুর্গা, কালী, কাত্যায়নী, জগদ্ধাত্রী, পার্বতী প্রভৃতি দেবী শক্তি ও শান্তির প্রতিমা। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন সময়ে তিনি ভক্তের এমনকি বিপদাপন্ন স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাদের প্রার্থনায় নানা রূপ ধারণ করে অবতীর্ণ হন এবং অন্যায়কে ধ্বংস করে ন্যায় ও সত্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।
দেবতাদের রাজপদ ‘ইন্ত্র’ নামে পরিচিত। অসুরেরা মাঝে মাঝে দেবরাজের ইন্দ্রত্ব অর্থাৎ রাজপদ মাঝে মাঝেই ছিনিয়ে নেন এবং স্বর্গস্থ দেবতাদের তাড়িয়ে দেন স্বর্গ থেকে।
পুরাকালে একবার মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মাদেবের আরাধনা করে পুরুষের অবধ্য এই বর অর্জন করেছিলেন। তার ধারণা কোনো পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না, আর কোনো নারী তো তার সঙ্গে পেরে উঠবেন না। কার্যত অমরই হয়ে গেলেন- মহিষাসুর এ ধারণা পোষণ করে অহংকারী হয়ে উঠলেন।
ব্রহ্মা এবং শিবকে অগ্রবর্তী করে ইন্দ্রসহ অন্যান্য দেবেরা গেলেন বিষ্ণুর কাছে। বিষ্ণু তাদের উত্তেজিত ও উদ্বুদ্ধ করলেন। উপস্থিত সব দেবতার ক্রোধ থেকে আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা।
এই দেবী দুর্গার সঙ্গে ঘোরতর যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হলেন মহিষাসুর। দেবতারা ফিরে পেলেন তাদের স্বর্গরাজ্য।
দেবীকেন্দ্রিক পৌরাণিক উপাখ্যানগুলো থেকে আমরা বিশেষ তাৎপর্য অনুসন্ধান করতে পারি :
১. ইন্দ্রাদি স্বর্গস্থ দেবগণ যখন অলস ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন, তখন তাদের শক্তি হ্রাস পেয়েছিল; আর তখনই অসুরেরা স্বর্গরাজ্য অধিকার করে নিতে সক্ষম হয়েছিল।
২. যখন দেবতারা শক্তি সঞ্চয় করলেন। শুরু করলেন যুদ্ধের কঠোর অনুশীলন। তখন তাদের সম্মিলিত শক্তি থেকে আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা। সুতরাং দেবী দুর্গা ঐক্যের প্রতীক, সংহত শক্তির প্রতিমা। এই ‘সম্মিলিত শক্তি’ কথাটা তাৎপর্যপূর্ণ। একক নয়, সম্মিলিত শক্তি। আমাদেরও অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একক নয়, সম্মিলিত শক্তি। হতাশায় নিশ্চেষ্ট থাকা নয়, পূর্ণ উদ্যমে শক্তি সঞ্চয়ের প্রয়াস ও মহাশক্তির উদ্বোধন।
৩. আবার দেবী দুর্গা শক্তিপ্রদায়িনী। অসুরদের বিনাশ করেন, তিনি ইন্দ্রাদি দেবতাদের শক্তি দিয়েছিলেন। দেবী সাহায্যমূলক গ্রন্থ শ্রীশ্রী চণ্ডীকে তাই বলা হয়েছে :

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
-যে দেবী সর্বভূতে- বিশ্বচরাচরে শক্তিরূপে বিরাজ করেন, সেই দেবীকে বারবার নমস্কার করি।

শরৎকালে ও বসন্তকালে দেবী দুর্গার পূজা করা হয়। তবে শরৎকালের দুর্গাপূজাই বহুল প্রচলিত। সনাতনপন্থি বাঙালি হিন্দুর বার্ষিক মহোৎসব।
আবার এ দেবী দুর্গাকে ঘরের মেয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বিবাহিত মেয়েরা যেমন তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি ‘নাইয়রে’ আসেন, তেমনি দেবী দুর্গা প্রতি বছর ঘরের মেয়ের মতো মর্ত্যলোকে আসেন। দশমীর পর তিনি স্বামীর ঘরে ফিরে যান।
দেবী দুর্গার ভক্ত হিন্দুরা ঋষি-কল্পনার সঙ্গে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে দেবদেবীর প্রতিমা নির্মাণ করেন। প্রতিমাটা হচ্ছে অরূপকে রূপে ধরা। আসলে ব্রহ্মের বিমূর্ত গুণ ও শক্তি প্রতিমাতে মূর্ত করে তুলে সেই গুণ ও শক্তি অর্জনের প্রচেষ্টা দুর্গাপূজা তত্ত্বের মধ্যে নিহিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়