বসতঘর থেকে মা ও ২ শিশু সন্তানের মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বছরজুড়েই ‘উন্নয়নে’র দুর্ভোগ : ভাঙাচোরা সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির ফাঁদ > নিত্যসঙ্গী তীব্র যানজট > সামান্য বৃষ্টিতেই জলজট

পরের সংবাদ

সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস : জেলাজুড়ে দালাল চক্র অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মসিউর রহমান ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে : দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাজাহান কবিরের। পাবনা থেকে ২০১৮ সালের শেষের দিকে চরম দুর্নীতির কারণে সাধারণ জনগণের কাছে হেনস্তা হওয়া সাজাহান কবির সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে যোগদানের পর থেকে দালালদের স্বর্গরাজ্য আর দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলেছেন এ অফিস। লাইনের (দালাল) মাধ্যমে ১৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা দিলে ত্রæটিপূর্ণ কাগজপত্র দিয়েও দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট তৈরি করা যাচ্ছে এ অফিস থেকে।
সম্প্রতি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভীন্নশ্রেণি পেশার মানুষ, সাজাহান কবিরের দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ না করার জন্য জোর সুপারিশ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য তদবির করছেন দালালরা।
সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে বর্তমানে দালাল ছাড়া কোনো কাগপজত্র জমা দেয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান সহকারী পরিচালক সাজাহান কবির দালাল ছাড়া কারো কোনো ফোন রিসিভ করেন না। তার নেতৃত্বে জেলাব্যাপী রয়েছে দেড় শতাধিক দালাল।
এ অফিসের দালালরা বর্তমানে দলবেঁধে দুর্নীতি আড়াল করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাজাহান কবিরের পক্ষে বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছে।
সরজমিনে একটানা তিনদিন সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস কম্পাউন্ডে অবস্থান করে পাসপোর্টের জন্য কাগজপত্র জমা দিতে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে জানা গেছে, এখানে দালাল ছাড়া কোন কাজ হয় না।
কারো পাসপোর্টে কোনো প্রকার সংশোধনী থাকলে তার জন্য ব্যয় করতে হয় অতিরিক্তি টাকা। সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস শুরু হয় বর্তমান নতুন সময় অনুযায়ী ৮টায়। অফিস শুরু হলে প্রথমে কোনো দালালের কয়টি পাসপোর্ট ছাড়া হবে, কোন দালালের কয়টি পাসপোর্ট এন্ট্রি হবে, কোন দালালের কয়টি পাসপোর্টের ছবি তোলা হবে- এসব ঠিক হয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের রুমে দালাল চক্রের প্রতিনিধি ও অফিসের নির্ধারিত কর্মচারীর আলোচনার মাধ্যমে। দৈনিক পাসপোর্ট প্রতি কমিশন ১০০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ হয়। পাসপোর্টের সংখ্যা কমবেশি হলে কমিশন ওঠানামা করে।
গত বৃহস্পতিবার সরজমিনে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা গেছে, দালাল বা নির্ধারিত কম্পিউটারের দোকান ছাড়া সরাসরি কেউ ফরম জমা দিতে গেলে সেই ফরমের নানারকম ভুলত্রæটি বের করে আবেদনকারীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আবার ওই একই ফরম দালালের মাধ্যমে জমা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই জমা নেয়া হচ্ছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মচারী (পদবি ডিআইপি) বলেন, দৈনিক চার শতাধিক ফরম জমা হয়। দালাল ছাড়া সরাসরি কোনো ফরম জমা দিতে গেলেই তৈরি হয় নানারকম বিপত্তি। দালালের এসএমএস ছাড়া ফরম জমা দিতে গেলে ফরমে ভুলত্রæটি বের করে আবেদনকারীকে ঝামেলায় ফেলা হয়। আসতে হয় বারবার। যেকোনো ফরম দালালের মাধ্যমে জমা দিলে সব ভুল হলেও জমা হয় নির্দিষ্ট মডিউলে।
তিনি আরো বলেন, পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দেয়ার মডিউল দুটি। আবেদনকারীদের ফরম জমা দেয়ার লাইন একই কিন্তু কম্পিউটার এন্ট্রির মডিউল আলাদা। একটা মডিউলে জমা হয় সম্পূর্ণ সহকারি পরিচালক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দালাল চক্রের এসএমএস পাওয়া তালিকা ধরে।
অন্য মডিউলে এক থেকে তিন হাজার টাকা বাচানোর জন্য বারবার ঝাড়–দার লাভলুর (আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ) মাধ্যমে। শুধুমাত্র এসএমএস পাওয়া ফরম নির্দিষ্ট সময়ে স্ক্যানিং করে ঢাকায় পাঠানো হয়। অসুস্থ মানুষের পাসপোর্ট আবেদন ফরমও দীর্ঘদিন পড়ে থাকে অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায়। সংশোধনের জন্য আসলে লাভলু ও আমিনুরের (ডিআইপি) কাছে তাদের যাওয়া লাগবেই। নাম সংশোধনে আট হাজার। বয়স সংশোধনে বছর প্রতি আট হাজার। পাঁচ বছর হলে ৪০ হাজার টাকা ঢাকায় পাঠানোর কথা বলে পাসপোর্টধারীদের কাছ থেকে নেয়া হয়।
এদিকে, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাসপোর্টের জন্য কাগজপত্র জমা দিতে আসা শ্যামনগরের আবদুল জলিল কয়াল, রফিকুল ইসলাম, আশাশুনির রহিমা বেগম, সদর উপজেলার শেখ জালাল উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা কোনো না কোনো দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে এসেছেন। তাদের অধিকাংশের দাবি, দালালের মাধ্যমে না আসলে এখানে পাসপোর্ট করা যায় না। হয় কাগজপত্রে ত্রæটি বের হয়, না হয় দীর্ঘদিন দেরি হয়। সেক্ষেত্রে তাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত তিন থেকে চার হাজার টাকা।
এসব দুর্নীতি, অনিয়মের বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাজাহান কবিরের কাছে সরাসরি তার অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বিষয় এড়িয়ে যান এবং কিছু বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
প্রতিদিন চারশ ফরম জমার হওয়ার তথ্য স্বীকার করে অন্য বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আপনারা শুধু এগুলো দেখতে পান? এখানে জনবল সংকট সেটা দেখেন না। এসএমএস’র বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়