চারুকলার বকুলতলায় ছায়ানটের শারদ উৎসব

আগের সংবাদ

রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে বড় ধাক্কা : রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রপ্তানি কমেছে, সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ মাসে সর্বনিম্ন

পরের সংবাদ

এক দেশে দুই আইন কেন?

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নরসিংদীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরীক্ষার্থীদের শাঁখা-সিঁদুর পরে এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হয় এবং তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা এ ঘটনাটি ঘটে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও ১৯ সেপ্টেম্বর ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষার দিন। কেন্দ্র সচিব নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি আক্তার সাংবাদিকদের কাছে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা ফেরদৌসি ও আকিকুন নাহার নামক দুজনকে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন এবং কারণ দর্শাও নোটিস জারি করেন। অভিযুক্ত দুই শিক্ষিকাকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরীক্ষার্থীরা অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও তারা কোনো কথা না শুনে পরীক্ষার্থীদের হাতের শাঁখা খুলে ও মাথার সিঁদুর মুছে আধঘণ্টা ধরে মানসিক নির্যাতনের পরে পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেন। এখানে কেন্দ্র সচিব শিউলি আক্তারও সমান অপরাধী। কারণ ১৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনার কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ১৯ সেপ্টেম্বর একই ঘটনা ঘটাবার সাহস পেয়েছিলেন অভিযুক্তরা। সুতরাং কেন্দ্র সচিবেরও এ ঘটনায় সমর্থন ছিল।
তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ এমন ঘটনা ইদানীং হরহামেশাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেন অথবা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। যদিও পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বছর কয়েক আগে চট্টগ্রামে বিসিএস পরীক্ষার সময় নববিবাহিতা এক হিন্দু পরীক্ষার্থীকে শাঁখা-সিঁদুর খুলে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সে সময়ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সুতরাং এ দেশের প্রশাসনের কাছে আমার জিজ্ঞাসা- এক দেশে দুই আইন কেন? পরীক্ষার হলে কীভাবে যেতে হয়, তার নির্দেশনা প্রবেশপত্রে লেখা থাকে। কিন্তু শাঁখা-সিঁদুর পরে পরীক্ষার হলে যাওয়া যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা পরীক্ষার প্রবেশপত্রে লেখা নেই অথবা শাঁখা-সিঁদুরের মধ্যে কোনো ডিভাইস রাখার সম্ভাবনাও নেই। তাহলে কেন পরীক্ষার হলে শাঁখা-সিঁদুর পরে যাওয়া যাবে না? অবিলম্বে এই ঘটনার তদন্ত করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করি।
কপালে টিপ পরার কারণে তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে বিশ্রী গালাগালসহ পায়ে মোটরসাইকেলের চাকা তুলে দেয়া পুলিশ কনস্টেবল নাজমুলকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত তারপর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। অন্যদিকে ফেসবুকে একজনের পোস্টে কমেন্ট করায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল প্রীতম মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে শুধু কারাগারেই নিক্ষেপ করা হয়নি, টর্চারের জন্য আদালতে তার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে ৭ দিন। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি এখনো প্রমাণিত হয়নি। এখানে প্রশ্ন, নাজমুলের মতো কেন প্রীতমকেও চাকরি থেকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি? দুই স¤প্রদায়ের জন্য দুই রকম আইন কেন? ঝুমন দাসের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। দ্বিতীয়বারও তাকে আদালত জামিন দেয়নি। অথচ যে বা যারা মন্দিরের সামনে মসজিদের দানবাক্সটি টাঙিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অদ্যাবধি। আর ঝুমন দাস তার প্রতিবাদ করে আজ কারাগারে। এটাই বর্তমান বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়তি। অতএব এসব বৈষম্য থেকে মুক্তি চাই। নয়তো, এসব বৈষম্য দেশকে যে স্থানে নিয়ে যাচ্ছে, সেই স্থানে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ থাকবে না।

গোপাল নাথ বাবুল
লেখক, দোহাজারী, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়