কাগজ প্রতিবেদক : সকালের আকাশটা জুড়েই ছিল ঝাঁঝাল রোদের বাড়াবাড়ি। এমন তীব্র রোদ্দুরে চারুকলার বকুলতলায় কথামালায়, গানে, নৃত্যের ঝংকারে শরতের রূপকে মেলে ধরল ছায়ানট। তবে গত দুই বছরে মহামারির কারণে ছেদ পড়েছিল উন্মুক্ত আবহে প্রকৃতি বন্দনায়, অনুষ্ঠান হয়েছিল অনলাইনে। এবার বকুলতলার মঞ্চে ফিরল ছায়ানটের প্রাঞ্জল শারদ উৎসবের মধ্য দিয়ে।
গতকাল শুক্রবার সকালে চারুকলার বকুলতলার মঞ্চ কাশফুলসহ নানা প্রাকৃতিক অনুষঙ্গে সেজে প্রস্তুত, ছায়ানটের শিল্পীরাও তৈরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি সম্ভার নিয়ে।
‘ওগো শেফালি বনের মনের কামনা’ গানের সঙ্গে সম্মেলক নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টায় অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করেন ছায়ানটের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা।
দলগত নৃত্যের পর ‘শরত আলোর কমলবনে’ ও ‘আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে’ রবীন্দ্রনাথের গান দুটি শোনান দীপ্র নিশান্ত ও নাঈমা ইসলাম নাজ। আরো কিছু গানের ফাঁকে চলে নৃত্য ও আবৃত্তি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিচিত্র’ প্রবন্ধ থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর। ছায়ানটের শিল্পী সুমনা বিশ্বাস আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘শরৎ’। এছাড়া মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দারর গাওয়া রবি ঠাকুরের আরেকটি গান ‘তোমরা যা বল তাই বল’ এর সঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করে সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা তাথৈ।
ক্ষুদে শিল্পীদের দল পরিবেশন করে ‘শরতে আজ কোনো অতিথি’ ও ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’ গান দুটি। সঙ্গে নাচও পরিবেশিত হয়। সম্মেলক গানের পরিবেশনায় ‘আমরা বেঁধেছি কাঁশের গুচ্ছ’ ও ‘তোমার মোহন রূপে কে রয় ভুলে’ পরিবেশন করে ছায়ানটের বড়দের দল।
অনুষ্ঠানে একক গানের পরিবেশনায় অসীম দত্ত শোনান ‘তুমি ঊষার সোনার বিন্দু; অভয়া দত্ত শোনান ‘তোমার সোনার থালায় সাজাবো আজ’, এটিএম জাহাঙ্গীর শোনান ‘আমি চাহিতে এসেছি শুধু একখানি’, সেমন্তি মঞ্জরি শোনান ‘আজি মেঘ কেটে গেছে’, তাহমিদ ওয়াসিফ ঋভু শোনান ‘কেন যে মন ভোলে আমার’, সুতপা সাহা শোনান ‘কার বাঁশি নিশি ভোরে’, সেঁজুতি বড়ুয়া শোনান ‘আমার নয়ন ভুলানো এলে’ এবং মাকসুরা আখতার শোনান ‘হৃদয়ে ছিলে জেগে’।
সবশেষে ঐতিহ্য অনুযায়ী জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠানে যন্ত্রাণুষঙ্গে তবলায় ছিলেন এনামুল হক ওমর, মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার, এস্রাজে অসিত বিশ্বাস, মন্দিরায় প্রদীপ রায়।
কথন পর্বে সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, ‘ছায়ানট প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ উদযাপনের পাশাপাশি বর্ষামঙ্গল, শরতের অনুষ্ঠানও নিয়মিত আয়োজন করে। সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষকে একত্রিত করার জন্যই মূলত প্রকৃতি পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা হয়। আমাদের ধর্ম যাই হোক, আমরা সকলে প্রকৃতির সন্তান। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দিতে চাই।’