গৌতম কুমার মহন্ত, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে : দেশের সব উপজেলার পরিসংখ্যান টপকিয়ে মহাদেবপুরে সর্বোচ্চ সংখ্যায় শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। দুর্গা প্রতিমায় শেষ মুহূর্তের রং তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। পুলিশের মতে, উপজেলার ১৫৪টি মন্দিরের মধ্যে ৩৫টি দুর্গামন্দির ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করা হলেও সচেতন এলাকাবাসী মনে করে, সবগুলো মন্দিরকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকা প্রয়োজন।
দেশের সব উপজেলার চেয়ে মহাদেবপুরে সবচয়ে বেশি সংখ্যক দুর্গাপূজা হচ্ছে দাবি করে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অজিত কুমার মণ্ডল জানান, উপজেলার সদরসহ ১০ ইউনিয়নে ১৫৪টি স্থায়ী এবং অস্থায়ী মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দুর্গা প্রতিমায় শেষ মুহূর্তের রং তুলির আঁচড় দিতে মৃৎশিল্পীরা উপজেলার মন্দিরগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৃৎশিল্পীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মন্দিরগুলো সাজানোয় ব্যস্ত হয়ে পরেছে ডেকোরেশন কাজে নিয়োজিত কারিগর ও কারুশিল্পীরা। মন্দির কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার ঘোষিত নির্দেশনা মানতে গিয়ে বিগত বছরের চেয়ে এ বছর মন্দিরগুলোতে আলোকসজ্জায় ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। আলোক সজ্জার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে প্রায় প্রতিটি মন্দিরেই জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মন্দিরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রতিটি মন্দিরে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের চাপ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কমিটি এ বিষয়ে ততটা আগ্রহী নয়। তবে স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, সম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একটি চিহ্নিত ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এবং একটি রাজনৈতিক দল পরিকল্পিতভাবে বর্তমান সরকারকে বিশ্বের দরবারে বিতর্কিত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সম্প্রতি এ উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হিন্দু শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়ার অভিযোগে স্থানীয় দুই সাংবাদিক ও বিএনপি নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। অবশ্য গ্রেপ্তারকৃত দুই বিএনপি নেতা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারো বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জরিয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করে, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে ওই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দলটির পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনিষ্টের সুযোগ যাতে না পায় সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পূজামন্দির কমিটির নেতাদের সজাগ থাকতে হবে।
এ উপজেলায় ৩৫টি দুর্গা মন্দির ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ইতোমধ্যেই উপজেলার প্রতিটি মন্দিরে পুলিশের মোবাইল টহল টিম দেয়াসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং আনসার ভিডিপির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলার কোনো মন্দির ঝুঁকিপূর্ণ নয় দাবি করে পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজার শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি মন্দিরে পুলিশ এবং সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভাগ সচেতন থাকবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।