আলফাডাঙ্গায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভা

আগের সংবাদ

নতুন মাথাব্যথা ‘হিজরত’! : আফগানিস্তানে তালেবান সাফল্যে উজ্জীবিত আইএস অনুসারী আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশে সক্রিয়

পরের সংবাদ

হিজাবের আগুনে পুড়ছে ইরান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিপ্লব শাহরিয়ার : ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে/এ আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে’। ইরানের এই হিজাব আগুন যেন রবীন্দ্র নাথের কবিতার মতোই ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে। দেশটির নীতি পুলিশের হেফাজতে মাসা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুকে ঘিরে দেশটির সর্বত্র চলছে বিক্ষোভ সহিংসতা। জলছে সমগ্র ইরান। ইরানের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের অন্য দেশকেও স্পর্শ করছে আগুনের শিখা। প্রতিবাদী তরুণ-তরুণীরা ইরানের বিক্ষোভের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে দানাবাঁধে প্রতিবাদ। বিভিন্ন দেশে আটক হয়েছে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী। প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, জার্মানি ও ফ্রান্স, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। রাস্তায় নেমে নিজের চুল কাটার পাশাপাশি প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। শুধুমাত্র ইরানের ১০০টি শহরে বিক্ষোভে প্রায় ৭৬ জনের মতো নিহত হয়েছে। ইরানে নিহতের তালিকায় সর্বশেষ যোগ হলো হাদিস নাজাফি নামের এক তরুণীর নাম। ইরানে বিক্ষোভে খোলা চুল বাঁধার ভিডিও ভাইরালের পর তাকে দেশটির আগ্নিশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। ইরানের প্রতিবাদী এ বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছে লন্ডনেও। গত দুদিনে লন্ডনের রাস্তায় নামেন কয়েকশ বিক্ষোভকারী। ইরানের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। বিক্ষোভ ঠেকাতে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে নিরাপত্তা বাহিনী। একপর্যায়ে দুই পক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। অন্তত ১২ বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, আমি এখানে এসে চুল কাটছি। কারণ ইরানে হিজাবের কারণে আজ না হয় কাল আমাদের অনেক বোন মরতে যাচ্ছে। এখানে এসে তাদের সমর্থন জানাতে চাই। যাদের প্রতিবাদের কোনো ভাষা নেই।’
নারীর পাশে পুরুষের শক্তি : গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে এর আগে সব বিক্ষোভ মূলত পুরুষেরা করেছেন। কিন্তু এবারের ঘটনাটি আলাদা। নারীরা শুরু করেছেন এবং পুরুষেরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুলিশ যখন নারীকে হিজাব পরতে বাধ্য করছে, তখন পুরুষ তাদের সঙ্গে লড়াই করছেন। অধিকাংশ বিক্ষোভকারী তরুণ, কিন্তু বয়স্করাও সমর্থন করছেন। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের সিরাজ অঞ্চলের ৩৭ বছর বয়সী ফারাহ বলেন, ইরানে নারী ও মেয়েদের কোনো অধিকার নেই। তা নিয়েই প্রতিবাদ।
মায়েরা বলছেন, বিক্ষোভে যাও : তেহরানের সোবহান নামের ১৯ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার মা আমাকে মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছি। আমার এক বন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে। সে বলেছে, প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে, এমনকি এর জন্য প্রাণ দিতে হলেও।
আগের প্রজন্মের অস্ফুট প্রতিবাদ : তেহরানে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করা ৪৪ বছর বয়সী ফারবোদ বলেন, আমি খুবই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আমার একটি কিশোর ছেলে রয়েছে। সে মুক্তভাবে বাঁচতে চায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে চায়। তার পছন্দমতো পোশাক পরতে চায়। কিন্তু সে তা পারে না। ইরানের মধ্যাঞ্চলের ইয়াজদ এলাকার ২৯ বছর বয়সী আমিন বলেন, সামনের দিনগুলোতে আমি বিক্ষোভে যাব।
এক কাতারে এনেছে এই বিক্ষোভ : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কুর্দিস্তান প্রদেশের সানন্দাজের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী শমী বলেন, এবারের বিক্ষোভ আগের চেয়ে আলাদা। এতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে একতা তৈরি হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের বিক্ষোভের সময় আরব, তুর্কি, কুর্দিবাসীর মধ্যে ঐক্য ছিল না। কিন্তু এখন তাবরিজ থেকে সানন্দাজ, তেহরান থেকে মাশাদ- সব জায়গায় একই স্লোগান।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সাল থেকে ইরানে শাসকেরা নিয়ম করেছেন, নারীদের ঘরের বাইরে অবশ্যই হিজাব পরতে হবে, চুল ঢাকতে হবে। বিষয়টি দণ্ডবিধির ৬৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে যুক্ত করা হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে নিয়ম লঙ্ঘনে তিন ধরনের শাস্তিও ঠিক হয় । দুই মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫ লাখ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা অথবা ৭৪টি পর্যন্ত বেত্রাঘাত। নিয়ম মানানোর জন্য ২০০৪ সালের পর থেকে ‘নীতি পুলিশ’ নামে বিশেষ বাহিনীও প্রস্তুত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়